বাংলাদেশ ষড়ঋতু, অর্থাৎ ছ’টি ঋতুর দেশ- সেকথা আমাদের সবারই জানা। বছরের কোনো সময় এখানে প্রচণ্ড গরম, কখনো কনকনে ঠাণ্ডা, কখনো বা চলে অবিরাম বৃষ্টিপাত।
আমরা সবাই জানি পৃথিবী এবং সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ সূর্যের চারপাশে ঘোরে। প্রতিটি গ্রহই দু’ভাবে ঘোরে, একটা তার নিজের অক্ষে, যেটাকে বলা হয় আহ্নিক গতি। পৃথিবীর এই আহ্নিক গতির কারণে দিন এবং রাত হয়।
পাশাপাশি পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এই ঘোরাকে বলা হয় পৃথিবীর বার্ষিক গতি। সূর্যকে ঘুরে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা। এই সময়কালকে এক বছর বা এক সৌর বছর বলে।
পৃথিবীর এই বার্ষিক গতির কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়।
তোমরা হয়তো জান, পৃথিবীকে ঠিক মাঝখান থেকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে একটি রেখার মাধ্যমে, যার নাম বিষুব রেখা। এই বিষুব রেখার একপাশের অংশকে বলা হয় দক্ষিণ গোলার্ধ, অন্যপাশকে বলে উত্তর গোলার্ধ।
পৃথিবী যখন সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, তখন সূর্যের দিকে খানিকটা হেলে থাকে। পৃথিবী যেহেতু তার নিজ অক্ষেও ঘোরে, তাই বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে। এভাবে কখনো দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের কাছে চলে যায়, কখনো যায় উত্তর গোলার্ধ। যখন যে অংশ সূর্যের দিকে হেলে পড়ে তখন সে অংশ খাড়াভাবে বেশিক্ষণ ধরে সূর্যের আলো এবং তাপ পায়। আর তখন সেই অংশে বেশি গরম পড়ে, অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল থাকে।
একটা অংশ সূর্যের কাছে থাকা মানে তার উল্টো দিকের অংশটা থাকবে সূর্য থেকে দূরে। আর দূরে থাকলে কী হবে? সেই অংশটা কম তাপ এবং আলো পাবে। তখন সেই অংশে থাকবে শীতকাল।
কখনো খেয়াল করেছ বাংলাদেশে যখন গ্রীষ্মকাল থাকে, অস্ট্রেলিয়ায় তখন শীতকাল থাকে। আবার ওদের যখন গ্রীষ্ম থাকে, তখন আমাদের থাকে শীত। এবার বুঝেছ সেটা কেন হয়? কারণ অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ এবং বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধের দেশ। আর উত্তর গোলার্ধে যখন শীত থাকবে, দক্ষিণ গোলার্ধে থাকবে গরম। একইভাবে উত্তর গোলার্ধে গরম থাকলে দক্ষিণে থাকবে শীত।
বুঝেছ কীভাবে ঋতু পরিবর্তন হয়? এবার ভাবো তো, যদি পৃথিবী সূর্যের চারপাশে না ঘুরত, তবে তো সবসময় একটা দেশে একটাই ঋতু থাকত। তখন কী হতো? ‘তখন কী হতো’- একথা যেন আমাদের ভাবতে না হয় সেজন্যই পৃথিবী সারাক্ষণ সূর্যের চারপাশে এবং নিজের অক্ষে ঘুরে চলেছে। আর আমরাও পাচ্ছি ছয়টা ভিন্ন ভিন্ন ঋতু।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৩
এমএনএনকে/এএ/জিসিপি