ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মজার গল্প

টোনা আর টুনি

বিএম বরকতউল্লাহ্ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১১
টোনা আর টুনি

গ্রামের পাশে ছোট্ট একটা বন। বনে টোনাটুনির সংসার।

বেশি দিন হয়নি সংসার বেধেছে ওরা। খুব সুখে শান্তিতে দিন কাটছে ওদের। একজন চোখের আড়াল হলেই আরেকজন পঁইপঁই করে খুঁজে ফিরে। না পেলে অস্থির হয়ে ওঠে। কারণে-অকারণে রাজ্যের মান-অভিমান চলে এদের মধ্যে। একজন রাগ করলে আরেকজন আদর করে রাগ ভাঙায়।

টোনা একটা ফড়িং ধরে চলে আসে টুনির কাছে। ভাগ করে খায় দু’জনে। টুনিও টোনাকে রেখে কিচ্ছু খায় না। ওদের মধ্যে এতো আনন্দ-হাসি, মিল-মহব্বত আর ভালবাসা দেখে বনের অন্য পাখিরা আড়ালে হিংসে করে। তারা বলে, ‘এ বনে বুঝি আর কেউ বিয়ে-হাতা করেনি গো, শুধু ওই টোনা আর টুনিই বুঝি করেছে। দেখো না কত রং ঢং ওদের। এত ভাব-তামশা ভালো না গো, ভালো না। এসব দেখে গা জ্বলে। ’ কথাগুলো টোনা-টুনির কানেও এসেছে।

একদিন টোনা গেছে খাবারের খোঁজে। এদিকে টুনি তো প্রতিবেশীদের কথা শুনে রাগে-কষ্টে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। টুনি অভিমান করে বলে, ‘ঠিকই তো, সবাই বিয়ে করে খালি ঝগড়া-ফ্যাসাদ আর মারামারি করার জন্যে, আমরাই বা এত রং ঢং করছি কেন? যদি রোজ রোজ ঝগড়া করতাম, স্বামী-স্ত্রীতে চুল টানাটানি করতাম তা হলে আর কষ্ট হতো না কারো। সবাই খুশি হতো, তাদের প্রাণ ঠান্ডা হতো। ’ কথাগুলো বলেই ডালে ঠোঁট ঘষে রাগে ছটফট করতে লাগল টুনি। এমন সময় টোনা একটা পোকা নিয়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে টুনির পাশে বসল। টুনি অভিমানে তিনটা লাফে সরে অন্য একটা ডালে গিয়ে বসল। টুনির এ রকম ব্যবহারে টোনা অবাক হয়ে বলল, ‘ওম্মা, তুমি এমন করছ কেন গো! কোনো ভুল-টুল করেছি আমি! কত কষ্ট করে একটা পোকা ধরে নিয়ে এলাম দু’জনে একসাথে খাবো বলে, আর তুমি কি-না মুখটা কালো করে দূরে সরে গেলে!’
 
টুনি চোখ লাল করে সমস্ত শরীর ঝাঁকিয়ে বলে, ‘এত ঢংঢাং আর ভালো লাগে না, বুঝছ? এখন থেকে দু’জনে ধুমছে ঝগড়া করব, চুলোচুলি করে মাথার চুল ছিঁড়ে রক্ত ঝরাব। থুতু ছিটাছিটি করব। বকাঝকা-করব, তারপর হাতাহাতি ও পরে মারামারি করব। তারপরে ডোবার কাদা-জলে গিয়ে কাদা মাখামাখি করব। আমাদের ঝগড়া দেখে বনের সবাই হাসবে, গাইবে, আনন্দ-ফূর্তি করবে, নাচবে। তবু বনের সবাই খুশি হোক, মজা পাক। তারা শান্তিতে ঘুমাক। এত হিংসে আর ফিসফিসানি ভাল লাগে না আমার। ’

টোনা মুচকি হেসে বলে, ‘ব্যস, ব্যস আর বলতে হবে না তোমার। এখন সব বুঝতে পেরেছি আমি। তোমার সুখ-শান্তি দেখে ওরা হিংসার আগুনে পুড়ছে আর তুমি রাগে ফোঁস ফাঁস করছ, নাহ্! তুমি একটা আস্ত বোকা টুনি। আরে বোকারাম হদ্দ, হিংসা যারা করে কষ্ট তো তাদের হয়। তুমি জানো না টুনি, আমি কিন্তু ওদের হিংসার কথা শুনে খুবই আনন্দে আছি। এদের হিংসা আমার মনে ভালবাসার জোর বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার চলাফেরা আর ভাব দেখে বুঝতে পারছ না, দিনে দিনে আমি যে তোমাকে কত ভালোবাসি আর আদর করি!’

টুনি চোখ মুছে গালের টোল কমিয়ে টোনার কথাগুলো মন দিয়ে শোনার জন্য মুখ ফেরাল। টোনা বলল, ‘যারা হিংসা করে তারা কখনও উন্নতি করতে পারে না। যারা অন্যের ভাল দেখে খালি সমালোচনা করে তারা কখনও সামনে এগুতে পারে না। পেছনে পড়ে থাকে তারা। তুমি বুঝেছ বিপরীত। তাই তোমার এত কষ্ট লাগছে। ’
 
টোনা আগ বাড়িয়ে টুনির কাছে গিয়ে বলে, ‘আরে, তোমার আমার মিল-মহব্বত আর ভালবাসার জোর দেখে যে যাই বলে বলুক। এতে আমাদের কিছু যায় আসে না। ’ একথা বলে টোনা আর টুনি আনন্দে টুন-টুনা-টুন শব্দ করে নেচে উঠল। আর এ শব্দ শুনে হিংসুকদের মনে জ্বলে উঠল কষ্টের আগুন।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।