মোল্লা বাড়ির ডাব যেমন মিষ্টি, তেমন তার স্বাদ।
তো হয়ে যাক আজ রাতেই!
ইলশে গুঁড়ি বিষ্টি।
আমরাও প্রস্তুত ছয়জন। সোহেল ও সুমন পাহারাদার। পিন্টু ও রুনি পাচারকারী। আর আমি ও জুয়েল দড়ি ও ছুরি নিয়ে গাছে ও গাছের তলায়। ব্যবস্থা বেশ পাকাপাকি। সব ঠিকঠাক। যে যার পজিশনে...।
কিন্তু হঠাৎ কড়কড় করে খুলে যায় বড় মোল্লার ঘরের কপাট।
ব্যাপার কি ! এমন তো হবার কথা নয়। তবুও হয়েছে।
কী আর করার। আমরা গা ঢাকা দেই।
কিন্তু পাচারকারী দল নিজেরাই পাচার হতে পারেনি তৎক্ষণাৎ।
গ্রামের বাড়ি। ওয়াশরুম অনেক দূর। রাত বিরাতে সে এক মহা গ্যানজাম। মোল্লার ছোট ছেলে বোকা বাবলুর হিসু চেপেছে।
আর সময় পেলো না হাদারাম।
: মা।
: কী বাবা। ঘুম কাতুরে মায়ের গলা।
: হিসু করবো।
তখনো গ্রামে বিদ্যুৎ আসেনি। চাঁদও মেঘের আড়ালে। টিপটিপ বিষ্টি পড়ছে। সাথে ঝির ঝিরে বাতাস।
বিরক্তি ঠেলে হারিকেন হাতে মা দরজা খুলে দেন।
সামনে উঠোন।
: যা। দূরে যেতে হবে না উঠোনেই বস।
উঠোনের মাঝে একটা তেঁতুল গাছ। গাছের আড়ালে পিন্টু ও রনি। ওরা পালাতে পারেনি। দু’জন দু’পাশে। উঁকি দিতে গিয়েই ফেঁসে যায়।
বাবলু কেবল প্যান্ট খুলে বসেছে।
একটু বাতাস। ফরফর করে কী যেন উড়ে গেল। পাখিটাকি হবে হয়তো।
কিন্তু বাবলুর আচমকা চিৎকার, ভূত ! ভূত... ! ভূ..ত...
আর যায় কোথায়।
হারিকেন ছিটকে পড়ে উঠোনে। বাবলু আরও ভয় পেয়ে জাপটে ধরে মাকে।
চরম চিৎকার চেঁচামেচি। মুহূর্তেই ঘটে যায় লঙ্কাকাণ্ড।
ধুপধাপ খুলে যায় সব ঘরের দরজা। পলকের মধ্যে বসে যায় মানুষের হাট। হাতে হাতে হারিকেন আর কূপিবাতি।
পাহারাদার সোহেল সুমনও যোগ দেয় সবার সাথে। একটু পরে আমি ও জুয়েল জড়ো হই। ভালো মানুষের মতো পিন্টু, রনিও এসে হাজির।
কী হয়েছে? কী হয়েছে? সবাই জানতে চায়।
গোঙাতে গোঙাতে বাবলু শুধু বলতে পারলো ভূ...ত। তারপর চিৎপাত।
কেউ লোহা পোড়া পানি ছিটাচ্ছে গায়ে। কেউ কেউ ছুটছে হুজুরের খোঁজে।
হুজুরের পানি পড়া আর গরম লোহার ছ্যাঁকা খেয়ে কিছুটা হুশ ফিরে পায় বাবলু।
‘কী দেখেছিস তুই?’ সবার উৎসুক জিজ্ঞাসা।
কিন্তু বাবলু যা বললো তাতে আমাদের ভিমরি খাওয়ার জোগাড়।
‘ইয়্যা বড় ভূত...। দুই মাথা... কুলোর মতো কান... মু...লোর মতো দাঁত, আগুনের বাটার মতো চোখ... তেঁতুল গাছটার পেছনে। ও.ও..রে... মা-গো...। ’ বাবলু গোঙাতে লাগলো।
সবাই বলাবলি করতে লাগলো - কতদিন বলেছি বাড়ির ভেতরে তেঁতুল গাছ থাকা ভালো নয়। এবার হলো তো।
সে রাতেই তেঁতুল গাছ কাটার সিদ্ধান্ত পাকা হয়ে গেল। আর ভূতও উধাও হয়ে গেলো সেই থেকে।
আমরা ছয় ভূত বেশ মজা পেলাম। মুখ টেপাটেপি করে হাসলাম।
কিন্তু ভূত রহস্য রহস্যই থেকে গেলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৪