তুমি কী চিঠি লেখো? এখন অবশ্য চিঠির প্রয়োজনীয়তা প্রায় নেই বললেই চলে। চিঠির স্থান এখন দখল করে নিচ্ছে ই-মেইল।
অনেক যুগ আগে থেকে দূরের মানুষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে চিঠি। ধরো, তুমি দেশের বাইরে থাকা তোমার কোনো বন্ধুকে একটা চিঠি লিখেছ। সেটা শুধু লিখলেই তো আর হলো না, তার কাছে পৌঁছাতে তো হবে। কীভাবে পৌঁছুবে?
এখন তুমি খুব সহজেই বলতে পারো সেটা ডাকে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু অনেককাল আগে কিন্তু এই ডাকবিভাগ ছিল না। তখন চিঠিগুলো পাঠানো হতো দূতের মাধ্যমে। আগে পায়রার পায়ে বেঁধে চিঠি পাঠানোর প্রচলনও ছিল। আর পায়রা কিন্তু খুব ভালো ডাকপিয়ন। একটা জায়গা চিনে ফেললে ঠিকঠাক সেখানে নিয়ে চিঠি পৌঁছে দিতে পারত।
তবে এই উপায়গুলো খুব সময়সাপেক্ষ আর ঝামেলাপূর্ণ ছিল। চিঠির আদান-প্রদান সহজ এবং দ্রুততর করার জন্যই ডাকবিভাগ চালু করা হয়।
‘রয়্যাল মেইল’ নামে প্রথম ডাক বা পোস্টাল সার্ভিস চালু হয় ১৫১৬ সালে। এটি চালু করেন হেনরি অষ্টম। এরপর ১৬৬০ সালে প্রথম সাধারণ ডাক বা জেনারেল পোস্ট অফিস চালু করেন চার্লস দ্বিতীয়।
১৮৩৫ সালে রোল্যান্ড হিল আধুনিক পোস্ট অফিসের ধারণা দিয়ে ‘পোস্ট অফিস রিফর্ম’ প্রকাশ করেন।
সেখানে আধুনিক ডাকবিভাগের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা ছিল। যার মধ্যে ছিল যেখানে দূরত্ব যাই হোক, যেকোনো চিঠি পাঠানোর জন্য প্রেরককে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়ার ধারণা এবং ডাকটিকিটের ধারণা।
এর আগে দূরত্ব অনুযায়ী চিঠি পাঠানোর জন্য কম বা বেশি অর্থ দিতে হতো। রোল্যান্ড হিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বোঝাতে সক্ষম হন যে এই পরিবর্তনগুলোর খুব দরকার ছিল। ১৮৪০ সালে ব্রিটেনে ‘ইউনিফর্ম পেনি পোস্ট’ চালু হয় যার মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয়ে ওঠে আরো সহজ, দ্রুততর এবং নিরাপদ। ব্রিটেনেই প্রথম ডাকটিকিট চালু হয় যার নাম ছিল ‘পেনি ব্ল্যাক’। ১৮৫০ সালে প্রথম চালু হয় ডাকবাক্স।
সেই সেদিনের ডাকবিভাগের চেয়ে আজকের ডাকবিভাগগুলো অনেক উন্নত। এখন আর একটা চিঠির জন্য অনেকগুলো দিন অপেক্ষা করতে হয় না। আধুনিক ডাকবিভাগের কল্যাণে দেশের বাইরেও চিঠি চলে যায় নিরাপদে অল্প কয়েকদিনেই। দেশের বাইরে চিঠি পাঠাতে হয় ‘এয়ার মেইল’-এ।
অর্থাৎ তোমার পাঠানো চিঠিগুলো এ দেশের ডাকবিভাগ থেকে রীতিমতো প্লেনে চড়ে চলে যাবে কাঙ্ক্ষিত দেশটিতে। তারপর সেখানকার ডাকবিভাগ চিঠিটাকে পৌঁছে দেবে প্রাপকের ঠিকানায়।
দেখেছ চিঠির আদান-প্রদান কত্ত মজার? তাহলে? তুমিও কাউকে চিঠি লিখে সেটাকে ডাকে পোস্ট করে অপেক্ষা করতে থাকো তোমার চিঠিটির জন্য!
বিশ্বে প্রথম
বিশ্বে প্রথম সমুদ্র ডাক চালু করা হয় ১৬৩৩ সালে। ঘোড়াগাড়ির ডাক চালু করা হয় ১৭৮৪ সালে। চিঠি আদান প্রদানের জন্য মুদ্রিত খামের প্রচলন করা হয় ১৮৩০ সালে।
পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পোস্টাল মানি অর্ডার চালু করা হয় ১৮৩৮ সালে। প্রথম স্ট্যাম্প প্রকাশ করা হয় ১৮৪০ সালে।
বিশ্বে প্রথম রেজিস্ট্রি ডাক সার্ভিস চালু হয় ১৮৪১ সালে। বুকপোস্ট সার্ভিস উন্মুক্ত হয় ১৮৪৮ সালে।
পোস্ট কার্ডের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরম্ন হয় ১৮৬৯ সালে এবং এয়ার মেল বা বিমান ডাক যাত্রা হয় ১৯১১ সাল থেকে।
অবশ্য এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং আমাদের দেশেও ডাক ব্যবস্থায় এসেছে নতুনত্ব ও আধুনিকতার ছোঁয়া।
উপমহাদেশে প্রথম
উপমহাদেশে প্রথম ডাক সার্ভিস চালু করা হয় ১৭৭৪ সালে। ব্রিটিশ ভারতে প্রথম ডাক বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৫৪ সালে। স্থায়ীভাবে প্রথম ডাক টিকেট চালু করা হয় সিন্দুতে ১৮৫২ সালে।
সর্বভারতীয়ভাবে ডাক টিকেট চালু হয় ১৮৫৪ সালে। উপমহাদেশে রেলওয়ে ডাক চালু হয় ১৮৫৩ সালে। পোস্ট কার্ড ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয় ১৮৭৯ সালে। পোস্টাল অর্ডার সার্ভিস চালু হয় ১৮৮১ সালে।
পোস্টাল ব্যাংক সার্ভিস চালু হয় ১৮৮২ সালে এবং বিমান ডাক চালু হয় ১৯১১ সালে। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোর মতো উপমহাদেশে এবং এদেশেও ডাক বিভাগে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। ডাক বিভাগের সেবা পৌঁছে গেছে শহরের সীমা ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
বাংলাদেশের ডাক বিভাগ প্রায় ১৫০ বছরের ঐতিহ্য ধারণ করে এগিয়ে চলছে।
স্বাধীনতার পর থেকে নব্বই দশকের শেষ দিকেও ডাক বিভাগের ব্যবস্থার যেন কোন কমতি ছিল না।
ডাক পিওন, রানার, পোস্টমাস্টার ও অন্যান্য কর্মচারী কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট লোকবল ছিল চল্লিশ হাজার।
প্রতিবছর ৯ অক্টোবর পালন করা হয় বিশ্ব ডাক দিবস।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৩
এমএনএনকে/এএ/এমজেডআর