দিয়া বিকেলবেলা বারান্দায় বসে ছবি আঁকছিলো। একটু বাদেই মা এক গ্লাস ম্যাঙ্গো জুস দিয়ে গেলেন।
দিয়া বিরক্ত হয়ে বললো - উফ, এই পিঁপড়াগুলো যে কি বজ্জাত। ওদের জন্য কোনো কিছুই রাখা যায় না ঘরে।
“ খবরদার, আমাদের বজ্জাত বলবে না!”
দিয়ার মনে হলো অস্পষ্ট স্বরে কেউ কথাটা বললো। এদিক ওদিক তাকিয়ে ভাবলো - নাহ্ মনের ভুলই হবে।
তারপর সে চামচ দিয়ে গ্লাসের পিঁপড়াটিকে যেই তুলতে গেলো অমনি পিঁপড়া বলে উঠলো- একদম কাছে আসবে না বলে দিচ্ছি। আমি নিজেই সরে যাচ্ছি। তুমি চামচ দিয়ে তুলে আমায় কোথায় না কোথায় ছুড়ে ফেলবে। পরে অনেকক্ষণ ধরে মাথা ঘুরবে আমার।
দিয়ার চোখ ততক্ষণে কপালে। এ কি দেখছে সে। লাল পিঁপড়াটাই তাহলে বলেছিলো, “খবরদার, আমাদের বজ্জাত বলবে না!”
দিয়া বললো - তোমরা কথা বলতে পারো?
লাল পিঁপড়া - কেন পারবো না। তোমরা মানুষগুলো নিজেদের অনেক বুদ্ধিমান মনে করো। আসলে তোমরা যে কি খারাপ আর বোকা তা আর বলতে!
কথাটা দিয়ার লাগলেও এমন আশ্চর্য ঘটনার কাছে তা কিছুই না।
দিয়া বললো - কেন আমরা খারাপ?
লাল পিঁপড়া - এই যে আমাদের ইচ্ছে করে কখনও কখনও পিষে মেরে ফেলো। আমাদের বাড়িঘর ভেঙে দাও। তোমাদের যেমন পরিবার-প্রিয়জন আছে। আমাদেরও তাই। পরিবার হারানোর কষ্ট যে কী তা আমরা জানি। প্রতিনিয়তই কাউকে না কাউকে হারাতে হয় আমাদের।
দিয়া একটু রেগেই বললো- আর তোমরা যে হুটহাট কামড়ে দাও তা বুঝি কিছু না? কোথায় কালো পিঁপড়ারা তো কখনও কামড় দেয় না।
লাল পিঁপড়া - এজন্যই তো বললাম তোমাদের বুদ্ধিসুদ্ধি বলে কিছু নেই। তোমরা মানুষরা বড় তুলনা করো। আচ্ছা সবাই কি এক বলো? তোমাদের মানুষের মধ্যে কি সবাই ফর্সা বা কালো? সবাই কি এক খাবার খেতে ভালোবাসো? কালো পিঁপড়াদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হলো ওদের উচ্ছেদ করলে, মেরে ফেললে, ওদের ওপর ওষুধ স্প্রে করলে ওরা প্রতিবাদ করে না। কিন্তু আমরা করি। অবশ্য পৃথিবীতে প্রতিবাদীরা বরাবরই অপ্রিয়।
দিয়া - হুম ভালোই বলেছো লাল পিঁপড়া। কথা ঠিক। আচ্ছা তোমার নাম কি?
লাল পিঁপড়া - আমার নাম ঙিংচিং।
দিয়া অবাক হয়ে বললো - এ আবার কেমন নাম? এটা কোনো নাম হলো? ব্যাকরণের ঠিক নেই।
লাল পিঁপড়া- উফ অসহ্য! তোমরা মানুষগুলো দুনিয়াটা একাই চালাতে চাও। তোমাদের যেমন - অ আ ক খ আছে। আমাদেরও নিজস্ব বর্ণমালা আছে। এর নাম পিপলুমালা। সেই নিয়মেই আমাদের সব লেখাপড়া, নামধাম।
দিয়া হেসে গড়াগড়ি খেতে খেতে বললো - বাহ্ ঙিংচিং, তুমি তো বেশ মিষ্টি।
লাল পিঁপড়া - চিনিই তো প্রধান খাবার। মিষ্টি তো হবোই।
দিয়া – আচ্ছা, তোমরা আর কি খেতে ভালোবাসো?
লাল পিঁপড়া - এই ধরো, যখন কোনো তেলাপোকা মরে যায় তখন আমরা খুব আনন্দে থাকি। কিন্তু আবার অনেক দুশ্চিন্তাও হয়। কারণ এত বড় পোকাটা বহন করে এতোদূর নিয়ে যাওয়া আবার গুদামঘরে ঢোকানো অনেক কষ্ট।
দিয়া – আচ্ছা। অনেকে বলে লাল পিঁপড়া নাকি হিন্দু পিঁপড়া। এটা কি সত্যি?
লাল পিঁপড়া - এটা তোমাদের মনগড়া। হিন্দু-মুসলিম বিরোধ চিন্তা থেকেই এটা তোমরা বানিয়েছো। তোমরা একটি সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়কে আলাদা আর ক্ষতিকর মনে করো। এটা ঠিক না। আমরা সবাই নিজেদের পিঁপড়া বলেই মানি। কে কালো পিঁপড়া বা কে লাল পিঁপড়া সেই বিরোধে যাই না। কিন্তু তোমরা শ্রেণী, ধর্ম, বর্ণ আর জাতির বিরোধে যাও। কিন্তু তোমাদের সবার পরিচয় যে মানুষ তা তোমরা মানতে চাও না। তাহলে এ কথা অাসতো না।
দিয়া অবাক হয়ে ভাবলো, একরত্তি লাল পিঁপড়া কত কিই না জানে।
লাল পিঁপড়া বললো - এবার যাই। অনেক কথা বললাম। মহারানী সময় নষ্ট করা একদমই পছন্দ করেন না। ওহ্ হ্যা, অনুমতি ছাড়াই তোমার জুসে চুমুক দিয়েছি। দুঃখিত।
দিয়া বললো - না না, সেকি কথা! অাজ তুমি আমায় অনেক কিছু শেখালে ঙিংচি। সারাজীবন মনে থাকবে তোমাকে আমার। তুমিও আমাকে ক্ষমা করো। আমিও যে তোমাকে না বুঝে বকেছি।
লাল পিঁপড়া– ও কিছু না, আমরা কষ্ট করার মানসিকতা আর ক্ষমাশীল হয়েই জন্ম নেই।
একথা বলে লাল পিঁপড়া উল্টো ঘুরে একটা চিনির দানা মুখে নিয়ে হুড়হুড়িয়ে চলে গেলো।
দিয়া মুচকি হেসে ফের ছবি আঁকতে বসলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৫
এসএমএন/এএ