ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ১৮)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ১৮)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।



পর্ব ১৭ পড়তে ক্লিক করো

হ্যারি পাহাড়ের একেবারে উঁচুতে গিয়ে ওঠে। সে চিৎকার দিয়ে বলে, ‘আমি বলছি! এদিককার গাছগুলো খুব চমৎকার। এদিক থেকে কিছু বাদাম তুললে কেমন হয়?’

কিন্তু ছেলেরা অন্যগাছ থেকে বাদাম তোলায় ব্যস্ত, তাই হ্যারিও ওদের সঙ্গে যোগ দিতে এগিয়ে আসে। জনি মজার একটা কাজ করে। উঁচু ডাল থেকে বাদাম পাড়ার জন্য ওর সঙ্গে কোনো লাঠি নেই—তাই সে বাইসাইকেলটা এনে, একটা বাদাম গাছের সঙ্গে ঠেস দিয়ে রাখে, এবং সেটার সিটের ওপর দাঁড়িয়ে মাথার ওপর বড় একটা ঝাঁক থেকে বাদাম পাড়তে থাকে।



পাহাড়ের পাশটা খুব ঢালু, এবং ওখানকার গাছগুলো থেকে কেউ সাহস করে বাদাম পাড়ার ঝুঁকি নেয় না। তাই সেখাকার ডালে ডালে শত শত বাদাম ঝুলছে। তাকে বলা হয়েছিল, পাহাড়ের ঢাল থেকে বাদাম না তুলতে, কথাটা জনি একেবারে ভুলেই যায়, তার ঝুড়িটা অঢেল বাদামে ভরে উঠেছে, দৃশ্যটা কল্পনা করে আনন্দে জনির চোখ জ্বল জ্বল করতে থাকে



সবগুলো পাড়া শেষ হলে সে দেখতে পায়, সাইকেলটাকে গাছের তলায় রেখে একেবারে পাহাড়ের ওপর উঠে এসেছে। কেবল উপর থেকে পাহাড়ের পাশটা ভালো করে দেখতে চেষ্টা করে। এবং সত্যি সত্যি সেখানে যাবার পর, হ্যারির দেখা গাছগুলো খুঁজে বের করে। এত বেশি বাদামে বোঝাই যে ডালগুলো একেবারে মাটির ওপর নুয়ে পড়ে আছে। পাহাড়ের পাশটা খুব ঢালু, এবং ওখানকার গাছগুলো থেকে কেউ সাহস করে বাদাম পাড়ার ঝুঁকি নেয় না। তাই সেখাকার ডালে ডালে শত শত বাদাম ঝুলছে।

তাকে বলা হয়েছিল, পাহাড়ের ঢাল থেকে বাদাম না তুলতে, কথাটা জনি একেবারে ভুলেই যায়, তার ঝুড়িটা অঢেল বাদামে ভরে উঠেছে, দৃশ্যটা কল্পনা করে আনন্দে জনির চোখ জ্বল জ্বল করতে থাকে। সে হেইজল তরুগুচ্ছের দিককার পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করে।

পাহাড়ের মাটি আলগা। জনি বেয়ে ওঠার সময় গড়িয়ে নিচের দিকে পাথর পড়তে থাকে। এরপর সেও পিছলে পড়ে এবং একগোছা ঘাস মুঠো করে ধরে। কিন্তু ঘাসটা তাকে ধরে রাখার মতো যথেষ্ট মজবুত ছিল না, এবং শেকড় সুদ্ধ উপড়ে আসে। জনি পাহাড়ের পাথর আর শিলাখণ্ডের সঙ্গে ঘষা খেতে খেতে, মাথা সমান উঁচু হতে মাটিতে আছড়ে পড়ে, গাছ আর ঝোঁপ আকড়ে ধরবার হাজারটা চেষ্টা সফল হয় না।

দুমড়ে মুচড়ে নিচে পড়ার পর, তার মাথা একটা পাথরে এসে লাগে এবং চোখ বুঁজে, চুপচাপ শুয়ে থাকে। প্রচণ্ড ভয় পাবার কারণে সে চিৎকার করে না, তাই ওর পড়ে যাবার কথা অন্য ছেলেরা জানতে পারে না।

হ্যারি এবং অন্যরা তখন একটানা বাদাম তুলছে। পাহাড়ের ওপর পাশে ছেলেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, এবং জনি তাদের মাঝে নেই তা কেউই খেয়াল করে না। সবাই ভাবে ওদের মাঝে কোথাও না কোথাও সে আছে। কেবল বাড়ি ফিরে যাবার সময় ওরা বুঝতে পারে জনি তাদের মাঝে নেই।

‘চারটা বাজে। ’ হ্যারি বলে, ‘এখন বাড়ির পথে রওনা হবার উপযুক্ত সময়। চলো সাইকেলগুলো নিয়ে আসা যাক। যে করেই হোক, সম্ভবত আমাদের ঝুড়ি বা পকেটের কোনোটাতেই আর একটাও বাদাম আটবে না!’

সবার ঝুড়ি এবং পকেট পর্যন্ত বাদামে টইটুম্বুর। বিকেলের এই কাজে তারা খুবই খুশি। ওরা বাইসাইকেলগুলো তুলে নেয়, এবং প্রায় লাফিয়ে চড়ে বসে, তখনই হ্যারি অবাক হয়ে চারদিকে দেখতে শুরু করে।

‘জনি কোথায়?’ সে বলে।

জনি নিশ্চিত ওদের মাঝে নেই। হ্যারি চিৎকার করে ডাকে—‘জনি! জনি! আমরা এখন যাচ্ছি! তাড়াতাড়ি এসো!’

কোনো জবাব আসে না। এরপর রনি অবাক হয়ে বলে। ‘ও নিশ্চয়ই বাড়ি ফিরে গেছে, কারণ ওর বাইকটা এখানে নেই! শুধু আমাদের বাইকগুলো আছে—জনিরটা নেই। ও নিশ্চয়ই আমাদের ছেড়ে চুপি চুপি কেটে পড়েছে। ’

‘নিশ্চই তাই হবে। ’ হ্যারি বলে। ‘ভালো, কী মজাই না করল! ওর অপেক্ষা করা উচিত ছিল! এসো। আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হবে। ’

ছেলেরা শিস বাজাতে বাজাতে হাসি তামাশা করতে করতে সেখান থেকে চলে আসে। ওরা জানতেই পারে না জনির বাইকটা এখন একটা হেইজল গাছের নিচে রাখা আছে, যেখানে সে সেটা ফেলে গেছে—এবং সে নিজেও এখন উঁচুপাহাড়ের তলায় চোখ বুঁজে শুয়ে আছে। তাকে নিয়ে কেউ একেবারেই চিন্তিত নয়।

কেউই না? হ্যাঁ—ভয়ানক দুশ্চিন্তা করার একজন অন্তত রয়েছে! আর সেটা হলো শ্যাডো। শ্যাডো জনিকে এতটাই ভালোবাসে যে, তার কিছু একটা বিপদ হলে মনে মনে সে ঠিকই টের পায়। এবং অসহায় শ্যাডো খামারের পাহাড়ি অংশে অস্বস্তির নিয়ে বসে বসে, একটা ছেলের অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকে, কিন্তু সে ফিরে আসে না। এখন কী করা যায়?

পর্ব ১৯ পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।