ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস। নয় মাস টানা যুদ্ধের পর ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সোনালি সূর্য পাওয়ার মাস।
মুক্তিযুদ্ধের কথা সবার জানা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন-নিপীড়নের কথাও কারো অজানা নয়।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই এ দেশের বিভিন্ন স্থান মুক্ত হতে থাকে। পাকিস্তানি সৈন্যরাও বুঝে ফেলে যে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার কামনা আর লাখো শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না, বাংলাদেশ জয় লাভ করবে।
কিন্তু পাকিস্তানিরা ছিল অনেক নিষ্ঠুর, বর্বর। ওরা মানুষ ছিল না, ছিল পিশাচ। তাই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত জেনে তারা আরেকটা বুদ্ধি বের করল। ওরা ভাবল, এ দেশের এমন ক্ষতি করে দিয়ে যাবে যাতে বাঙালি জাতি আর কখনো মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে।
সেজন্য দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার পরিকল্পনা করল তারা। তাদের হত্যা পরিকল্পনায় ছিলেন শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, গবেষক সহ নানা পেশার জ্ঞানী ও গুণী মানুষেরা।
যুদ্ধ শুরুর সময় থেকেই অনেক বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানিরা। কিন্তু এবার পরিকল্পনা করে এক হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠল তারা। ১৪ ডিসেম্বর রাতে বুদ্ধিজীবীদের নিজ নিজ বাসা কিংবা কর্মস্থল থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা।
কাউকে গুলি করে, কাউকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে নৃশংসভাবে হত্যা করে তারা। এরপর সেই বুদ্ধিজীবীদের নিথর দেহ ফেলে দেয় মিরপুর, রায়েরবাজার সহ বিভিন্ন স্থানে।
এই পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের মাত্র দুদিন পর দেশ স্বাধীন হয়। আর সেই বুদ্ধিজীবীদের স্বজনেরা তাদের ক্ষত-বিক্ষত বিকৃত লাশ খুঁজে পান মিরপুর বধ্যভূমি, রায়েরবাজার বধ্যভূমি সহ বিভিন্ন স্থানে।
এ ঘটনায় পুরো দেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়। বিশ্বের ইতিহাসে এটি ছিল একটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড।
১৪ ডিসেম্বর রাতে শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে নির্মিত হয়েছে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ডাকটিকিটও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ডাকবিভাগ।
আর বাংলাদেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সেই সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল বলেই প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর পালিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর