ঢাকা, সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

তারা খসে পড়া, নাকি উল্কাপাত?

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৪
তারা খসে পড়া, নাকি উল্কাপাত?

অন্ধকার রাতে তারাময় আকাশ থেকে হঠাৎ আলোর ফুলকি মাটির দিকে ছুটে আসতে কম-বেশি দেখেছি সবাই। রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে এমন দৃশ্য।

তুমিও নিশ্চয়ই ছুটতে থাকা নক্ষত্র দেখেছ? তারার ছুটে চলা দেখতে ভারি মজা লাগে, তাই না?  

এবার একটা রহস্য উদ্ঘাটন করি। যেটাকে আমরা তারা ছোটা বলি, সেটা আসলে তারা নয়, উল্কা। উল্কার ছুটে চলা দেখতে তারার খসে পড়া বা ছুটন্ত তারার মতো লাগে। সোজা কথায় উল্কা দেখতে তারার মতো দেখায়। উল্কার এই ছুটে পড়াকে বলা হয় উল্কাপাত। উল্কা কখনো কখনো ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়। তখন সেটাকে বলে উল্কাপিণ্ড।

জানতে ইচ্ছে করছে উল্কা কীভাবে সৃষ্টি হয়? ঠিক আছে, বলেই দিই তাহলে। মহাকাশে নানা রকম মহাজাগতিক বস্তু আছে। নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে ভেসে বেড়ানো জড়পিণ্ড। ছোট-বড় অসংখ্য জড়পিণ্ড মহাকাশে ভেসে বেড়ায়। এই জড়পিণ্ডগুলো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং অভিকর্ষ শক্তির কারণে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। এরপর তারা পৃথিবী বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পর বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে জ্বলে ওঠে। বায়ুমণ্ডলে আসার পর মেসোস্ফেয়ার স্তরে থাকা অবস্থায় আমরা আকাশে উল্কা দেখতে পাই। বেশিরভাগ উল্কাই বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে জ্বলে ছাই হয়ে যায়। যেগুলো ছাই হয় না। পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে সেগুলোই হচ্ছে উল্কাপিণ্ড।

ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ কিলোমিটার থেকে ১১৫ কিলোমিটারের মধ্যে খালি চোখে উল্কা দেখা যায়।
উল্কা নানা আকারের হতে পারে। আকার অনুযায়ী তাদের ওজনও আলাদা আলাদা। উল্কা নানা রঙের হলেও কালো রঙের উল্কার সংখ্যাই বেশি।

আগেই বলেছি ভূ-পৃষ্ঠে যখন কোনো উল্কা আছড়ে পড়ে তখন তাকে বলে উল্কাপিণ্ড। এই উল্কাপিণ্ড তিন রকমের হয়। এক ধরনের উল্কাপিণ্ড হচ্ছে খনিজ সিলিকেট দিয়ে গঠিত পাথর সমৃদ্ধ। আরেক ধরনের উল্কাপিণ্ড লোহা সমৃদ্ধ যা লোহা-নিকেল দিয়ে তৈরি। এবং সবশেষ রকমের উল্কাপিণ্ড বিভিন্ন রকম পাথর ও ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি। এগুলো লোহা-পাথর সমৃদ্ধ উল্কাপিণ্ড।

প্রতি বছর প্রায় ১৫০০ মেট্রিক টন উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে আসে। তাদের বেশিরভাগই পাথর উল্কাপিণ্ড। এই পাথর উল্কাপিণ্ডগুলোকে আবার কন্ড্রাইট ও একন্ড্রাইট- এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পৃথিবীতে পতিত হওয়া ৮৬ শতাংশ উল্কাপিণ্ডই কন্ড্রাইট শ্রেণির এবং ৮ শতাংশ একন্ড্রাইট শ্রেণির।

শুধু উল্কাপাতই নয়, উল্কাবৃষ্টিও হয় কিন্তু। অনেকগুলো উল্কা যখন একসাথে ছুটে আসে তখন সেটাকে বলে উল্কাবৃষ্টি। এটাকে আবার উল্কাঝড়ও বলে। এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত উল্কাঝড় দেখা যায়।   

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষরা আলাদা আলাদা সময়ে উল্কাপাত দেখতে পায়। সময়ই শুধু আলাদা হয় না, উল্কার পরিমাণও কম-বেশি হয়। দক্ষিণ গোলার্ধের মানুষ বেশি উল্কা দেখতে পায়। তারা গড়ে ঘণ্টায় ৩০টি করে উল্কা দেখে। আর উত্তর গোলার্ধের মানুষরা গড়ে প্রতি ঘণ্টায় দেখে ১০টি উল্কা।

উল্কা নিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কার, ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। উল্কাপাতের সময়কে অনেকে ইচ্ছেপূরণের সময় বলে মনে করেন। তাদের ধারণা ‘তারা খসে পড়া বা তারা ছোটার’ সময়ে কোনো মনোস্কামনা বা প্রার্থনা করলে তা পূরণ হয়। কেউ কেউ ‘তারা ছোটা’ অর্থাৎ উল্কাপাতকে মনে করেন সৌভাগ্যের লক্ষণ। আবার অনেকের ধারণা শয়তানকে তাড়া করতে করতে ‘তারা খসে’ পড়ে বা তাদের মৃত্যু হয়।

বেশিরভাগ মানুষই জীবনে কখনো না কখনো উল্কাপাত দেখে থাকে। রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে হঠাৎ চোখে পড়তে পারে উল্কাপাত। তুমি যদি উল্কাপাত না দেখে থাকো তবে রাতের বেলা আকাশের তারা গুণতে বসে যাও। কে জানে, ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা পেয়েও যেতে পারো পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা তারারূপী উল্কার।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।