ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

খরগোশ ও চোর চাঁদ

দেবোত্তম কুমার দেবনাথ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৮ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১১
খরগোশ ও চোর চাঁদ

অনেক দিন আগের কথা। তখন খরগোশ তার দাদীর সঙ্গে গভীর বনের মধ্যে ছোট্ট একটি ঘরে বাস করত।

খরগোশ বনের মধ্যে খাদ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফাঁদ পাতলো। এভাবে সে প্রতিদিন অনেক বন্য প্রাণী, পাখি ধরতো। হঠাৎ একদিন দেখল কে যেন তার শিকার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। খরগোশ এবং তার দাদী কিছু খেতে না পেরে ক্ষুধায় কাতর হয়ে গেল। তারপরও সে প্রতিদিন ফাঁদগুলো একবার করে দেখে আসত। কিন্তু সেখানে কিছুই পেত না।

প্রথম প্রথম সে ভাবত তার শিকারগুলো কোনো নেকড়ে হয়ত চুরি করে নিয়ে যায়। কিন্তু তার এই ভুল একদিন ভেঙে গেল। সে তার ফাঁদের পাশে লম্বা, সরু জাতীয় পায়ের ছাপ দেখতে পেলো। তারপর থেকে খরগোশটি প্রতিদিন আরো ভোরে উঠতে শুরু করলো। কিন্তু সেই লম্বা পায়ের ছাপগুলো সে আসার আগেই পড়ে যায়।

খরগোশ চোরকে ধরার জন্য দড়ি দিয়ে শক্ত করে একটি গুপ্ত ফাঁদ তৈরি করলো। মনে মনে ভাবল এই ফাঁদে চোর ধরা পড়বেই। দড়ির একপ্রান্ত তার সঙ্গে রাখল এবং ঝোপের পাশে লুকিয়ে রইল। যেখান থেকে ফাঁদটি দেখা যায়। সেদিন ছিল জ্যোসনা রাত। কিন্তু হঠাৎ করেই চারদিকে অন্ধকার নেমে এল। এমন অন্ধকার যে চাঁদও দেখা যাচ্ছিল না। কিছু তারা আকাশে জ্বল জ্বল করছিল। আকাশেও কোন মেঘ ছিল না। খরগোশ চিন্তা করতে লাগল চাঁদ কোথায় গেল?

কিছুক্ষণ পর খরগোশ বুঝতে পারল গাছের মধ্য দিয়ে কি যেন নেমে আসছে। তার উজ্জ্বলতা দেখে খরগোশের চোখ ধাঁধিয়ে গেল। তার মনে হচ্ছিল চাঁদের আলো যেন তার ফাঁদের উপর নেমে আসছে। বিদ্যুৎ বেগে খরগোশ তার ফাঁদের দড়ি টান দিল। সাথে সাথে সেখানে একটি হুড়োহুড়ির শব্দ পাওয়া গেল এবং মনে হলো যেন চরিদিকে আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। খরগোশ মনে করল চোরটি তার ফাঁদে আটকা পড়েছে।

খরগোশটি দড়ি বেধে রেখে তার বিজ্ঞ দাদীকে খবর দিতে গেল। দাদী সব কথা শুনে তখনই খরগোশকে সেখানে যেতে বলল। খরগোশ এসে ওই আলোর ওপর মাটি দিয়ে কাঁদা তৈরি করে ছুড়ে মারলো। তাতে চাঁদের মানুষের গায়ে দাগ পড়ে গেলো।

একটু পরে খরগোশ যখন ফাঁদের কাছে গেল তখন সে উজ্জ্বল আলো দেখতে পেলো। আলো এমন বেশি ছিল যে, সে তাকাতেই পারছিল না। এমন সময় কে যেন বলে উঠল, কেন তাকে ফাঁদে আটক করা হয়েছে? তাকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হোক। কারণ সে চাঁদের লোক। সকাল হওয়ার পূর্বেই তাকে ফিরে যেতে হবে।

একথা শুনে খরগোশ পেল ভীষণ ভয়। সে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে তার দাদীর কাছে গেল এবং সব কথা খুলে বলল। তার কথা শুনে দাদী চাঁদের মানুষকে মুক্ত করে দিতে বলল। খরগোশ তখন ফিরে এসে চাঁদের মানুষকে মুক্ত করে দিল। তবে তার আগে চাঁদের মানুষকে সে শর্ত দিল, সে যেনো খরগোশের শিকার আর চুরি না করে এবং পৃথিবীতে না আসে। চাঁদের মানুষও সেই প্রতিজ্ঞা করল। তারপর খরগোশটি আবার সেই চোখ ধাঁধানো সেই আলো দেখতে পেল। তবে কোন রকমে তার চোখ দু’হাতে ধরে নিজের চোখ বাঁচালো। একটু পরে খরগোশটি দেখলো আলোর ছটা উপরে উঠে যাচ্ছে।

সেই আলোয় খরগোশের চোখ ঝলসে গেল এবং তার ঘাড় মুখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হল। আলোর ঝলকানিতে খরগোশের চোখের মণি হয়ে গেল গোলাপি। তারপর থেকে চাঁদের মানুষটি আর পৃথিবীতে আসেনি। সে যখন পৃথিবীতে আলো দেয় তখন তার মুখে কালো দাগ দেখা যায়। যা ওই খরগোশের কাঁদার মাখার চিহ্ন।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।