ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২২)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২২)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।



পর্ব ২১ পড়তে ক্লিক করো

‘হ্যালো!’ অবাক হয়ে, সে বলে। ‘এসব কী হচ্ছে? তোমরা কুকুরেরা আবার কেন এখানে এলে?’

রাফে এবং শ্যাডো টমের সামনে গিয়ে বসে। ড্যান্ডি বসে পেছনে। টিঙ্কার এবং বব বসে বাকি দুপাশে। ওরা কেউ তাদের লেজ নাড়ে না—তবে কেউ দাঁতও বের করে না। অন্তত এখনই এর কোনো প্রয়োজন পড়ছে না!

‘ঠিক আছে, আমি আগে কখনো কুকুরদের এরকম অদ্ভুত আচরণ দেখিনি,’ হতভম্ব হয়ে টম বলে। ‘তোমরা কী চাও? তোমাদের জন্য আমার করার কিছুই নেই!’

ছেলেটি কয়েক কদম হাঁটে, কিন্তু শ্যাডোর একটা গর্জন তাকে থামিয়ে দেয়। সে প্রকাণ্ড শিপ-ডগটির দিকে তাকায়।



কুকুরগুলো টমের দিকে সামান্য এগিয়ে আসে। টম ওদের দিকে হতাশায় তাকিয়ে থাকে। ভীষণ ভয়ঙ্কর! এমন ঘটনা তার জীবনে আগে কখনো ঘটেনি এবং তার জানা নেই এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে কী করতে হবে। তাই হঠাৎই সে প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে ওঠে: ‘বাঁচাও! বাঁচাও!’



‘এবার এদিকে তাকাও, আমাকে একটু যেতে দাও,’ সে বলে। ‘এখানে এসে এমন করার কোনো অধিকার তোমার নেই। জীবনে আমি কখনোই তোমাদের কাউকে কোনো আঘাত দেইনি! আমাকে যেতে দাও!’

শ্যাডো আবারও গর্জে ওঠে। টম ডানে যেতে চেষ্টা করে, কিন্তু বব ভীষণ রকম গর্জে ওঠে তাই সে এক পাও নড়ার সাহস করে না। এরপর ছেলেটি টিঙ্কারের পাশ গলে বেরোবার চেষ্টা করে, কিন্তু বিশাল শিপ-ডগটি সতর্ক করার ভঙ্গিতে এমন ভয়ানকভাবে দাঁত বের করে যে সে আর নড়ার সাহস করে না।

কুকুরগুলো টমের দিকে সামান্য এগিয়ে আসে। টম ওদের দিকে হতাশায় তাকিয়ে থাকে। ভীষণ ভয়ঙ্কর! এমন ঘটনা তার জীবনে আগে কখনো ঘটেনি এবং তার জানা নেই এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে কী করতে হবে। তাই হঠাৎই সে প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে ওঠে:

‘বাঁচাও! বাঁচাও!’

কিন্তু তার চিৎকার শুনবার মতো সেখানে কেউই ছিল না। সে চিৎকার করার সঙ্গে সঙ্গে কুকুরগুলোও প্রচণ্ড হিংস্রতায় গর্জন করে ওঠে, তাই সে আবারও চিৎকার করার কথা চিন্তাও করে না। আরো একবার সে কুকুরের বৃত্তটা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করে, কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয় না। সে কামড় খাবার ভয়ে তটস্ত হয়ে পড়ে।

তাই শেষে টম বাধ্য হয়ে বসে পড়ে এবং কুকুরদের চলে যাবার অপেক্ষায় থাকে। একটা বাজলে পর রাখালের শিস শুনতে পেয়ে ওরা সেখান থেকে চলে যায়।

টম ক্রুদ্ধ আর ক্ষুধার্ত অবস্থায় খামারের দিকে পথ চলতে শুরু করে। কৃষকের বউ খুব রাগ করে। সে খাবার দাবার সব সরিয়ে ঘরদোর পরিষ্কার করে রেখেছে। টমের জন্য কিছুই অবশিষ্ট নেই।

‘তোমাকে না খেয়েই চলে যেতে হবে,’ সে বলে। ‘তুমি বোধ হয় বুঝতে পারোনি আমি টানা একঘণ্টা তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি, কি করিনি?’

টম তাকে কুকুরদের কথা বলে। কৃষকের বউ কথাটা শুনে হাসে। ‘এধরনের অদ্ভুত একটা গল্প আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারি না,’ সে বলে। ‘কালকে থেকে ঠিক সময় খেতে আসবে—তা না হলে তোমার জন্য কোনো খাবার রাখা হবে না!’

কিন্তু পরদিনও টম ঠিক সময়ে খেতে আসতে পারে না-কারণ শ্যাডো ওর ওপর সেই একই কৌশল খাটায়। এবং এবার জনি ওদের দেখতে পায়! সে ঝোপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এবং প্রচণ্ড অবাক হয়ে সে দেখে, টম কুকুরের একটা বৃত্তের মাঝে ক্ষুব্ধ আর ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘেরাও হয়ে বসে রয়েছে।

‘কী হয়েছে?’ বেড়া টপকিয়ে নামতে নামতে জনি চেঁচিয়ে ওঠে। ’ শ্যাডো! রাফে! ড্যান্ডি! তোমরা যা করছো ভেবে চিন্তে করছো তো?’

এবং ঠিক তখন হঠাৎই ছেলেটা বুঝতে পারে! শ্যাডো টমকে খাবার খেতে দেরি করিয়ে দেবার বুদ্ধি এঁটেছে—ঠিক যেমন করে টম জনিকে স্কুলে দেরি করিয়ে দিচ্ছিল। জনি টমের দিকে তাকায়।

‘ওরা আমার কুকুর,’ সে বলে। ‘ওরা তোমার সঙ্গে দারুণ একটা চালাকি করছে। ’
‘আমি জানি,’ মুখ ভার করে টম বলে। ‘ওদের থামতে বলো। ’ ‘যতক্ষণ না তুমি আমাকে আর কখনো স্কুলে দেরি করিয়ে দেবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছো,’ জনি বলে।
‘আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করব। ’ টম বলে।
‘ঠিক আছে,’ জনি বলে। ‘তাহলে আমি ওদের থামতে বলছি না। বিদায়। ’
‘দাঁড়াও এক মিনিট—এক মিনিট!’ জনিকে নড়তে দেখে টম তাকে ডাকে। ‘আমি আবারও আমার খাবার হারাতে চাই না। আমি খুবই ক্ষুধার্ত। ’
‘ঠিক আছে, তাহলে কী করতে হবে তা তো তুমি জানোই,’ জনি বলে। ‘তুমি আমার সঙ্গে খুবই জঘন্য ব্যবহার করেছো—এবং এবার তোমাকে তার শোধ দিতে হবে। এখন আমাকে দিয়ে কুকুরদের শান্ত করাতে চাইলে, তোমাকে বারো’র নামতা ঠিক ঠিক বলতে হবে!’

তাই টম শুনতে আগ্রহী কুকুরগুলোর মাঝে উঠে দাঁড়ায় এবং বারো’র নামতা বলে। এবং বয়স পনের হলেও সে তাতে তিন তিনটে ভুল করে!

‘তোমার আবার স্কুলে যাওয়া দরকার। ’ জনি বলে। ‘এখন থেকে স্কুলে যাবার পথে আমার জন্যে আর অপেক্ষা করবে না—তাহলে আমার কুকুরগুলো আবারও তোমার কাছে আসবে!

চলে এসো শ্যাডো—এসো রাফে! এদিকে এসো ছেলেরা!’

কুকুররা ওকে ছেড়ে চলে আসে এবং একসঙ্গে দলবেঁধে ওরা সবাই খামারে ফিরে যায়। টম আর কখনো জনিকে স্কুলে যাবার পথে দেরি করিয়ে দেয় না—এবং শ্যাডোও তার এমন বুদ্ধিমত্তার কারণে তাকে অতিরিক্ত একটা চাপড় মারে।

চপর্ব ২৩ পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।