ক্যারেন খুব গরিব একজন মেয়ে। তার জুতা নেই।
আরও একটু বড় হলে ক্যারেন তার প্রিয় লাল জুতাজোড়া পরে গির্জায় যেতে চায়।
গির্জায় গিয়ে উপাসনার সময় ক্যারেন শুধু তার লাল জুতা নিয়েই ভাবে। উপাসনা শেষে পালক মহিলাটি তখন ক্যারেনকে ধমকের স্বরে বলেন, ক্যারেন একজন উঠতি বয়সী খ্রিস্টান, গির্জায় জুতা পরে যাওয়া তার ঠিক না।
পরবর্তী রবিবারেও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ক্যারেন তার লাল জুতা পরে নেয়। এবারো উপাসনাকালীন পুরো সময়টা ক্যারেন তাকে দেখতে কেমন লাগে শুধু সেসব নিয়েই ভাবে। তারপর গির্জা থেকে বের হয়ে আসার সময় তার জুতাগুলো যেন নিজেরাই নাচতে শুরু করে দিল।
ক্যারেন বাড়ি ফিরছিল ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে। গাড়ির ভেতর ক্যারেন একজন বয়স্ক মহিলাকে খুব নির্দয়ভাবে লাথি মারলে গাড়োয়ান তার পা থেকে জুতাজোড়া খুলে ফেলে দেয়। বয়স্ক মহিলাটি অসুস্থ হয়ে যান। তখন অসুস্থ মহিলাটির সেবা করা ক্যারেনেরই দায়িত্ব, কিন্তু সে তা না করে একটি বল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একজন বয়স্ক রোগীর সেবা করার কথা ভুলে গিয়ে ক্যারেন আবার তার জুতাজোড়া পরে নাচতে চায়।
ক্যারেন নাচতে শুরু করলে এবার যেন তার জুতাগুলো আপনা আপনি জীবন্ত হয়ে উঠে। তারা নাচতে নাচতে ক্যারেনকে একটি অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়। ভয়ে সে তার পা থেকে জুতা খুলে ফেলার চেষ্টা করে কিন্তু জুতাগুলো তার পায়ের সাথে পুরোপুরি আটকে যায়। সে মাঠে, ঝোপে, বৃষ্টিতে, রোদে বহুদিন ধরে নাচতে থাকে।
একদিন সমাধিক্ষেত্রের ভেতরে নাচার সময় সে একটি পরি দেখতে পায়। পরিটি তাকে বলে, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাকে নেচে যেতে হবে। এবং সে নাচতে থাকবে যখন তার শরীরে শুধু হাড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না তখনো।
ক্যারেন তার পায়ের চামড়া বিদীর্ণ হয়ে রক্তাক্ত না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়, মরুভুমি ও কাটার ঝোপঝাড়ে অবিরাম নেচে যায়।
বিরক্ত হয়ে অবশেষে ক্যারেন একজন জল্লাদের কাছে এসে তার পা কেটে দেয়ার অনুরোধ জানায়, যেন সে এই নির্মম যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়।
জল্লাদ ক্যারেনের ইচ্ছা অনুয়ায়ী কাজটি করল। কিন্তু তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন পায়ের সাথে জুতাগুলো তখনো নেচে চলছিল।
ক্যারেন জল্লাদের হাতে চুমু দেয়, যে হাত দিয়ে লোকটি ক্যারেনের পা কেটে দিয়েছিল। লোকটি তাকে কাঠের তৈরি ছোট পা ও একজোড়া ক্রাচ বানিয়ে দিল।
ক্যারেন এখন তার ভুলের অনুতাপ করতে গির্জায় যেতে চায়। কিন্তু যখনি সে গির্জায় যায়, তখনি তার লাল জুতাজোড়া এসে হাজির হয় তার সামনে। তারপর গির্জার দরজার সামনে নাচতে থাকে তারা, যাতে ক্যারেন ভেতরে ঢুকতে না পারে।
কারেন ঘরে এসে কান্নায় চোখ ভাসায়।
অবশেষে একদিন পরিটি আবার তার কাছে আসে। সে ক্যারেনের কান্না ও ভুলের অনুতাপ দেখে তার ছোট কক্ষটিকে একটি গির্জা বানিয়ে দেয়, যাতে সে
প্রার্থনা করতে পারে।
কারেন এতোটাই খুশি হয় যে একসময় তার হৃদয় গলে যায়। তারপর সে মারা যায়।
ইচ্ছেঘুড়িতে লেখা পাঠান এই মেইলে: ichchheghuri24@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৪