ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ১৩)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৫
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ১৩)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।




পর্ব ১২ পড়তে ক্লিক করো

আট. পাহাড়ে পাহাড়ে খোঁজা

রম পেরিয়ে যায় এবং শরৎ আসে। শ্যাডো বড় হয়ে সত্যিকার একটা কুকুরে পরিণত হয়। জনি তাকে নিয়ে খুবই গর্বিত, এবং রাফে, টিঙ্কার আর ড্যান্ডিও এখন ওকে মাটিতে ফেলে গড়াগড়ি খাবার আগে অন্তত দুবার ভাবে। বুড়ো বব ওকে খুব একটা পাত্তা দেয় না—তবে ইদানীং সে কোনো কুকুরকেই খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না!

পাহাড়ের ওপর দৌড়ঝাঁপ করেই শ্যাডোর বেশির ভাগ সময় কাটে। ওদের প্রতিটা ইঞ্চি সে জানতে চায়, কারণ টিঙ্কার তাকে বলেছে এই একটা জিনিস সব শিপ-ডগদেরই নখদর্পণে থাকা উচিত—নিজের এলাকার প্রতিটা পদক্ষেপ তাদের জানা থাকা দরকার।

‘তখন তোমাকে ভেড়াদের এখানে, সেখানে বা যেকোন জায়গায় নিয়ে যেতে বললে, সব সময়ই তোমার নির্ভুলভাবে জানা থাকবে কোথায় যেতে হবে এবং সেখানে যাবার সহজ পথ কোনটি,’ রাফে বলে। ‘পাশের খামারের এক কুকুর একবার যা করেছিল সেটা কখনোই করতে যেও না! ওকে বলা হয়েছিল একটা পালকে পাশের পাহাড়ে নিয়ে যেতে—আর পথ চেনা না থাকায়, সে ওদের নিয়ে টানা দশমাইল হাঁটে, এবং পাহাড়ে পৌঁছার পর আতঙ্কে ভেড়াগুলোর আধমরা অবস্থা। ’



‘সব ওখানে আছে, জিম?’ সে চেঁচিয়ে ওঠে।
‘বয়স্ক ভেড়ী আর দুটা ছোট্ট শাবক পাওয়া যাচ্ছে না,’ মেষপালক জবাব দেয়। ‘ওই ভেড়ীটা সব সময়ই পথ ভুল করে। হয়ত বাচ্চাদের নিয়ে পাহাড়ের ওপর দিয়ে পাশের উপত্যকায় চলে গেছে। ঠিক আছে—ওকে ফিরিয়ে আনতে এখন খুব দেরি হয়ে গেছে। ’
‘একটা কুকুর কি যেতে পারে না?’ কৃষক বলে। ‘আমি কোনো ভেড়া হারাতে চাই না, জিম। ববকে পাঠাও। যেখানেই যাক না কেন, সে তোমার ভেড়া খোঁজায় খুবই দক্ষ



খুবশীঘ্র প্রতিটা মাঠ, প্রতিটা উপত্যকা, প্রতিটা পাহাড়, সংকীর্ণ সব গিরিপথ, সমস্ত শিলাখণ্ড শ্যাডোর চেনা হয়ে যায়। পাশের পাহাড়ের গুহাগুলোও সে চিনে ফেলে এবং প্রতিটার ভেতর সে যাতায়াত শুরু করে। তার শাণিত কুকুর-মনের গভীরে সব জ্ঞান সে জমা করে রাখে।

দেখতে দেখতে শীত আসে। পাহাড়ের ওপর খুব ঠাণ্ডা এবং অনেক আগেভাগেই বরফ পড়তে শুরু করে। বুড়ো মেষপালক আশায় থাকে বড়দিনের আগেই তার ভেড়াগুলো বাচ্চা দেবে এবং সে তার দো-আঁশলা শিপ-ডগ ববের সঙ্গে নিজের কুঁড়েতে থাকতে শুরু করে। রাফে, টিঙ্কার, ড্যান্ডি, এবং শ্যাডো প্রতিদিন ববকে দেখতে যায়, এবং পাহাড়ের ওপর ভয়ানক শীতের মাঝে থাকতে দেখে কুকুরটির জন্য ওদের খুব মায়া হয়।

‘আমাদের গরম কুকুরের ঘর আছে,’ ওরা বলে। ‘এখানে তোমাকে বাইরে ভেড়াদের সঙ্গে ঘুমাতে হচ্ছে। ’
‘তোমাদের দয়া আমার পেছনে নষ্ট না করলেও চলবে,’ বুড়ো বব ঘড়ঘড় স্বরে বলে। ‘সারা জীবনই আমি আমার মেষপালকের সঙ্গে পাহাড়ের ওপর থেকেছি। তোমাদের মতো আরামপ্রিয় জীবন আমার সহ্য হবে না। এবং খোঁয়াড়ে সদ্য জন্ম নেয়া মেষশাবকের অল্প স্বল্প ভ্যা ভ্যা শব্দ আমার খুব পছন্দের। ’
‘ওখানে কি আছে কোনো বাচ্চা?’ শ্যাডো জিজ্ঞেস করে।
‘দুটা,’ বব বলে। ‘এসো, ওদের দেখবে। ’ সে চারটি কুকুরকে নিয়ে ছোট্ট একটা খোঁয়াড়ের কাছে যায়। ভেতরে বড় একটা পশমি মা-ভেড়া শুয়ে আছে এবং দুটা ক্ষুদে শাবক ওর গায়ে নাক ঘষছে, শরীর অনুপাতে ওদের পাগুলো খুব বড় বলে মনে হচ্ছিল।

শ্যাডো খোঁয়াড়ের ভেতর ওদের ঘ্রাণ নেয়। সেটা একটা নতুন ধরনের ভেড়ার গন্ধ—একেবারে তরতাজা। গন্ধটা ওর পছন্দ। সব ঘ্রাণই শ্যাডোর ভালো লাগে। তার নাক, তার চোখ আর কানের চেয়েও বেশি সচকিত। ঝোপের পাশ দিয়ে ছুটে যাবার সময় এই নাকটা তাকে বলে দেয়, সকালবেলা এপথ দিয়ে একটা খরগোশ দৌড়ে গেছে—হাতের কাছেই একটা ইঁদুর রয়েছে—নদী তীরে কাছাকাছি কোথাও গর্তের ভেতর একটা সজারু ঘাপটি মেরে আছে—সেই অচেনা তিনটে কুকুর ওপথ ধরে হেঁটে গেছে—এবং সকালবেলায় ঝোপের তলায় পাখিরা সব লাফালাফি আর হাঁটাহাঁটি করেছে! আহ্, শ্যাডোর মতো একটা নাক থাকা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার!

খাঁচার ভেতর আরো অনেক নতুন নতুন শাবক জন্ম নিতে থাকে; বা টলমলে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে বেড়াতে শুরু করে। মেষ পালক খুব খুশি কারণ একটা শাবকও মারা যায় না। সবগুলোই শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যবান। অসংখ্য নতুন ভেড়া মানেই তার খামারের জন্য আরো বেশি টাকা।

একসময় চারপাশ পরিষ্কার হয়ে আসে, বরফ গলে যায়। কৃষক ভেড়াগুলোকে পাশের পাহাড়ে নিয়ে যাবার জন্য কুকুরদের বলে, যেখানে ভালো মতো ঘাস বেড়ে উঠেছে। রাফে, টিঙ্কার, ড্যান্ডি, বব আর শ্যাডো যাত্রা শুরু করে, জনিও হাঁটার আগ্রহে ওদের পিছু নেয়।

পাশের পাহাড়ে ঘাসের কাছে পৌঁছাতে পেরে ভেড়ারা খুশি হয়। জায়গাটার ঘাস সবসময়ই ভালো। পাহাড়টা ঢালু এবং জায়গায় জায়গায় পাথুরে, তবে এর চাপড়াগুলো মিঠা এবং স্বাদে ভরপুর। শিগগিরই পুরো পালটা জায়গাটা জুড়ে চড়ে বেড়ায় এবং শান্তভাবে ঘাস খেতে থাকে, ছোট ছোট বাচ্চাগুলো তাদের পাশে মনের আনন্দে লাফায়।

কিন্তু দুদিন বাদে আকাশে এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কেমন ভারী আর বিষাদময় দেখায় আকাশটাকে।

‘মনে হচ্ছে ওটা বুঝি এখনই আমাদের ওপর ভেঙ্গে পড়বে!’ জনি তার বাবাকে বলে। ‘আবারও কি তুষার পড়বে?’
‘হুম,’ উদ্বেগের সঙ্গে কৃষক বলে। ‘এবং মনে হচ্ছে এবার আরো বেশি করে তুষার ঝরবে। আমার মনে হয় ভালো হবে যদি ভেড়াগুলোকে নিরাপদে আমাদের নিজেদের পাহাড়ে নিয়ে যাই। ওখানে ওদের দরকার হলে খোঁয়াড়ে রাখা যাবে। ’
পাঁচটি কুকুরের বিকেলটা সেদিন খুব ব্যস্ততায় কাটে। বিশাল ভেড়ার পালটা পাহাড়ের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এবং ওদের একত্র করতে সবগুলো কুকুরকে দ্রুত আর ক্ষিপ্রতার সঙ্গে কাজ করতে হয়। ক্ষুদে শাবকগুলো তাদের মায়েদের সঙ্গে দৌড়াতে গিয়ে ভয়ে ভ্যা ভ্যা করে ডাকতে শুরু করে।

প্রতিবছর মেষপালক যে পাহাড়ে নিজের জন্য কুঁড়ে প্রস্তুত করে নতুন শাবকদের জন্য অপেক্ষা করেন, পালটাকে পাহাড় থেকে নামিয়ে সেই পাহাড়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা ছাউনি ফেলার পাহাড়, আর জায়গাটা খামারের কাছেই।

কুকুরগুলো কাজ করছে এমন সময় ভারী তুষারপাত শুরু হয়। অসংখ্য হিমকণা ভাসতে ভাসতে আকাশ থেকে নেমে এসে আশপাশের ঘাসের ওপর শুয়ে পড়তে থাকে। শীঘ্র তুষার দুই থেকে তিন ইঞ্চি পুরু হয়ে আসে। আকাশটা অন্ধকারে ছেয়ে যায় এবং আধো আলোতে কাজ করাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

মেষপালক খোঁয়াড়ের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে থাকে। সে অস্থায়ী বেড়ার ব্যবস্থা করে এবং ভেড়াগুলো ভেতরে ঢোকার সময় গুনে নেয়। সবগুলো ভেড়া আর শাবক তার চেনা। তিনি খুব চমকপ্রদ একজন বয়ষ্ক লোক, যিনি বাতাসের ঘ্রাণ শুকে আবহাওয়ার পরিবর্তন বুঝতে পারেন!

আটটা বাজে এবং আরো বেশি অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আগেই সবগুলো ভেড়া আর শাবককে নিরাপদে খোঁয়াড়ে ঢোকানো হয়। কুকুরগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ওরা ভালো মতো খেয়ে দেয়ে, আগুনের কাছে শুয়ে বিশ্রাম নিতে চাইছিল। ওরা মেষপালককে উদ্দেশ্য করে লণ্ঠন দুলাতে থাকা কৃষকের দিকে তাকিয়ে থাকে।

‘সব ওখানে আছে, জিম?’ সে চেঁচিয়ে ওঠে।
‘বয়স্ক ভেড়ী আর দুটা ছোট্ট শাবক পাওয়া যাচ্ছে না,’ মেষপালক জবাব দেয়। ‘ওই ভেড়ীটা সব সময়ই পথ ভুল করে। হয়ত বাচ্চাদের নিয়ে পাহাড়ের ওপর দিয়ে পাশের উপত্যকায় চলে গেছে। ঠিক আছে—ওকে ফিরিয়ে আনতে এখন খুব দেরি হয়ে গেছে। ’
‘একটা কুকুর কি যেতে পারে না?’ কৃষক বলে। ‘আমি কোনো ভেড়া হারাতে চাই না, জিম। ববকে পাঠাও। যেখানেই যাক না কেন, সে তোমার ভেড়া খোঁজায় খুবই দক্ষ। ’

মেষপালক ববের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। তখনই কুকুরটি উঠে দাঁড়ায় এবং রাতের বেলাতেই ছুটতে শুরু করে। সে খুব ভালো করেই জানে তাকে হারিয়ে যাওয়া ভেড়াটিকে খুঁজে বের করতে হবে।

শ্যাডোও উঠে দাঁড়ায়। সে সাহায্য করতে চায়। যদিও খুব ক্লান্ত, তবু ভেড়াটিকে এবং ক্ষুদে দুটা শাবককে খুঁজে বের করতে চায়। এরাই সেই শাবক যাদের গন্ধ সে খোঁয়াড়ের ভেতর থেকে পেত। তুচ্ছ কোনো কারণে, ওরা নিশ্চয়ই ভয় পেয়েছে এবং এমন একটা ভয়ানক তুষার ঝড়ে পথ হারিয়ে ফেলেছে।

চলবে। ...

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৫

পর্ব ১৪ পড়তে ক্লিক করো

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।