জামালপুর শহরের বজ্রাপুর এলাকার রশিদা বিড়ি ফ্যাক্টরি। নূর মোহাম্মদ।
সুন্দর, ফুটফুটে ১২ বছরের শিশু ইতি বেগম। তিন বছর যাবত তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ। বাবা অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি পড়ে আছে। বিড়ির কারিগর মার রোজগারে সংসার চলে। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর মা স্কুল ছাড়িয়ে তার সাথে ইতিকে লাগিয়ে দেয় বিড়ি তৈরির কাজে। এভাবেই ইতি এখন বিড়ির কারিগর। একই ভাবে ইতির ছোট বোন ১০ বছরের বিথিও মায়ের সাথে বিড়ি বানায়। বিড়ি বানাতে বানাতে ইতি জানায় ‘লেহা-পড়া তো করবার মন চাই-ই, কিন্ত কি করমু মা যে স্কুলে যাইতে দেয় না। মায়ে কয় লেহাপড়া কইরা কি অইবো, বিড়ির কাম করতে থাক একটু বড় অইলে ভালা একটা ছেলে দেইখা বিয়া দিয়া দিমু’ ।
১২/১৩ বছরের কোহিনুরের গল্পটাও প্রায় একই। বাবা মজনু রিকশা চালায়। মা জোসনা বিড়ির শ্রমিক। ৪ ভাইবোন ওরা। বাবা-মায়ের আয়ে সংসার চলে না। তাই কাশ টু পর্যন্ত পড়ে বিড়ি বানানোর কাজ শুরু করে কোহিনুর।
শুধু নূর মোহাম্মদ, ইতি-বিথি আর কোহিনুর নয়। তাদের মতো রুশেনারা, গেন্দি, জুলেখা, বিলকিছ, জাহানারা, হেলেনা, কুমকুম ছাড়াও শতাধিক শিশু সংসারের নানা অভাব অনটনের গল্প সাথে নিয়ে স্কুল ছেড়ে শিশু বয়সেই বিড়ি শ্রমিক হয়ে উঠেছে। সকলের মনেই স্কুল, বই খাতার স্বপ্নীল জগত হাতছানি দিয়ে ডাকে।
শুধু রশিদা বিড়ি ফ্যাক্টরি নয়, শহরের মোহিনী বিড়ি ফ্যাক্টরিতেও কাজ করছে অনেক শিশু শ্রমিক। শিক্ষাবঞ্চিত এসব শিশু বসবাস করছে বিষাক্ত তামাকের সাথে। বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে গিয়ে এসব শিশু নানা অসুখ-বিসুখেও আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্ত কোন ফ্যাক্টরিতেই বয়স্ক শ্রমিকদের জন্য তো নয়ই-শিশু শ্রমিকদের জন্যও নেই স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির সুযোগ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা বঞ্চিত এসব শিশু একেবারেই অবহেলায় বেড়ে উঠছে তামাক নামে বিষের সাথে।
প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে তাসফিয়া তাহ্সিন মিম, সাদিয়া আকতার, জর্জিনা নওসিন, আসমা আকতার চাঁদনী, জান্নাতুল ফেরদৌসি পাপড়ী, জুবায়ের আহমেদ আরমান, সাইমুম সাব্বির শোভন, সুলতান শাহেদ, মাহমুদুল হোসেন, আতিকুর রহমান আতিক