ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

সেই হতভাগিনী মায়ের পাশে অনেকেই

তানভীর হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৪
সেই হতভাগিনী মায়ের পাশে অনেকেই ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নারায়ণগঞ্জ: নিজের সন্তানরা বোঝা ভাবলে কি হবে, হতভাগিনী মা হাসিনা বেগমের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অনেক সন্তান। বৃদ্ধ বয়সের অক্ষমতা মেনে নিতে না পেরে ঝামেলা এড়াতে বড় ছেলে ছোটন ও তার স্ত্রী একটি বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায় তাকে।



স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত ফিচার ছবি দেখে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাউছুল আজম ফতুল্লা শাসনগাঁও এলাকার একটি সড়ক থেকে হাসিনা বেগমকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি কর‍ান।

আটদিন যাবত হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ ৩০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন হাসিনা। কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ায় একটি পা নড়াতে পারছেন না তিনি।

কর্তব্যরত চিকিৎসক শারমিন আক্তার জানান, হাসিনা বেগমের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। এখানে যতটা সম্ভব সেবা দেওয়া হয়েছে। তবে হাড় ভাঙার চিকিৎসা এ হাসপাতালে সম্ভব নয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

রোববার বাংলানিউজে ‘বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলে দিলো মাকে!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরই হতভাগিনী মায়ের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন অনেকে, বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত।

মঙ্গলবার বিকেলে খন্দকার ফাউন্ডেশনের পরিচালক খন্দকার সাইফুল ইসলাম হাসপাতালে উপস্থিত এসে হাসিনা বেগমের জন্য বিছানা, কাপড়, খাবার এবং তার চিকিৎসা খরচের জন্য ১০ হাজার টাকা নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাউছুল আজমের হাতে তুলে দেন। একই সঙ্গে আগামী এক বছর হাসিনা বেগমকে প্রতি মাসে চার হাজার টাকা করে দেবেন বলে জানান।

এ সময় বৃদ্ধা হাসিনার দু’চোখ বেয়ে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

সাইফুল ইসলাম বলেন, উনি আমার মায়ের মতো। তাই সামাজিক দায়বদ্ধতা ও বিবেকের তাড়নায় ওনার দায়িত্ব নিতে এসেছি আমি। সমাজের বিত্তশালীরা যদি ঠিকমতো সামাজিক দায়িত্ব পালন করেন তাহলে আমাদের সামাজ পাল্টে যাবে।

এর আগে সকালে হাসিনা বেগমকে মানবিক সাহায্য সংঘ পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করে। হাসিনা বেগমের পক্ষে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আসাদুজ্জামান এ অর্থ গ্রহণ করেন।

মানবিক সাহায্য সংঘের প্রতিনিধি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে মানবিক সাহায্য সংঘ কাজ করে যাচ্ছে।

ইউএনও গাউছুল আযম বলেন, মানুষ মানুষের জন্য সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে হাসিনা বেগমের ক্ষেত্রে। অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বাংলানিউজে এবং পরে অন্যান্য জাতীয়-স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর এখন হাসিনা বেগমের পাশে অনেকে এসে দাঁড়‍াচ্ছেন। এতে আমার মন অনেক বড় হয়ে গেছে।

এসময় ‍অসহায় বৃদ্ধদের জন্য একটি আশ্রম তৈরির জন্য বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আশ্বাস দেন, এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে জেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা দেবে। মা-বাবা’র অধিকার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার যে আইন করেছে, তা প্রয়োগের বিষয়েও নজর দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।