ঢাকা: বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন দেখেনি রনক। কিন্তু সে জানে ভাষার জন্য রক্ত দিতে হয়েছে বাঙালির।
বাবা শরিফুল ইসলামের কাছে ভাষা শহীদদের গল্প শুনে স্মৃতির সেই মিনার আঁকতে উদ্বুদ্ধ হয় সে। সেটাই পেন্সিলের আঁচড় আর তুলির টানে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করছে শিশু রনক।
রনক রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। শুক্রবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে সে।
রনকের মতো উত্তরা থেকে আসা ৫ম শ্রেণির ছাত্রী লুমিয়া আঁকছে একুশের প্রভাতফেরির ছবি। ভাষা আন্দোলন না দেখলেও পেন্সিলের আঁচড়ে সে ঠিকই ফুটিয়ে তুলছে একুশের প্রথম প্রহরের প্রভাতফেরির চিত্র।
শহীদ মিনার, একুশের প্রভাতফেরি, ভাষা আন্দোলন আর যেমন খুশি আঁকো- এমন সব ছবি আঁকতে ব্যস্ত শত শত শিশু। যাদের উপস্থিতিতে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর হয়ে উঠেছে শিশু মিলন মেলায়।
‘শান্তি, সম্প্রীতি, ঐক্য, অগ্রগতি বিনির্মাণে মাইজভাণ্ডারী কার্যক্রম’ -স্লোগানে ‘অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চিত্রাংকন ও সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা’র আয়োজন করছে মইনীয়া শিশু-কিশোর মেলা।
হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্টের সহযোগিতায় গত ছয় বছর ধরে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি।
প্রতিযোগিতায় চারটি বিভাগে সকালের সেশনে অংশ নিয়েছে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশ কয়েকটি জেলার সাড়ে পাঁচ শতাধিক শিশু।
শুক্রবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে দশটায় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ মেহবুব-এ-মইনুদ্দীন আল হাসানী।
চারটি বিভাগের মধ্যে প্লে থেকে প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত গোলাপ কুঁড়ি বিভাগের শিশুদের অংকনের বিষয় যেমন খুশি আঁকো (উন্মুক্ত)।
দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির বেলী বিভাগের শিশুদের অংকনের বিষয় শহীদ মিনার। পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণীর রজনীগন্ধা বিভাগের শিশুরা আঁকছে একুশের প্রভাতফেরি।
অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির হাসনাহেনা বিভাগের শিশুরা আঁকছে ভাষা আন্দোলন। সকালের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা শুরু হয় সকাল সাড়ে দশটায়।
বিকেল ৩টা থেকে ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় সেশন ‘সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা’। এতে অংশ নেবে সাড়ে ছয় শতাধিক শিশু।
সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতায় গোলাপ কুঁড়ি বিভাগের শিশুরা স্বরবর্ণ ও ব্যজ্ঞনবর্ণসহ নির্ধারিত কয়েকটি বর্ণ লিখবে।
অন্য তিন বিভাগের শিশুরা একুশের গানের বিশেষ অংশ লিখবে। তবে কী লিখতে হবে তা খাতায় টাইপ করা থাকবে।
প্রতিযোগিতা শেষে বিকেলে ‘গোলাপ কুঁড়ি’ বিভাগ শিশুদের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়া শিশুদের উৎসাহিত করতে দেওয়া হবে আরও ছয়টি বিশেষ পুরস্কার।
বেলী, রজনীগন্ধা ও হাসনাহেনা বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় পুরস্কার ছাড়াও দেওয়া হবে বিশেষ তিনটি পুরস্কার। প্রতিযোগিতায় ক্রেস্ট (পুরস্কার), সনদসহ মোট ৮৭টি পুরস্কার দেওয়া হবে।
এছাড়া বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংগঠনের উদ্যোগ ‘রাষ্ট্রের সর্বত্র বাংলা ভাষা চালু’র দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেবে শিশু ও অভিভাবকরা।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিশুদের দুপুরে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। এছাড়া তাদের বিনামূল্যে কাগজ, ফর্মও দেওয়া হচ্ছে।
বিকেলে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হবে বলে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক এ আলী আহমদ নানতু বাংলানিউজকে জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষকরা প্রতিযোগিতার রায় চূড়ান্ত করবেন।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আকতারুজ্জামান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট চেয়ারম্যান ড. ওয়াহিদুজ্জামান, দর্শন বিভাগের শিক্ষক ড. আনিসুজ্জামান, শিশু একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন উপস্থিত থাকবেন।
এ আলী আহমদ নানতু বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর আমরা শিশুদের ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানাতে ও মেলা বিকাশে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছি।
তিনি বলেন, বৃহত্তর ঢাকা ছাড়াও বেশ কয়েকটি জেলার শিশুরা এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিবছর অংশ নেওয়া শিশুদের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর নেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতার আগে ঠিকানায় চিঠি ও ফোন করে জানানো হয়। এতে শিশু ও অভিভাবকরা বেশ আগ্রহী হয়। এবারও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিশুদের বাসায় প্রায় সাড়ে সাতশো চিঠি পাঠানো হয়েছে।
দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শিশুরা খুবই আগ্রহী। সচেতন অভিভাবকরাও আনন্দচিত্তে শিশুদের নিয়ে আসেন, জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫