১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করেছে বীর বাঙালি। সেসময় পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করার জন্য অনেক গেরিলা আক্রমণ করা হয়।
১০ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল নৌ-চলাচল, বন্দর ও উপকূলীয় এলাকা। ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে, অর্থাৎ ১৬ আগস্ট মংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জে একইসঙ্গে এ অপারেশন পরিচালিত হয়। এ অপারেশনের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের অনেক অস্ত্রবাহী জাহাজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল।
গেরিলা আক্রমণের জন্য যোদ্ধাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রথম ব্যাচকে চার ভাগে ভাগ করে চারটি দলের চারজন কমান্ডার ঠিক করে দেওয়া হয়। কখন আক্রমণ করতে হবে তা জানার জন্য রেডিও আকাশবাণীতে গানের মাধ্যমে সংকেত দেওয়া হতো।
দু’টি সাংকেতিক গান ঠিক করা হয়েছিলো। প্রথমটি হলো- ‘আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ি’। এ গানটি ছিল অপারশেন শুরুর প্রথম সংকেত, যার মাধ্যমে বোঝানো হয় যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরবর্তী সংকেত দেওয়া হবে। দ্বিতীয় গানটি ছিল পঙ্কজ মল্লিকের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেম গান’। এ গানটি প্রচারের অর্থ ওই রাতের মধ্যে আক্রমণ শুরু করতে হবে।
এই অপারেশনের মাধ্যমে গেরিলা যোদ্ধাদের চারটি দল চট্টগ্রাম, মংলা, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর বন্দরে থাকা পাকিস্তানি জাহাজ ও পাকিস্তানকে সহায়তা করার জন্য পাঠানো অন্য দেশের অস্ত্রবাহী জাহাজের গায়ে মাইন লাগিয়ে দেয়। সেই মাইনগুলো বিস্ফোরিত হলে অনেক জাহাজ ধ্বংস এবং আরও অনেক জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রচুর পরিমাণে গোলাবারুদ ও অস্ত্র ধ্বংস হয় এ অপারেশনের মাধ্যমে। এভাবে পাকিস্তানিদের অনেক অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা হয় এবং তাদের মনে ভয়ও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
অপারেশন জ্যাকপট আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ জয়ে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে। এ অপারেশনের মাধ্যমে আমাদের নৌ-বাহিনী আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আলোচিত হয়।
অপারেশন জ্যাকপটসহ বিভিন্ন ছোট-বড় অপারেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রায় ন’মাস যুদ্ধের পর স্বাধীনতা লাভ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৪