ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

আটকবর (পর্ব-২) | আব্দুস সালাম

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
আটকবর (পর্ব-২) | আব্দুস সালাম ছবি: আটকবর, সংগৃহীত

সময়টা মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি। ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট। দামুড়হুদা থানাধীন সীমান্ত সংলগ্ন জপুর গ্রামে গেরিলা গ্রুপ কমান্ডার হাফিজুর রহমান জোয়ার্দারের...

আটকবর (পর্ব-১) | আব্দুস সালাম

সময়টা মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি। ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট।

দামুড়হুদা থানাধীন সীমান্ত সংলগ্ন জপুর গ্রামে গেরিলা গ্রুপ কমান্ডার হাফিজুর রহমান জোয়ার্দারের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা শেলটার ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। পাশেই ছিল নাটুদা গ্রাম। এই গ্রামে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প। ৪ আগস্ট পাকিস্তানি বাহিনীর দালাল কুবাদ খাঁ মুক্তিযোদ্ধার হাতে ধরা পড়লে তাকে মুক্তিযোদ্ধা শেলটার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫ আগস্ট কুবাদ খাঁর দুইজন সহযোগী জপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে মিথ্যা খরব দেয় যে, রাজাকাররা গ্রামে পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। রাজাকার ও পাক আর্মিদের শায়েস্তা করার জন্য হাসানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা প্রয়োজনীয় অস্ত্র নিয়ে আনুমানিক দুই কিলোমিটার দূরে বাগোয়ান এলাকায় মাঠের মধ্যে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নেয়।

এদিকে নাটুদা আর্মি ক্যাম্পের পাকিস্তানি বাহিনী পূর্ব পরিকিল্পিতভাবে কাটিং এম্বুস করে এই মাঠের আখক্ষেত এবং পাটক্ষেতে অবস্থান নেয়। এখানে পাকবাহিনির সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল সম্মুখ যুদ্ধ হয়। পাকবাহিনী আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ব্যবহার করতে থাকে। আটকা পড়েন অনেকেই। এই যুদ্ধে ৮ জন বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বেশ কয়েকজন আহত অবস্থায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

অবশ্য এ সম্মুখ যুদ্ধে অনেক পাক আর্মিও হতাহত হয়। পাক আর্মির নির্দেশে রাজাকাররা ৮ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে পাশাপাশি দু’টি গর্ত করে কবর দেয়। পরবর্তীতে এর নামাকরণ হয় ‘আটকবর’। আটজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাগণ হচ্ছেন, হাসান জামান, বাড়ি- গোকুলখালি, চুয়াডাঙ্গা। খালেদ সাইফুদ্দিন তারেক, বাড়ি- পোড়াদহ, কুষ্টিয়া। রওশন আলম, বাড়ি- আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা। আলাউল ইসলাম খোকন, বাড়ি- চুয়াডাঙ্গা শহর। আবুল কাশেম, বাড়ি- চুয়াডাঙ্গা শহর। রবিউল ইসলাম, বাড়ি- মোমিনপুর, চুয়াডাঙ্গা। কিয়ামুদ্দিন, বাড়ি- আলমডাঙ্গা। আফাজ উদ্দিন চন্দ্রবাস, বাড়ি- দামুরহুদা।

নানার কাছ থেকে আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধার শহীদ হওয়ার গল্প শুনে আনিকার চোখে জল চলে আসে। আর রাজাকারদের প্রতি তার মনে ঘৃণার জন্ম হয়। আনিকা বয়সে ছোট হলেও এইসব কুখ্যাত রাজাকারদের সে বিচার চায়। সে চায় তাদের ফাঁসি হোক। অবশেষে এই স্থান ত্যাগ করার পূর্বে নানা ও নাতনি আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করেন। এরপর তারা ‘মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রহশালা’ পরিদর্শনের জন্য আটকবরের স্থানটি ত্যাগ করলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।