ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ছোটগল্প

দাদুর বিড়াল

সুমাইয়া বরকতুল্লাহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১১
দাদুর বিড়াল

দাদুর বিড়াল বলে আমরা কেউ কিছু বলতে পারি না। দাদুর মতো বিড়ালটিও মুরুব্বি হয়ে গেছে।

দাদু বিড়ালটিকে অনেক ছোট থেকে পালছেন। বিড়ালটি দিনে দিনে অনেক বড় হয়েছে। বিড়ালটাকে তিনি খুব আদর করেন। তাই আমরা সবাই এটিকে ‘দাদুর বিড়াল’ বলে ডাকি।

বিরালটি এখন আর আগের মতো কথা শোনে না। আদরও নেয় না। খালি ত্যাঁড়ামি করে। আদর করলে আগের মত গুড়গুড় আওয়াজ করে চুপ করে বসে থাকে না। ঘাড় ফুলিয়ে ফোঁস করে ছুটে পালায়। খাবার দিলে মন দিয়ে খায় না। খাবারে নাক লাগিয়ে অরুচি দেখায়, পাশেই গোল হয়ে বসে থাকে। খাবারে তার প্রচন্ড বিরক্তি। ঘরে-বাইরে ইঁদুরের উপদ্রব। সে ইঁদুর শিকার করে না সেই বহুদিন থেকে। ইঁদুরের গর্তের কিনারে গিয়ে বসে থাকে। ইঁদুর যখন গর্ত থেকে মাটি তোলে তখন সে মাথা কাঁত করে দেখে। ইঁদুর শিকার করার ব্যাপারে তার মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যায় না।

দাদুর বিড়াল এখন আর আগের মতো ঘরে থাকে না। সারা এলাকা ঘুরে বেড়ায়। ঘরে এলে দাদু তাকে খাবার দেয় কিন্তু সে খায় না। নিজেই খাবার যোগার করে খায়। মহাচোর। খাবার চুরিতে ওস্তাদ। চুরি করতে তার কোনোই লজ্জা লাগে না। সুযোগ পেলেই চুরি করে খাটের নীচে গিয়ে আরাম করে খায়। পিটালেও মুখের খাবার সে ফেলে না। চোখ বন্ধ করে খেয়ে তারপর জিহ্বা দিয়ে মুখ চাটে। তার ডর-ভয় বলতে কিছুই নেই। এটাকে সবাই এখন ‘ওলাবিলাই’ বলে ডাকে।

বিড়ালটি এখন ঘরের হাড়ি পাতিল উল্টায়। চুরি করে দুধ, মাছ, মাংস খেয়ে ফেলে। প্রায়ই সে মোরগের বাচ্চা, হাঁসের বাচ্চা ধরে খেয়ে ফেলে। চারদিক থেকে চুরির অভিযোগ আসতে লাগল। তাকে চোখে চোখে রাখতে হয়। তার যন্ত্রণায় সবাই অস্থির। দাদুভাইও এখন বিড়ালের ওপর খুব বিরক্ত।

আর কত সহ্য হয়। দিনে দিনে বিড়ালটি খুব অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে। একদিন বিড়ালের জন্য দাদুভাই দাদুর শক্ত বকুনি খেয়ে বিড়ালটাকে চটের ব্যাগে ভরলেন। পরে দূরে একটা বনের ভেতরে ফেলে দিয়ে আসলেন। বিড়ালটি একা একা বনের ভেতরে ঘুরে তো ঘুরে। তার কোনো সঙ্গী-সাথী নেই। তার কিছুই ভালো লাগে না। বনে সে শিকার খুঁজে পায় না। ুধায় অস্থির।

একদিন সে দেখল, অনেকগুলো ইঁদুর দল বেধে মুখে খাবার নিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে তো বিড়ালটি মহা খুশি। মনে মনে ভাবলো, ‘এবার মনের আনন্দে পেট ভরে ইঁদুর খাওয়া যাবে। ’ কিন্তু ইঁদুরগুলো খুব চালাক। বিড়ালটাকে দেখেই তাড়াতাড়ি গর্তে লুকিয়ে পড়ল। বিড়ালটি সারাদিন গর্তের সামনে ওঁৎ পেতে বসে রইল। কিন্তু কোনো ইঁদুরের দেখা পেল না। ুধায় বিড়ালের পেট চোঁ চোঁ করছে। বিড়াল মনে মনে ভাবল, এভাবে আর বেশি দিন বেঁচে থাকা যাবে না। ইঁদুরের সঙ্গে খাতির জমাতে হবে।

বিড়ালটি অনেক বুদ্ধি করে ইঁদুরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করল। সে বলল, বন্ধুরা ভয় পেয়ো না, আমি তোমাদের বন্ধু। আমি তোমাদের উপকার করতে চাই। তোমরা সারাদিন খাবারের খোঁজে বাইরে ব্যস্ত থাকো। তখন তোমাদের প্রাণপ্রিয় বাচ্চাগুলোকে দেখাশোনা করার জন্য কেউ থাকে না। আমি বাসায় বসে তোমাদের বাচ্চাগুলোকে দেখাশোনা করবো। তোমরা নিশ্চিন্ত মনে খাবার সংগ্রহ করতে পারবে। এতে ইঁদুরেরা খুব খুশি হয়ে গেল। তারা বিড়ালের পরামর্শ সরলমনে গ্রহণ করলো। এভাইে চলতে লাগল। ইঁদুরেরা সারাদিন বাইরে গিয়ে খাবার কুড়িয়ে আনে আর বিড়ালটি বাসায় বসে বসে খায় আর ইঁদূরছানাদের পাহাড়া দেয়। বিড়ালটি প্রতিদিন ছানাগুলো গুনে ও কতটুকু বড় হয়েছে তা পরখ করে দেখে।
একদিন ইঁদুরগুলো বাইরে থেকে বাসার কাছে এসে দেখে বিড়ালটি খুব মজা করে কি যেন কটমট করে খাচ্ছে। ইঁদুরগুলো কাছে এসে দেখে, বিড়ালটি একটার পর একটা ইঁদুরছনা ধরছে আর চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। ইদুরগুলো পাগলের মত দৌঁড়ে গর্তে ঢুকে দেখে, সব শেষ! মাত্র দুটি ইঁদুরছানা আছে। বিড়ালটি সব ইঁদুর ছানা খেয়ে ফেলেছে। তখন ইঁদুরগুলো রাগে আগুন হয়ে গেল। তারা এক হয়ে বিড়ালকে বলল, তোমাকে বিশ্বাস করে এখানে আশ্রয় দিয়েছিলাম আর তুমি আমাদের এত বড় সর্বনাশ করলে! শক্রু কখনো বন্ধু হতে পারে না। তোমার প্রতিশোধ আমরা এখনই নিচ্ছি। বিড়ালটি তখনও চোখ বুঝে খাচ্ছে।

রাগে কষ্টে ইঁদুরগুলো চারদিক থেকে বিড়ালের ওপর ঝাপিয়ে পড়ল। ইঁদুরগুলো বিড়ালের সারা শরীরে কাটুস-কুটুস কামড়াতে লাগল। বিড়াল বহু চেষ্টা করেও পালাতে পারছে না। সমস্ত শরীর ত-বিত ও রক্তাক্ত হয়ে গেল। ইঁদুরের আক্রমণে বিড়াল কাবু হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ল। পরে ইঁদুরগুলো বিড়ালটাকে টেনে হিঁচড়ে বনের বাইরে নিয়ে রেখে আসল। তারপর আর কোথাও দেখা যায়নি দাদুর বিড়ালটি।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।