যেকোনো ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণীয় করে রাখতে মানুষ নির্মাণ করে স্মৃতিস্তম্ভ। এর মাধ্যমে ইতিহাসকে হৃদয়ে ধারণ করা অনেক সহজ হয়, সরল হয়ে যায় অমর ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানানোর কঠিন কাজটাও।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রাঙ্গণে অবস্থিত আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের উপরে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে অনেকেই শহীদ হন। তাদের স্মরণে খুব দ্রুত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা নির্মাণ করে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা ছিল আমাদের প্রথম শহীদ মিনার।
সেই শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উঁচু এবং ৬ ফুট চওড়া। নকশা করেছিলেন বদরুল আলম, সঙ্গে ছিলেন সাঈদ হায়দার। শহীদ মিনার তৈরির কাজ তদারকি করেন জিএস শরফুদ্দিন। দুজন রাজমিস্ত্রীর সাহায্যে মিনারটি নির্মাণ করেন তারা।
২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে ভাষাশহীদ শফিউরের বাবা অনানুষ্ঠানিকভাবে এই শহীদ মিনারটির উদ্বোধন করেন। পরে ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন আবুল কালাম শামসুদ্দিন। কিন্তু সেদিনই পুলিশ শহীদ মিনারটি ভেঙে দেয়।
পরে ঢাকা কলেজের সামনে আবার একটি শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছিল, কিন্তু সেটিও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমানে আমরা যে শহীদ মিনার দেখছি, তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল ১৯৫৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। এই শহীদ মিনারের স্থপতি হামিদুর রহমান।
১৯৫৭ সালে নভেরা আহমেদ ও হামিদুর রহমানের তত্ত্বাবধানে চূড়ান্ত নকশা তৈরি করে শুরু করা হয় শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ। এরপর ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন।
সেই থেকে এখনো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে গৌরবের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাঙালি জাতির কাছে উজ্জ্বল করে রেখেছে ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস।
প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদ দের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানায় অসংখ্য মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫