বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশজুড়ে চলে নানা উৎসব। আর এসব উৎসবের মাঝে রয়েছে কিছু অনুষঙ্গ।
পান্তাভাত
অনেক বছর আগে বাংলার কৃষক-কৃষানিরা চৈত্র সংক্রান্তি অর্থাৎ বাংলা বর্ষের শেষ রাতে একটি ঘটির মধ্যে অসিদ্ধ চাল, পানি, কচি আমের ডাল দিয়ে রাখত। সকালে কৃষানি ওই আমের ডাল চাল, পানির মধ্যে ভিজিয়ে কৃষক ক্ষেতে যাওয়ার আগে পরিবারের সবার শরীরে ছড়িয়ে দিতো। একই সঙ্গে ভেজা চাল প্রত্যেকের হাতে দিতো।
তাদের বিশ্বাস ছিল, বছরের প্রথম দিনে এই রীতি পালন করলে সারা বছর ধরে কৃষক পরিবারে সুখ-শান্তি বজায় থাকবে। ভালো ফসল হবে।
তবে পণ্ডিতরা মনে করেন, এরই বিবর্তিত রূপ হলো পান্তাভাত। যা পহেলা বৈশাখে শহরের মানুষ মাটির সানকিতে ১০০-২০০ টাকা দিয়ে কিনে খায়।
কালবৈশাখী
কালবৈশাখী শব্দটির সঙ্গে আমরা খুবই পরিচিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে বাংলা নববর্ষের মধ্য দিয়েই কালবৈশাখীর সূচনা। সচরাচর এপ্রিল-মে মাসে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ঝড় কালবৈশাখী নামে পরিচিত। গ্রীষ্ম ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে এই ঝড়ের আগমন ঘটে। অধিক তাপমাত্রায় ভূ-পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বায়ুমণ্ডল যথেষ্ট অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং এই ঝড়ের জন্ম হয়।
সাধারণত শেষ বিকেলে কালবৈশাখী শুরু হয়। কালবৈশাখীর বায়ু গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০-৬০ কিলোমিটার। স্থায়িত্বকাল কম হলেও কালবৈশাখী কখনো কখনো এক ঘণ্টারও বেশি সময় স্থায়ী হয়।
বৈশাখী মেলা
পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ৩ শতাধিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৈশাখে এসব মেলা হয়ে থাকলেও মেলাগুলো বর্ষবরণ মেলা, নববর্ষের মেলা, বান্নি মেলা আবার কোথাও এলাকার নামে, ব্যক্তি বা অন্যান্য নামে পরিচিতি পেয়ে থাকে।
বিভিন্ন নামের মেলাগুলোর মধ্যে বগুড়া জেলার গাংনগর মেলা, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের কারণী আনন্দ মেলা, কুমিল্লা জেলার কান্দিরপাড়, ময়মনামতি, চান্দলা মাধাইয়া, চৌয়ারা এবং বাতিসার মেলা, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জের ভুলু দেওয়ানের মেলা, পাগলনাথের মেলা, পূর্বঘোলা মেলা ও মরজাল সমতা মেলা, গাইবান্ধা জেলাধীন সাদুল্লাপুরের পীরেরহাট বান্নিমেলা, গোবিন্দগঞ্জের বিরাট মেলা, কুড়িগ্রাম জেলার সিন্দুর মতি মেলা, বরিশালের বানারীপাড়ার বাইশারী মেলা ইত্যাদি।
১ দিন থেকে মাসব্যাপি এসব মেলায় হা-ডু-ডু, কুস্তি লড়াই, লাঠিয়াল নাচ, পুতুল নচি, সার্কাস, মোরগ লড়াই, ঘুড়ি ওড়ানো, ষাড়ের লড়াইসহ মজার মজার আয়োজন থাকে। একসময় এসব মেলায় জনপ্রিয় অনুসঙ্গ ছিল বায়োস্কোপ বাক্স। কিন্তু এখন এটি আর দেখা যায় না। তকে অনেক জায়গায় পুতুল নাচ, সার্কাসের আয়োজন করা হয়।