কেননা চর অঞ্চলের বালুকা ভূমিতে কোনো ফসলই ভালোভাবে ফলে না। নদীর পাড় থেকেই কিছুটা উপরে ফুল মিয়ার ছাগলগুলো চরছিল।
মাঝে মাঝে ফুল মিয়ার মনে হয় তার ছাগলটা যেন একটা বাঘের ছানা। এটা বোধহয় বড় হয়ে একটা বাঘ হবে। ফুল মিয়ার বয়স সাত বছর। ও নিতান্তই একজন শিশু। সারাদিন ছাগল চরায় আর মনে মনে গুন গুন করে গান গায়। ওর বাবা গণি মিয়া। যমুনা নদীতে মাছ ধরাটাই তার পেশা। মাঝে মাঝে বাবা নদীতে বড় বড় মাছ পান। তখন সেই মাছ তিনি দড়িতে ঝুলিয়ে বাড়িতে ফুল মিয়াকে দেখাতে নিয়ে আসেন।
বাবার হাতে বড় মাছ দেখলে ওর আনন্দের আর সীমা থাকে না। প্রায় অনেকক্ষণ তাকে মাছটা নিয়ে খেলা করতে দেন বাবা। তারপর একসময় বলেন, ‘কই রে ফুল বাজান, এই বেলা মাছটা দে, ঘাটে নিয়ে যাই। নইলে বেলা পড়ে গেলে আর ওটা বিকাবে না। ফুল মিয়াও আচ্ছা বাজান লিয়া যাও বলে ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই আকাশে মেঘের আনাগোনা বেড়ে গেলো। দূর থেকে কুলসুম আপাকে দেখতে পেলো ফুল মিয়া। নৌকার মাঝখানে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। কাঁধে স্কুলের ব্যাগ। কুলসুম ক্লাস ফোরে পড়ে। স্কুলে যেতে প্রথমে বাড়ি থেকে অনেকটা পথ হেঁটে ঘাটে আসতে হয়। তারপর নৌকায় করে ওপারে গিয়ে আবার বেশ খানিকটা পথ হাঁটার পরই ওর স্কুল।
কুলসুমের মতো এই চর থেকে আরও অনেকেই ওর সঙ্গে করে স্কুলে যায়। এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে কষ্ট হলেও ওরা সবাই দলবেঁধে আনন্দ করতে করতে যায় বিধায় ওদের সবার কাছে বেশ মজাই লাগে। কুলসুম আপা ফুল মিয়াদের পাশের বাড়িতেই থাকে। পড়ালেখার পাশাপাশি মায়ের কাজেও সাহায্য করে। মাঝে মাঝে ফুল মিয়ার সঙ্গে স্কুল বন্ধের দিনে ছাগল চরাতে আসে।
তখন ফুলমিয়াকে অনেক গল্প বলে কুলসুম। কুলসুমকে দেখতে পেয়ে এক দৌড়ে নদীর পাড়ে চলে গেলো ফুল মিয়া। নৌকা ঘাটে ভিড়তেই ফুলকে দেখতে পেল কুলসুম। এক লাফে নৌকা থেকে নেমে ওর হাত ধরল। কি রে ফুল মিয়া, কি করছিস? হেসে জিজ্ঞেস করল কুসসুম। ‘কিছু না’ একটু হেসে লুঙ্গির কোচড় থেকে একটা পেয়ারা বের করলো ফুল মিয়া। হাত বাড়িয়ে পেয়ারাটা নিয়ে এক কামড় বসালো কুলসুম। ‘বাহ বেশ মিষ্টি তো! তুই না খেয়ে আমাকে কেন দিলি ফুল’? ‘খাও আফা, এটা তোমার জন্য’।
চলবে...
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৭
এএ