বাংলা সাহিত্যের অমর একটি নাম মাইকেল মধুসূদন দত্ত। বাংলা কাব্য সাহিত্যে আধুনিতকার সূচনায় সবচেয়ে বড় অবদান তার।
১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্ম মধুসূদন দত্তের। বাবা রাজনারায়ণ বসু ও মা জাহ্নবী দেবী।
শৈশবে মায়ের কাছেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয় মধুসূদন দত্তের। মায়ের হাত ধরেই পরিচয় হয় রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণের সঙ্গে। এরপর এক ইমামের কাছ থেকে শেখেন বাংলা, আরবি, ফারসি। ১৩ বছর বয়সে সাগরদাঁড়ি থেকে কলকাতায় আসেন মধুসূদন। সেখানে একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর ভর্তি হন হিন্দু কলেজে (প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়)। এখানে পড়ার সময়ই মধুসূদনের কবি হওয়ার স্বপ্ন তৈরি হয়।
মধুসূদন বিলেতে গিয়ে ইংরেজিতে কাব্যচর্চা করার কথা ভেবেছিলেন। ১৮৪৩ সালে তিনি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মূল নামের আগে যুক্ত করেন ‘মাইকেল’ নামটি। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে তার বাবা তাকে ত্যাজ্য করেছিলেন। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার পর মধুসূদন পড়াশোনা করেছিলেন শিবপুরের বিশপস কলেজে।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত নানা কারণে পড়াশোনা শেষে মাদ্রাজে চলে যান। সেখানে একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও ইংরেজিতে সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান তিনি। ছদ্মনামে লিখেছেন পত্রিকায়ও। ‘হিন্দু ক্রনিকল’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করলেও অর্থাভাবে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। মাদ্রাজে থাকাকালীন সাহিত্যিক হিসেবে মধুসূদনের নাম ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে অবশ্য মধুসূদন দত্ত মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। সেজন্য তিনি ১৮৫৬ সালে কলকাতায় ফিরে আসেন। মাতৃভাষায় সাহিত্য চর্চা করেই সফল হয়েছিলেন মাইকেল, সঙ্গে বাংলা সাহিত্যকেও নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষার ছন্দের প্রবর্তক। বাংলা ভাষায় প্রথম সফল মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ লিখেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
মহাকাব্য ছাড়াও গীতিকাব্য, সনেট, পত্রকাব্য, নাটক, প্রহসন ইত্যাদি রচনা করেছেন।
এছাড়া নাটক শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, কৃষ্ণকুমারী, একেই কি বলে সভ্যতা ও বুড় শালিকের ঘাড়ে রোঁ নামের দুটি প্রসহন, ব্রজাঙ্গনা, বীরাঙ্গনা এবং চতুর্দশপদী কবিতা লিখেছেন তিনি। ক্যাপটিভ লেডি তার ইংরেজি কাব্য।
১৮৭৩ সালের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে এই গুণী মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিনে ইচ্ছেঘুড়ির পক্ষ থেকে তার প্রতি রইল শ্রদ্ধা।
ইচ্ছেঘুড়িতে লেখা পাঠান এই মেইলে: ichchheghuri24@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৪