যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ- যেন সূর্য রঙের নদী। সেই হলুদ ফুলগুলো যখন মিষ্টি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দোল খায় তখন তো কথাই নেই।
হ্যাঁ, বলছিলাম সর্ষে ক্ষেতের কথা। যে দৃশ্যের বর্ণনা দিলাম, তা বোধহয় কম-বেশি সবারই পরিচিত। শীতকালে বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় চোখে পড়বে এমন সর্ষে ক্ষেত।
তবে এখন যে সর্ষে ক্ষেতের কথা বলব, তার আকর্ষণ একটু বেশিই। চীনের পূর্ব য়ুনানের লুপিং অঞ্চলটি সর্ষেক্ষেতের জন্যই জনপ্রিয়। প্রকৃতিপ্রেমী ও আলোকচিত্রীদের জন্য স্বর্গপুরী লুপিং। শুধু তারাই নন, এই স্থানটি দেখতে আসেন অনেক পর্যটকও।
বসন্তের শুরুতে লুপিংয়ে সর্ষেফুল ফুটতে শুরু করে। মাইলের পর মাইল জুড়ে ফুটে থাকে হলুদ সর্ষে, দেখায় সোনালি সমুদ্রের মতো।
শুধু সর্ষেক্ষেতই নয়, লুপিংয়ের বাড়তি পাওনা ও অনন্য সৌন্দর্য ক্ষেতের মাঝে ছোট ছোট টিলা। দিগন্তজোড়া হলুদ ফুলের মাঝে মাঝে সবুজ টিলাগুলো দেখায় অপূর্ব।
চিনের এই জায়গাটি এখন আলোকচিত্রীদের তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আলোকচিত্রীরা ছুটে আসেন এই ‘সূর্যনদী’ বা ‘সোনালি সমুদ্রের’ অসাধারণ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে।
লুপিং কিন্তু মৌমাছি চাষের আদর্শ স্থান। সর্ষে ফুলের ঘ্রাণে এখানে ছুটে আসে অসংখ্য মৌমাছি। তাই বসন্তকালে এখানে মৌমাছির চাষও করা হয়।
ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস লুপিং ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। তবে এপ্রিল পর্যন্ত থাকে সোনালি সমুদ্র। জুন মাসে আস্তে আস্তে ফিরে আসে সবুজ রূপে।
লুপিংয়ের সর্ষের সোনালি সাগর দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো স্পট জিনিফেং (সোনালি মুরগি শৃঙ্গ)। শহর থেকে একটু দূরে অবস্থিত এই স্পট। বাসে করে খুব সহজেই এখানে পৌঁছানো সম্ভব। এখান থেকে দিগন্তজোড়া সমতল সর্ষেক্ষেত, মাঝে মাঝে ছোট ছোট পাহাড় এবং সবকিছুকে স্বপ্নীল রূপ দেওয়া নীল আকাশ দেখে চোখ জুড়াবে।
সর্ষেক্ষেতের মনোমুগ্ধকর রূপ দেখার আরেকটি ভালো স্পট শিওয়ানদাশান (শত হাজার পাহাড়)। লুপিং শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে এই স্পটটি। পথের দু’ধারেই যতদূর চোখ যায় দেখতে পাবেন শুধুই সর্ষেক্ষেতের দৃশ্য, শুধু হলুদ রং একঘেঁয়েমি তৈরি করবে না, সেজন্য দূরের পাহাড়গুলো বৈচিত্র্য তো সৃষ্টি করবেই, পাশাপাশি আটকে দেবে দৃষ্টিসীমা।
লুপিং থেকে ঘুরে আসার পর জায়গাটিকে কেউ আর ভুলতে পারে না। চোখে সর্ষেফুল দেখার মতোই সারাক্ষণ চোখে ভাসে সর্ষেফুলের সোনালি সমুদ্র। শুধু তাই নয়, মনটাও পড়ে থাকে সূর্যনদীর দেশে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৪
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর