গাছেরা যে কীভাবে কাঁদে আমি জানি না। আমার দাদু আখরেম, তিনিই প্রথম আমাকে দেখিয়েছিলেন গাছেরা কীভাবে কাঁদে।
এটা ছিল অক্টোবরের শেষ। সম্ভবত তখন শীতকাল। রাতে কনকনে ঠান্ডা পড়েছিল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা ঘর থেকে বের হলাম। সময়টা ছিল সকাল। দাদু বললেন, ফেদ্রা, তুমি আজ সকালে কী দেখতে চাও?
আমি সাবধানে সবকিছু সতর্কতার সঙ্গে দেখতে লাগলাম। অস্পষ্ট, চিন্তাশীল ও নীরব লাগছিল চারপাশ। শুধু সূর্যই তখন আমার কাছে উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিল। আমি দাদুকে বললাম, দেখো দাদু, সূর্য কেমন জ্বল জ্বল করছে।
‘হুম’ দাদু একমত হলেন।
আর কিছু? ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখো।
আমি চারিদিকে লক্ষ্য করলাম। কোথাও কোনো দরকারি কিছু দেখতে পেলাম না। দাদু মুচকি হেসে তার ঘন ধূসর দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে সামনের গাছগুলোর দিকে তাকালেন। আমি তাকে অনুসরণ করলাম। রাতের তুলনায় সেগুলোতে বেশ পরিবর্তন দেখলাম।
আমি বললাম, চেরি গাছে অনেকগুলো হলুদ পাতা দেখা যাচ্ছে।
দাদু আবারো মুচকি হাসলেন। তার চোখ যুবকের মতো জ্বলজ্বল করছে। প্রথমে তিনি একটা গাছ দেখলেন। তারপর অন্য গাছের কাছে গেলেন।
খুব গভীরভাবে দেখো এটা। বললেন, তিনি।
চেরি গাছগুলো দেখতে লাগলাম আমি। সেগুলো বেশ লম্বা এবং তরতাজা। এগুলো আমার বাবা (তিনি একজন গাড়ি চালক) দু’তিন বছর আগে কোথা থেকে যেন কিনে এনেছিলেন। রাস্তার ধারেই সেগুলো রোপণ করেন তিনি। আমি দাদুকে বললাম, দেখো দেখো শিশিরগুলো কেমন করে ওই লম্বা গাছগুলোর পাতার উপর পড়ছে।
এগুলো শিশির না ফেদ্রা, ওগুলো কান্না। বলেই ব্যাখ্যা করতে আরম্ভ করলেন দাদু। আমিও দাদুর সঙ্গে যোগ দিলাম।
তুমি এটাকে কীভাবে দেখো ফেদ্রা। গতরাতে প্রথমবারের মতো বরফ আঘাত হেনেছে। দেখো গাছের পাতাগুলো কেমন কালো হয়ে গেছে।
দেখছি দাদু। আমি খুব তাড়াতাড়ি জবাব দিলাম। যাতে করে দাদু তার গল্পটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
এই পাতাগুলো কেমন ঠান্ডায় জমে আছে। এগুলো এখন আর নরম হবে না। তারপর যখন সূর্য আলো ফেলবে, তখন বরফ গলতে থাকবে। এবং গাছগুলো কাঁদতে থাকবে।
আমি দাদুকে বাধা দিতে পারলাম না। বরং দেখলাম,
হ্যাঁ, সত্যিই তো গাছগুলো কাঁদতে আরম্ভ করেছে।
তারা কি অনেক সময় ধরে কাঁদবে দাদু?
এখন আর বেশি কাঁদবে না তারা। শিগরিই পাতাগুলো হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে যাবে। তারপর বরফগুলো তাদেরকে ঢেকে ফেলবে।
দাদু লম্বা গাছটার কাছে গেলেন এবং একটা ভেজা পাতা তুলে নিলেন হাতে। আমি লক্ষ্য করলাম দাদু, দীর্ঘক্ষণ আর হাসছেন না। আমি বুঝতে পারলাম, দাদু খুব দুঃখ পাচ্ছেন। এই ভেবে যে, গ্রীষ্মকাল এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল!
ইচ্ছেঘুড়িতে লেখা পাঠান এই মেইলে: ichchheghuri24@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৪