বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: মুক্তিযুদ্ধের পর ৪২ বছর কেটে গেলেও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাঙালির আগ্রহ এতটুকুও কমেনি। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকে জানার আগ্রহ আরো বেশি।
সেই কৌতুহল থেকেই এবারের বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই নিয়ে করা স্টলগুলোতে নতুন প্রজন্মের পাঠকদের ভিড় চোখে পড়ার মত। তারা ঘুরে ঘুরে খুঁজছেন মুক্তিযুদ্ধের বই। পছন্দ হলে কিনে নিতে ভুল করছেন না।
‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর লিবারেশন ওয়ার স্টাডিস’ নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই নিয়ে একটি স্টল করেছে। বাংলা একাডেমি নজরুল মঞ্চের পূর্বপাশে একটি স্টলের নাম (স্টল নম্বর ৪৭৫-৭৬) ‘শুধুই মুক্তিযুদ্ধের বই’। এখানে বিক্রি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা গল্প-উপন্যাস-কবিতা ও ইতিহাসভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের বই।
পাঠকের ভিড় লক্ষ্য করে স্টলটির দিকে এগিয়ে গেলে চোখে পরে কয়েকজন তরুণ ও কিশোর পাঠককে। তারা মুক্তিযুদ্ধের ওপর বিভিন্ন বই উল্টে-পাল্টে দেখছিলো। এদের একজনের নাম শাহজালাল হৃদয়। বাসা পুরান ঢাকার ওয়ারীতে। পড়াশোনা করে সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের দশম শ্রেণিতে।
মুক্তিযুদ্ধের বই কেনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সে জানায়, আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। শুধু গল্প শুনেছি। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আরো সঠিকভাবে জানার জন্যই ইতিহাসভিত্তিক বইগুলোর প্রতি আমার আগ্রহ জন্মেছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা বইগুলোর বিক্রি বেশ ভালো। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের পাঠকরাই বইগুলো বেশি কিনছে।
বিক্রেতারা জানান, সুফিয়া কামালের একাত্তরের ডায়েরী, জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি ও নীলিমা ইব্রাহীমের আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইগুলো বিক্রির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির বিক্রিও উল্লেখযোগ্য।
সেন্টার ফর বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার স্টাডিস’র চেয়ারম্যান ও অন্যতম ট্রাস্টি মেজর (অব.) কামরুল হাসান ভূঁইয়া। তিনি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা।
এ প্রতিষ্ঠানে ১৪ জন ট্রাস্টি রয়েছে যাদের সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তিনি যুদ্ধ করেছেন দুই নম্বর সেক্টরে।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানটি মূলত মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমর নিয়ে গবেষণা করছে। এ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ওপর তাদের ৩৬টি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। তারা নিজেদের কথা কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের মত প্রকাশ করতে পারেন না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে ওইসব সাধারণ মানুষদের অবদান অনেক জাতীয় নেতার চেয়েও বেশি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে, ওইসব সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গবেষণা করে তাদের সত্যিকারের গল্পটা মানুষের কাছে তুলে ধরা।
কামরুল হাসান জানান, গবেষণা গ্রন্থ ছাড়াও তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তিযুদ্ধের ওপর বিভিন্ন ধরনের প্রামাণ্যচিত্র করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরইমধ্যে ‘কামালপুরের যুদ্ধ’ নামে সম্মুখ সমরের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
মুক্তিযুদ্ধের ওপর আরো বিশদ পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের বই বিক্রি হচ্ছে এমন আরো কয়েকটি স্টলে খোঁজ নিয়েও জানা যায় একই তথ্য। সবাই জানান, ক্রেতাদের বেশিরভাগই তরুণ প্র্রজন্মের।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৪