‘মা, জানো? স্কুলে কী হয়েছে?’
‘কী আবার হয়েছে। পড়ালেখা হয়েছে।
‘পড়ালেখা তো হয়েছে। নাম নিয়ে একটা ঘটনা ঘটেছে। ’
‘কী ঘটনা ঘটল?’
‘আমার নাম। আর তোমার নাম নিয়ে। ’
‘মানে?’
‘আজ স্কুলে সবার নাম আর মায়ের নাম লেখা হলো। তারপর বলা হলো নামের মানে বলতে। এবং কে রেখেছে, তার নামও বলতে। কিন্তু আমি তো জানি না। আমার নাম কে রেখেছে, মা? আমার নাম স্বাধীন কেন? তোমার নাম মুক্তি কেন?’
মা মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘স্বাধীন আর মুক্তি নাম রাখার কাহিনী শুনবি?’
‘অবশ্যই শুনব। আজ স্কুলে বলতে পারি নি। কাল বলব। এক্ষুণি বলো। ’
‘বলব। কিন্তু শর্ত আছে। কাউকে বলতে পারবে না। ’
‘বলতে পারব না কেন?’
‘তুমি বুঝবে না। ’
‘তাহলে স্কুলে কী বলব?’
‘কী বলবে? আমি শিখিয়ে দেব। ’
‘তাহলে তোমাকে কথা দিলাম। কাউকে বলব না। তুমি বলো। ’
‘মন দিয়ে শোনো। তখন আমার বয়স দুই বছর। দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। বাবা পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করছেন। বাবার সহযোগিতায় আমাদের গ্রামের অনেক বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। মানুষ হত্যা করেছে পাকিস্তানি সৈন্যরা। আমার বাবা কাসেম। তোমার মজিদ নানার বাড়িতে গিয়ে তার বউ-ছেলেকে হত্যা করেন। ’
‘মজিদ নানা আমার আসল নানা না? আসল নানা তাহলে কে?’
‘বলতে দাও। তোমার মজিদ নানা পাশের গ্রামে যুদ্ধে করছিলেন। হঠাৎ এসে জানতে পারেন, তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছে আমার বাবা আর পাকিস্তানি সৈন্যরা।
প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমাদের বাড়িতে যান মুক্তিবাহিনী নিয়ে তোমার মজিদ নানা। সুযোগ মতো বাবাকে ধরে মেরে ফেলেন। সঙ্গে মাকেও। তারপর তোমার মজিদ নানা আমাকে নিয়ে আসেন। রাখে তার মায়ের কাছে আমাকে। আমাকে পেয়ে মনের কষ্ট কিছুটা ভুলতে পারেন মজিদ চাচা। আমাকে নিয়ে নতুন করে নতুন দেশের স্বপ্ন দেখেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার নাম রাখলেন মুক্তি। ’
‘তাহলে আমার আসল নানা রাজাকার ছিলেন!’
‘হ্যাঁ, আমার বাবা কাসেম রাজাকার ছিলেন। ’
‘আমি বড় হলাম। বিয়ের পর তোমার মজিদ নানা একদিন সব খুলে বললেন। তোমার জন্ম হলো। তোমার মজিদ নানা তোমার নাম রাখলেন স্বাধীন। ’
‘মা, আমি ধন্য। একজন মুক্তিযোদ্ধা আমার নাম রেখেছেন ‘স্বাধীন’।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৪