ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

এই গরমে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১১
এই গরমে

ঘরে থাকার উপায় নেই। উফ্ফ! এত্ত গরম!
ডানা ঝাপটে শরীর ঠাণ্ডা করতে চাইল মা চড়ুইটা।


ছানাদুটোর অবস্থা তো আরো খারাপ। সেই তখন থেকে চিঁ চিঁ করছে। ঠোটের সামনে খাবার নিয়েছে মা চড়ুই। খাচ্ছে না।

বড় ছানাটা বলল, এমন লাগছে কেন মা?
মা চড়ুই জানতে চাইল, কেমন লাগছে?
বড় ছানা বলতে পারল না কেমন লাগছে। শুধু বলল, সবসময় যেমন লাগে তেমন লাগছে না।
মা জানতে চাইল ছোট ছানার কাছে, তোরও কি অমন লাগছে?
ছোট ছানাও মাথা নাড়িয়ে জানাল ওরও অমন লাগছে।
মা চড়ুই বলল, আসলে গরম লাগছে। গরমটা পড়েছে বেশ। এক কাজ কর, চল সবাই মিলে গান গাই, তাহলে গরম লাগছে বলে মনে হবে না।

ব্যস। শুরু চড়ুই ছানাদের গানচর্চা।
চড়ুইদের গানচর্চায় কিন্তু মোটেই খুশি হতে পারলেন না তিয়ানার বাবা। তারও বেশ গরম লাগছে। ঘরের দরজা জানারা সব খুলে দিয়েছেন। তবু গরম যে একটু কম লাগবে তা-ও নয়, মনে হচ্ছে গরম যেন বাড়ছেই। এসময়ই যদি ঘরের ভেন্টিলেটরে বাসা বানিয়ে থাকা পাখিরা কিচ কিচ শুরু করে, কার ভালো লাগে?

তিনি চেঁচিয়ে ওঠলেন, পাখিগুলোর কিচকিচানি তো গরম আরো বাড়িয়ে দিল দেখছি।
তিয়ানা বলল, কী করবে বাবা বল, ওদেরও তো গরম লাগছে।
তিয়ানার বাবা বললেন, গরম লাগলে এমন চেঁচাতে হয় নাকি?
তিয়ানা বলল, তুমিও তো চেঁচাচ্ছ বাবা। ভাগ্যিস পাখিরা তোমার কথা বুঝতে পারেনি। বুঝতে পারলি আর এবাসায় ওরা থাকে?
তিয়ানার বাবা কিন্তু চেঁচিয়েই যাচ্ছিলেন, এ বাসায় ওদের থাকতে বলেছে কে শুনি? যে বাসায় এসি আছে সে বাসায় চলে যাক!

তিয়ানা বলল, সে বাসায় কেমন করে যাবে বাবা? যে বাসায় এসি থাকে সে বাসায় তো ভেন্টিলেটর থাকে না।
তিয়ানার বাবার রাগ কিন্তু কমছে না। একে তো গরম, তারপর পাখিদের কিচকিচানি। তারওপর মেয়েটা সঙ্গে কথায় না পারা, রাগে তার গরম আরো বেড়ে গেল। মাথার উপর এমনিতেই একটা ফ্যান ঘুরছে, এবার তিনি একটা হাতপাখা নিয়ে বাতাস করতে লাগলেন নিজেকে।

আর ওই চড়ুই পরিবারটির অবস্থা তো আরো খারাপ। ফ্যানের কোনো বাতাস ওরা পাচ্ছে না। ওদের কোনো হাতপাখাও নেই। ভেন্টিলেটরের ঘুলঘুলিটা কেমস ভ্যাবসা গরম! এখানে কোনো পাখি থাকতে পারে? তবে বর্ষায় বৃষ্টির ছাঁট ঢোকে না ওদের বাসায়। এমনকি শীতকালেও ঠাণ্ডা হাওয়া খুব একটা ঢোকে না। কাজেই এরচেয়ে ভালো বাসা আর কী হতে পারে। শুধু খুব গরম পড়লে একটু কষ্ট হয়, এই যা। সববাসায় তো আর সবদিক সমান পাওয়া যায় না।

ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে একটা চক্কর দিয়ে এল মা চড়ুই। বাইরে বেরিয়ে বেশ অবাক হলো ও। বেশ সুন্দর ঠাণ্ডা বাতাস বইছে তো! বাইরে থেকেই ছানাদের ডাক দিল মা চড়ুই, এই তোরা বাইরে আয়। দ্যাখ কী সুন্দর ঠাণ্ডা বাতাস।

বাইরে বেরিয়ে একটা টেলিফোনের তারের উপর বসল পুরো চড়ুই পরিবার। পরিবারটা তো আর অতো বড় নয়। সব মিলে তিনজন। মা চড়ুই আর দুই চড়ুই ছানা। কিন্তু এত রাতে বাইরে বেরোনোটা কি ঠিক হলো? রাতও তো কম হয়নি। পশ্চিম আকাশে তাকাল মা চড়ুই। সন্ধাতারা দেখা যাচ্ছে না। তার মানে অনেক রাত। ইস কখন যে গরম কমবে আর কখন যে একটু ঘুমোবে!

বাসার ভেতর ঢুকল মা চড়ুই। ঢুকে দেখল এবার বাসাটা ঠাণ্ডা হয়েছে কিনা। হয়নি। অথচ বাইরে কী সুন্দর ঠাণ্ডা। যদি বাইরে এমন খোলামেলা যায়গায় ঘুমোনো যেত! তাহলে নিশ্চিত ঘুম আসতো। এবং কোনো না কোনো বিড়ালের পেটেও ঢুকতে হতো! বিড়ালের পেটে ঢোকার চেয়ে ঘুলঘুলিতে থাকা অনেক ভালো। ঘুলঘুলির চেয়ে বিড়ালের পেটে নিশ্চয়ই গরম আরো বেশি।

মা চড়ুই এবার ছানাদের ডাক দিয়ে বাসায় ঢোকাল। তারপর ঘুলঘুলি থেকে মুখটা বাড়িয়ে বাতাসকে ডেকে বলল, বাতাস ভাই, বাতাস ভাই আমাদের বাসার ভিতরে আসো না কেন?

বাতাস বলল, কী যা-তা বলছিস চড়ুই। তুই তো থাকিস মানুষের বাসার ভিতরে। ওখানে তো বাতাস বানানোর যন্ত্র আছে। ঘুরে ঘুরে বাতাস বানায় সেই যন্ত্র। আর মানুষ সেই যন্ত্রের নিচে শুয়ে বসে বাতাস খায়। তোকে বুঝি ওরা বাতাস খেতে দেয় না?
চড়ুই বলল, তা হবে কেন? তবে আমার একটু বাতাসও ঢোকে না। না ওই যন্ত্রের বাতাস, না ওই বাইরের বাতাস। এই গরমে বাতাস ছাড়া কেমন করে থাকি বল?

বাতাস বলল, ঠিক আছে তোর ঘুলঘুলি দিয়েই যাবো আমি। আর সবাইকে বলে দেবো যাতে অন্তত তোর বাসা হয়ে যায়।
তারপর কী আশ্চর্য! ঠাণ্ডা বাতাসে ভরে গেল চড়ুইটার বাসা। কী সুন্দর ঝিরি ঝিরি বাতাস! বাতাস তো নয়, মনে হচ্ছে যেন বাতাসের দোলনা। বাতাসের দোলনায় দোল খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়ে মা চড়ুই আর ছানা দুটো। এক ঘুমে একেবারে ভোর রাত।

ভোর রাতেই ঘুম ভাঙে চড়ুইদের। তারপর কিছুক্ষণ গড়াগড়ি খায়। হালকা আলোর জন্য অপেক্ষা করে। যখন পূর্ব আকাশে আলোর রেখা ফুটে ওঠে, তখনই বেরিয়ে যায় বাসা থেকে।

বাসা থেকে বেরোনোর সময় একবার নিচের দিকে তাকাল মা চড়ুই। বাতাসের যন্ত্রের নিচে শুয়ে আছে মানুষ। কিন্তু ছটফট করছে। নিশ্চয়ই গরমে। এই গরমে যন্ত্রের বাতাসে আর কতটুকু ঠাণ্ডা হওয়া যায়? বাইরের বাতাসে যে শান্তি, যন্ত্রের বাতাসে সে শান্তি নেই। থাকলে আরামে ঘুমোতো মানুষ। যন্ত্রের নিচে শুয়ে থাকা মানুষদের ঘুম দেখে মনে হচ্ছে না, ওরা আরামের ঘুম দিচ্ছে। তবে অবাক হলো চড়ুই, বাইরের বাতাসকে মানুষ ঘরে ঢোকাতে পারে না? বাইরের বাতাস ঘরে ঢোকাতে পারলেই তো এই গরমে আরামে ঘুমুতে পারত। চড়ুই ভাবে, হয়ত পারে না। পারলে নিশ্চয়ই ঢোকাত। মানুষ কি আর সব পারে?

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।