ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

তুবার স্বপ্ন‍ | শাহজাহান মোহাম্মদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৬
তুবার স্বপ্ন‍ | শাহজাহান মোহাম্মদ

তুবার মন খারাপ।
বারান্দায় ফুল বাগান করেছে।

টবে ক্যাকটাস, গোলাপ ও ডেনটাস। তার প্রিয় ফুল ডেনটাস। তুবা মুখ ভার করে বারান্দার সামনে এসে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছে, তার গাছে কোনো ফুল নেই কেন। ঝির ঝিরে বাতাস তার ঘন কালো মাথার কেশ উড়িয়ে দিয়ে যায়। মনে মনে ভাবে, কতদিন হয়ে গেলো একটি ফুলও ফুটলো না।

ডেনটাস ফুল গাছটি এনে দিয়েছে বাবা। ফুলটি দেখতে ছোট্ট। পাপড়িগুলো গোলাপি, মাঝখানে গাঢ় লাল রং। ডেনটাস ফুলের গল্প তার মায়ের কাছে শুনেছে। তার অনেক দিনের ইচ্ছা এ ফুল গাছটি বাগানে শোভা ছড়াবে। তার বন্ধু টুনটুনি, প্রজাপতি ও মৌমাছি। তারা হইচই করে হাসি মুখে ভরিয়ে দেবে সবার প্রাণ, বাগানের ফুল দেখে।

তুবা এবার পঞ্চম শ্রেণিতে, লেখাপড়ায় ভালো। রোজ স্কুল থেকে ফিরে বারান্দার বাগানের পরিচর্যা করে। ফুলের আশা নিয়ে দিন যায় ওর।
একদিন তার বেশি বেশি মন খারাপ। বারান্দার এক কোণে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এমন সময় বন্ধু টুনটুনি এসে বললো, বন্ধু তোমার কি হয়েছে? কাঁদছো কেন? তুবা বললো, বন্ধু আমার প্রিয় ফুল ডেনটাস আজও ফুটলো না। আমি রোজ কত সেবা করি তাদের। ও... এই কথা। বন্ধু তুমি মন খারাপ কোরো না। ধৈর্য ধরো। একদিন ঠিকই তোমার বাগানে ফুল ফুটবে। পাখিরা গাইবে তার স্বাধীন সুর দিয়ে। মৌমাছি তার মধু নেবে চুপি চুপি। প্রজাপতি ঘুরবে তার রঙিন পাখার রঙের বাহার নিয়ে। আবার দেখা হবে বন্ধু। এই বলে টুনটুনি ফুড়ুত করে উড়ে চলে যায়।

একটা প্রজাপতি ঘুরতে ঘুরতে এলো তার বাগানে। প্রজাপতি তার রং ছড়িয়ে বললো, বন্ধু তোমার মন খারাপ কেন? কি হয়েছে তোমার? তুবা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে দুই নয়নের পানি ডান হাতে মুছতে মুছতে বললো, আজ কতো দিন হলো বন্ধু, আমার বাগানে একটিও ফুল ফুটলো না। তাই আমার কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। প্রজাপতি বললো, ও... এই কথা। বন্ধু মন খারাপ কোরো না। সবুর করো। সবুরে মেওয়া ফলে। তুমি ধৈর্য ধরো। একদিন দেখবে তোমার বাগানে অনেক ফুল ফুটেছে। আবার দেখা হবে। এই কথা বলে প্রজাপতিও চলে যায়।

মৌমাছি ভো..ও.. ভো..ও শব্দ করে বারান্দার এক কোণায় উড়তে থাকে। দেখে গ্রিলে মাথা রেখে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তুবা। আর নীল আকাশকে বলছে, হে নীল আকাশ তুমি কি আমার কথা শুনছো? এমন সময় মৌমাছি বললো, বন্ধু আকাশ শুনতে পাচ্ছে কি না জানি না। তবে আমি শুনতে পাচ্ছি তোমার মনের কথা।

তুবা ঘুরে তাকায়। দেখে মৌমাছি তার কানের কাছে এসে বলছে, মন খারাপ কেন বন্ধু। সেই একই কথা বললো মৌমাছিকে। আরও বললো, তুমি শুধু শুধু এসেছো কেন? বাগানে তো ফুল নেই। তুমি মধু নেবে কি করে? তুমি অন্য বাগানে যাও। মৌমাছি হেসে বললো, তুমি না আমার প্রিয় বন্ধু। ফুল তো একদিন না একদিন ফুটবেই আমি জানি। তাই তোমার বাগানে আসি। দেখে যায় আমার প্রিয় বন্ধুর নিজের হাতে করা বাগানটি।

এই কথা শুনে তুবার গহিন মনটা কেমন যেন করে উঠলো। সে মৌমাছিকে বললো, বন্ধু তোমরা আমাকে এতো ভালোবাসো। এই বলে তুবা আবারো কেঁদেও হেসেই ফেলো। এমন সময় তার বড় বোন ডেকে উঠলো তুবা তুবা ওঠ ওঠ সকাল হয়ে গেছে। ওষুধ খাবি না? সময় হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি ওঠ। তুবার ঘুমটা ভেঙে যায়। বিছানায় উঠে বসে। আর ভাবে একি দেখলাম। দেখি তো আমার বাগানে ফুল ফুটেছে কি না? দুই হাতে চোখ কচলাতে কচলাতে দৌড়ে বারান্দায় যায়। দেখে সূর্যের মিষ্টি আলোয় বাগান ঝলমল করছে। টবে সত্যি সত্যি তার কাঙ্ক্ষিত ডেনটাস ফুল ফুটেছে। সঙ্গে একটি লাল টুকটুকে গোলাপও।

এই দেখে তুবা চিৎকার করে ডাকতে থাকে, এই সুবা আপু, এই ভাইয়া দেখে যা, দেখে যা আমার বাগানে কতো ফুল ফুটেছে। এদিকে মৌমাছি, প্রজাপতি ও টুনটুনি সবাই প্রাণ খুলে হই চই করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।