এক ছিলো হরিণ। তার মাথায় ছিলো খুব সুন্দর শাখাওয়ালা শিং।
ভাবতে ভাবতেই হরিণ ঠিক করলো, থাকার জন্য একটি ঘর বানাবে। থাকার উপযুক্ত জায়গার খোঁজে সে পাহাড়, উপতক্যা, সমস্ত ঢালু ও সমতল জায়গা চষে বেড়ালো। অনেক খুঁজে হরিণ তার পছন্দসই জায়গা পেলো। জায়গাটি বেশি উঁচুও নয় আবার নিচুও নয়। নদীর কাছাকাছি।
বলা যায়, জায়গাটি থাকার জন্য মন্দ নয়। হরিণ জায়গাটি পরিষ্কারের কাছে লেগে পড়লো। কাজ করতে করতে সন্ধ্যা নেমে এলো। হরিণ ভাবলো, কাজ কিছুটা এগিয়েছে। বাকিটা সকালে করা যাবে। সে বনে চলে গেলো রাত কাটাতে।
এদিকে, ওই বনেই ছিল এক বাঘ। আকারে বেশ মোটাসোটা। ধাঁরালো দাঁত, নখ আর জ্বলজ্বলে হিংস্র চোখ। বাঘেরও হরিণের মতো একই হাল। থাকার মতো ঘর নেই। সেদিন বাঘও ঘর বানানোর উপযুক্ত জায়গার খোঁজে পাহাড়, উপতক্যা, সমস্ত ঢালু ও সমতল জায়গা চষে বেড়ালো। অনেক খুঁজে পছন্দসই একটি জায়গা পেলো বাঘ। জায়গাটি বেশি উঁচুও নয় আবার নিচুও নয়। নদীর কাছাকাছি। বলা যায়, থাকার জন্য মন্দ নয়।
ততক্ষণে রাত নেমে গেছে। বাঘ ঘুরে ঘুরে চারপাশটা দেখে নিলো। খুশিমনে সে বললো, ঘর এখানেই বানাবো। জায়গাটি এখন থেকে আমার দখলে। জায়গাটি দেখি মোটামুটি তৈরি করাই রয়েছে। খুব একটা পরিষ্কার করতে হবে না। এই বলে সে পুরোটা একবার ঝাড়ু দিলো।
কিন্তু বাঘ তো আর জানে না হরিণ নিজের ঘর বানানোর জন্য সারাদিন ধরে জায়গাটি পরিষ্কার করেছে। যাই হোক, দিনের প্রথম আলো দেখা দিতেই বাঘ চলে গেলো। ভাবলো রাতে ফিরে বাকি কাজ সারবে।
এদিকে, সকালবেলা তাড়াতাড়ি একই জায়গায় এলো হরিণ। সে তার ঘর তৈরির বাকি কাজ শেষ করবে আজ। হরিণ দেখলো, চারপাশ গতকালের তুলনায় আরও পরিষ্কার লাগছে। সে ভাবলো, কেউ বুঝি তার কাজে সাহায্য করেছে। জায়গাটি ঝাড়ু দিয়ে রেখেছে।
হরিণ মনে মনে বললো, জায়গাটি আমার জন্য তৈরিই রয়েছে। এখন শুধু বাকি ঘর বানানো!
দ্বিগুণ উৎসাহে হরিণ কাজ শুরু করলো। সন্ধ্যার মধ্যে তৈরি হয়ে গেলো ঘরের ভিত্তি। ক্লান্ত হরিণ রাত পার করতে বনে চলে গেলো।
হরিণ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই এলো বাঘ। হরিণের তৈরি করা ভিত্তির ওপর চোখ পড়তেই বাঘ বললো, হুম! কেউ নিশ্চই বুঝেছে, আমি এখানে ঘর বানাবো। তাই নিজ থেকেই আমাকে সাহায্য করছে। যাক ভালোই হলো কাজ এগিয়েছে! এবার আমি দেয়ালগুলো তুলে ফেলি!
বাঘ নেমে পড়লো দেয়াল তৈরির কাজে। ঘরের মাঝে কেটে নিলো এক বিশাল দরজা। আর দু’পাশে দিলো দু’টো ছোট ছোট জানালা। রাতভর ঘরের দেয়াল তৈরির কাজ শেষ করে ভোরবেলা বাঘ চলে গেলো।
সকালবেলা হরিণ এসে তো অবাক! ঘর যে প্রায় তৈরি হয়েই রয়েছে। সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার কাছে মনে হলো, এটি সত্যি নয়, এ যেনো স্বপ্ন। সে দেখলো, ঘরের প্রতিটি দেয়ালই পরিপূর্ণ, মাঝে এক বিশাল দরজা। তবে জানালাগুলো আকারে খুবই ছোট।
এবার হরিণ পুরোপুরি নিশ্চিত। কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী তার অগোচরে তাকে ঘর বানাতে সাহায্য করছে। হরিণ ঘরের ছাদ দেওয়ার কাজ শুরু করলো। শুকনো ঘাস যোগাড় করে ঘরের ছাদ বানালো। সন্ধ্যার আগেই তার ঘর বানানো হয়ে গেলো।
হরিণ এবার ভীষণ খুশি। সে উল্লাসিত হয়ে বললো, আজ রাতে আমার বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এখন থেকে আমি নিজের ঘরেই ঘুমোতে পারবো। এটি আমার ঘর!
সে ঘরের এক কোণায় বিছানা পেতে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো। এরপর? রাতে বাঘ এলো তার ঘরের বাকি কাজটুকু সারতে। যখনই তার চোখ গেলো বাড়ির ছাদে, সে হতভম্ব হয়ে পড়লো। সে দেখলো, ঘরের ওপর ছাদ দেওয়া। পরিপূর্ণ একটি বাড়ি।
বাঘ মনে মনে বললো, নিশ্চয়ই কেউ না কেউ আমাকে সাহায্য করছে। সে খুশি হয়ে ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। বাঘ দেখলো, ঘরের কোণায় এক হরিণ গভীরভাবে ঘুমোচ্ছে।
দেখে বাঘ তো গেলো রেগে। হংকার ছেড়ে বললো, কে তুমি? আমার বাড়িতে তুমি কী করছো?
হরিণ ধড়ফড় করে উঠে পাল্টা প্রশ্ন করলো, আগে বলো তুমি কে? তুমি আমার বাড়িতে কী করছো?
বাঘ- এটি তোমার বাড়ি না! এটি আমার বাড়ি। আমি নিজে এ ঘর তৈরি করেছি।
হরিণ- মোটেও না! এ আমার আমি। আমি নিজে বানিয়েছি।
বাঘ- বাড়ি তৈরির সময় জায়গাটা আমি পরিষ্কার করেছি। আমি দেয়াল, দরজা আর জানালা বানিয়েছি।
তখন হরিণ বললো- আমি জায়গাটি পেয়ে শুরুতেই পরিষ্কার করেছি। ভিত্তি স্থাপন করেছি, বাড়ির ছাদ দিয়েছি।
বাঘ আর হরিণ সারারাত বাড়ির মালিকানা নিয়ে ঝগড়া করলো। পরদিন সকালে তারা ঠিক করলো, দু’জনেই সেই বাড়িতে থাকবে ও দু’জনেই ভাগাভাগি করে কাজ করবে।
সন্ধ্যা নেমে এলে বাঘ হরিণকে বললো, আমি শিকারে যাচ্ছি। তুমি পানি এনে রাখবে আর কাঠ এনে আগুন জ্বলানোর ব্যবস্থা করবে।
বাঘ শিকারে গেলে হরিণ পানির আনলো আর আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করলো। অনেক রাতে বাঘ ফিরলো। শিকার করে আনলো মস্ত এক হরিণ। বাঘের কাণ্ড দেখে সে রাতে হরিণ কিছু খেতে পারলো না। সারারাত হরিণের দু’চোখের পাতা এক হলো না।
পরেরদিন হরিণ বাঘকে বললো, আমি শিকারে যাচ্ছি। আমি ফেরার আগেই তুমি পানি এনে রাখবে আর কাঠ এনে আগুন জ্বলানোর ব্যবস্থা করবে।
বাঘ পানি আর আগুনের ব্যবস্থা করলো। সন্ধ্যাবেলা হরিণ এক বাঘ শিকার করে নিয়ে এলো।
হরিণ বললো, আমি খুবই ক্ষুধার্ত। চলো একসঙ্গে খাওয়া যাক। হরিণের কাণ্ড দেখে বাঘের বুক কেঁপে উঠলো। খাওয়া তো দূরে থাক বাঘের মাথায় ওলটপালট চিন্তা ঘুরতে লাগলো।
সে রাতে বাঘ আর হরিণ কারও চোখেই ঘুম এলো না। বাঘ ভাবলো, সে ঘুমিয়ে পড়লে বুঝি হরিণ তাকে মেরে ফেলবে। অন্যদিকে, হরিণ ভাবলো, সে ঘুমিয়ে পড়লে বাঘ তার ওপর হামলা করবে। এভাবেই রাত পার হলো দু’জনের।
সকালবেলা হরিণ তার জায়গায় বসে লম্বা হয়ে আড়মোড়া দেওয়ার সময় মেঝেতে তার শিং ঘষা লেগে বিকট শব্দ হলো। তাতে বাঘ ভাবলো, এই বুঝি হরিণ তার দিকে ছুটে আসছে। যেই ভাবা সেই কাজ। বাঘ ছুটে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো আর যত দ্রুত সম্ভব দৌড়ে পালালো বাড়ি থেকে অনেক দূরে। যত দূর পর্যন্ত বাড়ি না আড়াল হয় বাঘ দৌড়াতে লাগলো।
এদিকে হরিণেরও একই দশা। হরিণ ভাবলো, বাঘ বুঝি আশেপাশেই ঘাপটি মেরে রয়েছে তাকে কব্জা করতে। হরিণ চারপাশ দেখে নিয়ে দিলো ভোঁ দৌড়। যত দূর পর্যন্ত বাড়ি না আড়াল হয় হরিণ দৌড়াতে লাগলো। সেই থেকে হরিণ আজও বাঘের ভয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৫
এসএমএন/এসএস
** ব্যাঙ ও ঘাসফড়িংয়ের বন্ধুত্ব
** বাদুড় কেন রাতে ওড়ে
** সূর্য ও চাঁদ আকাশে থাকে কেন
** যা হয়, ভালোর জন্যই হয়
** রাত এলো যেমন করে
** বিড়াল কেন ইঁদুর মারে