ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

যাদুর বাগান | নাজিয়া ফেরদৌস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৭
যাদুর বাগান | নাজিয়া ফেরদৌস যাদুর বাগান | নাজিয়া ফেরদৌস

পরীদের রাজ্যে একটি বাগান ছিল। যেন তেন বাগান নয়, যাদুর বাগান। সেই বাগানের পাখপাখালি, গাছপালা, ফুল ফল সবাই কথা বলতে পারতো। জাদু গাছের পাতাগুলো ছিল হীরার মতো চকচকে আর ডালগুলো সোনার। তারা মানুষের মতো চলাফেরাও করতে পারতো।

পরীদের বাগানে কোনো অশান্তি ছিল না। ছিল শুধু মজা আর মজা।

তবে সেই বাগানের কিছু নিয়ম ছিল। যদি কোনো গাছ অন্য গাছের সঙ্গে ঝগড়া করতো তাহলে তাদের ডাল আর সোনার থাকতো না। সাধারণ গাছের মতো হয়ে যেত। আর যদি কেউ মারামারি বাঁধাতো তাহলে তো কথাই নেই, তাদের সব পাতা হীরার চকচকে উজ্জ্বলভাব হারিয়ে বর্ণহীন হয়ে যেত। তাই সেই বাগানে কেউ ঝগড়া বা মারামারি করার কথা চিন্তাই করতে পারতো না। সবাই মিলে মিশে থাকতো।

একদিন পরীদের রানি বাগানের সবাইকে ডেকে বলল ‘আমি দুটো নতুন গাছ লাগাতে চাই। তোমরা চিন্তা করে বলো তো ফলের গাছ লাগাবো না ফুলের গাছ? গাছেরা চিন্তা করতে শুরু করলো। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেলো কোন ধরনের গাছ লাগানো হবে তাই নিয়ে। একদিকে ফলের গাছেরা বলে ‘ফলের গাছই লাগানো দরকার। ফল ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না। পরীদের খাদ্যের জন্য ফল দরকার। তাই ফলের গাছই লাগানো হোক। ’

অপরদিকে ফুলের গাছেরা বললো ‘ফুল ছাড়া কি পরী রাজ্য চলে? পরী রাজ্য সুগন্ধে ভরে রাখতে অবশ্যই ফুল গাছ দরকার। তাছাড়া ফুল ছাড়া পরীদের পোশাক তৈরি হবে কী করে? তাই ফুলের গাছ লাগানো হোক। ’ তাদের কথা শুনে পরী রানি বললেন ‘তোমাদের আমি সাতদিন সময় দিলাম। তোমরা চিন্তা কর। আমি মেঘের দেশে বেড়াতে যাচ্ছি। ফিরে এসে তোমাদের সিদ্ধান্ত শুনবো। পরী রানি চলে গেলেন। এদিকে ফুল আর ফলের গাছের মধ্যে তর্ক শুরু হলো। পরী রাজ্যে কার প্রয়োজন বেশি- এনিয়ে তারা লাগিয়ে দিলো ঝগড়া।

সে কি যেন তেন ঝগড়া! ভীষণ ঝগড়া। একসময় ঝগড়া থেকে মারামারি। কেউ কম যায় না, ফলের গাছ বলে আমরাই সেরা আর ফুলের গাছ বলে না আমরা। এভাবে শুরু হলো যুদ্ধ। গাছে গাছে যুদ্ধ। পাতায় পাতায় যুদ্ধ। পুরো জাদু বাগান কেঁপে উঠলো যুদ্ধে। পরীদের বাগানে তুমুল যুদ্ধের কথা রানি কিছুই জানলেন না। এদিকে যুদ্ধে গাছেদের পাতা ঝরে গেলো, ফুল-ফল নষ্ট হলো। পাঁচদিন পরে তারা দেখলো যাদু বাগান নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের ডালগুলো কেমন বর্ণহীন খটখটে কাঠের হয়ে গেছে আর পাতাগুলোর রং হয়ে গেছে নষ্ট।

পুরো বাগানটাই সৌন্দর্য হারিয়ে একেবারে বিশ্রি হয়ে গেছে। গাছেরা এতদিন পর তাদের ভুল বুঝতে পারলো। নিজেদের অপরাধের জন্য তারা অনেক কাঁদলো। হারানো সৌন্দর্য ফিরে পেতে চাইলো। কিন্তু কোনো লাভই হলো না। সাত দিন কাটিয়ে পরী রানি ফিরে এলেন। বাগানের অবস্থা তখন খুবই খারাপ। গাছেরা কাঁদতে কাঁদতে রানির কাছে সব খুলে বললো। রানি তখন ভাবতে বসলেন। তারপর গাছেদের বললেন ‘তোমরা কী সিদ্ধান্ত নিলে?’ গাছেরা বললো ‘আমরা ভেবে দেখেছি ঝগড়া করে কোনো ভালো কাজ হয় না। আমরা ক্ষমা চাইছি। পরীরাজ্যের জন্য ফুল ও ফল দুটো গাছই সমান দরকারি। তাই রানি আপনি একটি ফুলের গাছ ও একটি ফলের গাছ লাগান।

রানি তাদের কথায় খুব খুশি হলেন। তিনি বললেন, তোমাদের সিদ্ধান্ত খুব ভালো হয়েছে আর তোমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছো। তাই তোমাদের সবকিছু আমি আগের মতো করে দেব। পরী রানি যাদুর লাঠি ঘুরিয়ে গাছেদের ডাল আবার সোনার করে দিলেন, পাতাগুলো আবার চকচক করতে লাগলো। পরীদের জাদুর বাগানে আর দুঃখ রইলো না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৭
এএ
.

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।