ঢাকা, সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

২৫ মার্চ কালোরাত্রি: অপারেশন সার্চলাইট

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৪
২৫ মার্চ কালোরাত্রি: অপারেশন সার্চলাইট

১৯৭১ সাল। তারিখটা ছিল ২৫ মার্চ।

সময়টা ছিল রাত। হঠাৎ করেই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল নিরস্ত্র বাঙালির উপর। নির্বিচারে হত্যা করল শিক্ষক-ছাত্র-সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে।

কিন্তু কেন?

কারণটা জানতে হলে একটু পেছনে তাকাতে হবে।

১৯৪৭ সালে দুশো বছরের ব্রিটিশ শাসন শেষ হয়। উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে দিয়ে গিয়েছিল। নতুন দেশ দুটির নাম হলো ভারত এবং পাকিস্তান। এর মধ্যে পাকিস্তানের দুটো অংশ ছিল। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। দুই অংশের মধ্যে দূরত্ব ছিল অনেক। পূর্ব পাকিস্তান ছিল আমাদের বাংলাদেশ, আর পশ্চিম পাকিস্তান বর্তমানের পাকিস্তান।

সেই শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তানকে সবদিক থেকে বঞ্চিত করে আসছিল পশ্চিম পাকিস্তান। সেজন্য অনেক ক্ষেপে গিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। তখন থেকেই তারা এসব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ- আন্দোলন করে আসছিল। এর মধ্যে ছিল ’৫২-র ভাষা আন্দোলন।

এসবকিছুর পর ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে পূর্ব পাকিস্তানের দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। কিন্তু তাদের সরকার গঠন করতে দেওয়া হয় না। এ বিষয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করে আওয়ামী লীগ ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ। ১৯৭১ সালের ৭মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন যা বাঙালির মনে স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষা আরো তীব্র করে।

ক্ষোভে উত্তাল পূর্ব পাকিস্তানে ইয়াহিয়া খান এসে শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠক করেন, কিন্তু গোপনে গণহত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। ১০-১৩ মার্চ পর্যন্ত  সরকারি যাত্রী রূপে সাদা পোশাকে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয় সামরিক বাহিনীর অসংখ্য সেনা। অস্ত্রবোঝাই জাহাজ এসে ভিড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে।

এরপর ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে প্রতিবাদমুখর বাঙ্গালিকে হত্যা করতে ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইট নামে এক অপারেশন চালায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। সেই রাতে নিরস্ত্র সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্য, ছাত্র-শিক্ষক- সাংবাদিকদের হত্যা করে তারা। এ খবর বিশ্বের কাছে গোপন রাখতে আগেই সরিয়ে দেওয়া হয় বিদেশি সাংবাদিকদের। মূলত ঢাকায় সামরিক বাহিনী এ হত্যাযজ্ঞ চালায়। অল্প সময়ের মধ্যেই গাছের গুঁড়ি ও অন্যান্য জিনিস রাস্তায় ফেলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাঙালি সেনারা। কিন্তু তা গুঁড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানিরা তাদের হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থানরত ছাত্রদের অনেককে তারা হত্যা করে। নিধন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ আরো অনেককে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

গ্রেফতার হবার কিছুক্ষণ আগে রাত ১২টার পর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন বঙ্গবন্ধু। এরপর চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণাটি প্রচার করা হয়।

সে ঘোষণার পরই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসংখ্য বাঙালি, আর সে যুদ্ধজয়ের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয় আজকের বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।