ঢাকা: আবারও শিশুর ওপর মিডিয়ার আঘাত এসেছে। শিশুকে নিতান্তই চোর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে সাম্প্রতিক এক বিজ্ঞাপনচিত্রে।
এতে কোমলমতিদের চরিত্র যেমন হনন করা হয়েছে, তেমনি আঘাত করা হয়েছে মর্যাদায়ও। চরম অনৈতিক ও অবমাননাকর এ কাজে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ লঙ্ঘিত হয়েছে বলেও মনে করছেন শিশু অধিকার কর্মীরা।
এর মাধ্যমে শিশুদের ভুল শিক্ষা গ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
তবে সমালোচনা যতোই থাকুক যার যার জনপ্রিয়তা পুঁজি করে শ্রেফ অর্থের লোভে শিশুকে চোর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে সংবাদপত্রে।
আর টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও ওই বিজ্ঞাপন প্রচার করে টু পাইস কামাচ্ছে।
জাতীয় প্রথম সারির কয়েকটি দৈনিকের শুক্র ও শনিবারের সংখ্যায় এ বিজ্ঞাপনটি ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে। একটি সংবাদপত্র তো তার সকল সংবাদ চারদিকে সরিয়ে দিয়ে ঠিক মাঝখানে বিজ্ঞাপনটি ছেপে জানাচ্ছে শিশুটি কমলা চোর।
বিজ্ঞাপনটির টেলিভিশন চিত্রে দেখানো হচ্ছে- বোন তার ভাই-এর পেছন পেছন চোর চোর করে চিৎকার করে ছুটছে। মেয়েটির পেছনে পেছনে ছুটছে তাদের বাবা, মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও। চোর ধরার পর সবাই জানতে পারে ভাই তার বোনের কমলা চুরি করেছে। এরপর দেখানো হয় তাদের দাদী ছেলেটিকে কান ধরে ওঠ-বস করাচ্ছেন।
কোমলমতি শিশুর অভিনয় দিয়ে চোরের চরিত্রকে এভাবেই ফুটিয়ে তুলে বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে কল্লোল ডিস্ট্রিবিউশন্স লিমিটেড নামের এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। উদ্দেশ্য বিদেশি একটি প্রডাক্টকে বিজ্ঞাপিত করা।
আর সংবাদপত্রের ভার্সনে বিজ্ঞাপনটিতে এক কন্যা শিশুকে চোর হিসেবে দেখানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব-পুলিশের হাতে কোনো সন্ত্রাসী, চোর, মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়লে যেমন বুকের ওপর তা লিখে লেবেল এঁটে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয় এ বিজ্ঞাপনটিতেও ঠিক সে কাজটি করা হয়েছে।
শিশুদের কমলা চোরের চরিত্রে উপস্থাপন করা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতেও এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে।
শিশুকে এভাবে চোর চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করায় জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ইউনিসেফ ঢাকা অফিসের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের ইন-চার্জ আরিফা এস শারমিন বিজ্ঞাপনটিকে শিশুদের জন্য ‘রীতিমতো ভয়ঙ্কর’ বলে উল্লেখ করেছেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘শিশুদের মর্যাদায় আঘাত করে এমন কিছু মিডিয়ায় প্রচার করা ঠিক নয়। মিডিয়াগুলোকে এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগী হতে হবে। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি খুবই বাজে, অনৈতিক ও ক্ষতিকর কাজ হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘শিশুদের জন্য এটি কেবল অবমাননাকরই নয়, এর মধ্য দিয়ে শিশুদের ভুল শিক্ষা গ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে। চুরি নিয়ে যে শিশুর মোটেই ধারণা ছিলো না সে শিশুর জন্য এখানে চুরি করাটাও একটি লার্নিং হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ’
ফাহমিদুল হক বলেন, ‘বিজ্ঞাপন নির্মাতা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির কাছে পণ্যটি বিক্রি করাই মূল উদ্দেশ্য। এ জন্য তারা যে কোনো কিছুই করতে প্রস্তুত। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে যো কোন উপায়ে ভোক্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করাই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, হোক তা অনৈতিক, এমনকি অসামাজিকও।
সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার বা প্রকাশকেও নিতান্তই মুনাফামুখী চিন্তা বলে মনে করেন মিডিয়া বিশ্লেষক ফাহমিদুল হক।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রাবাইয়াত হোসেন ইপসিতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মিডিয়ায় শিশুদের কখনোই চোর হিসেবে উপস্থাপন করা ঠিক নয়। এতে করে শিশুদের ব্যাপারে বড়দের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। শিশুরাও মানসিকভাবে নিজেদের ছোট মনে করতে পারে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১১