ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

কী পেটুক রে বাবা!

আহমেদ রিয়াজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১১
কী পেটুক রে বাবা!

তুমি যত বড় পেটুকই হও না কেন, সারা জীবন এক হাজার কিলোগ্রামের বেশি খেতে পারবে না। আবার তোমার কোনো বন্ধু হয়ত তোমার চেয়ে কম খায়।

কেউ বেশি। এটা ভেবো না মোটা হলেই বেশি খায়। আবার খাই খাই করা কারুর অভ্যাস। প্রাণী জগতেও রয়েছে এমন খাই খাই করা প্রাণী।

টাইগার শার্কের কথাই ধরো। সাগরে এদের একটা নাম আছে-গারবেজ ক্যান অব দ্য সি। মানে সাগরের আবর্জনার পাত্র। এটা সুনাম নাকি বদনাম-ভেবে নাও। বলতে পারো সাগরের কাক। তো এই টাইগার শার্কেরা চলার পথে যা পায়, তা-ই গিলে ফেলে। কিছু শার্কের পাকস্থলিতে কী কী পাওয়া গেছে শুনবে? লাইসেন্স প্লেট, জুতো, সৈন্যদের বর্মসহ আরো অনেক কিছু। সাগরে অনেক সময় জাহাজ ডুবি হয়। সব ডুবো জাহাজের হদিস পাওয়া যায় না। কে জানে? টাইগার শার্কদের পেটে ভিতর ঢুকে আছে কি না। তবে এসব আবর্জনা খেয়ে সাগরকে একরকম পরিস্কারই করে ওরা। আর শার্কদের যে কোনো খাবারে অরুচি নেই এটা তো বোঝা গেল। তবে হ্যাঁ, শার্করা কিন্তু মানুষও খায়।

রাক্ষুসে প্রাণীদের মধ্যে টাইগার শার্কের চেয়েও বেশি খাই খাই করে শূকর। শূকরদে পাকস্থলি বেশ ছোট। এত ছোট পাকস্থলি নিয়ে ওরা এত খাবার কেমন করে খায়, সেটা বেশ অবাক করা ব্যাপার। তারপর শকুনের কথাই ধরো। তোমরা জানো শকুন মাংসাশী প্রাণী। ওদের খাবারের মেনুতে থাকে কেবল মাংস, মাংস আর মাংস। টাটকা, বাসি কিংবা পঁচা-যেমনই হোক, মাংস হলেই হলো। মাংস পেলেই ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে খাওয়ার জন্য। নাহ্! ভুল বলা হলো, খাওয়া নয়, বলতে পারো গেলার জন্য। কারণ ওরা যা করে সেটা গেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। এক বসায় যা খায় ওরা, তাতে শরীরের ওজন বাড়িয়ে ফেলে শতকার ২০ ভাগ। ভাবতে পারো। শকুনদের হজম করার ক্ষমতাও অসাধারন। ওদের পাকস্থলিতে রয়ে বিশেষ ধরনের অ্যাসিড। ওই বিশেষ অ্যাসিডের কারণেই মাংস যত পঁচাই হোক, হজম হয়ে যায়। এমনকি অ্যানথ্যাক্স রোগীর মাংসেও ওদের কোনো সমস্যা হয় না।

তাসমানিয়ার শয়তান নামে কোনো প্রাণীর নাম শুনেছ? অস্ট্রেলিয়ার বিরল প্রজাতির প্রাণী তাসমানিয়ান ডেভিল বা তাসমানিয়ার শয়তান। শয়তানগুলো খেতেও পারে জব্বর! মাত্র ৩০ মিনিটেই শরীরের ওজনের শতকরা চল্লিশ ভাগ খাবার গিলতে পারে। তবে এদের চলাফেরার গতি খাওয়ার গতির বিপরীত। হাঁসের মতো হেলেদুলে হাঁটে। তাসমানিয়ান ডেভিলরা কিন্তু অসহায় বাচ্চাদের থলিতে ভরে রাখে-একেবারে ক্যাঙ্গারুর মতো।

ভ্যাম্পায়ার বা রক্তচোষা প্রাণীদের মধ্যে বাদুড়ও আছে। এই রক্তচোষা বাদুড়দের নামই হচ্ছে ভ্যাম্পায়ার ব্যাট বা রক্তচোষা বাদুড়। আকারে কিন্তু এত্তটুকুন-বড়সড় একটা বুড়ো আঙুলের সমান। রাক্ষুসে প্রাণীদের তালিকায় এদের নামটাও আছে। রক্তচোষা এই বাদুড় এক বসায় পাঁচ টেবিলচামচ রক্ত টেনে নিতে পারে। মানুষের ভাগ্য ভালো যে এরা গরুর রক্ত পান করে। আর রক্তপানের সঙ্গে সঙ্গে হিসু শুরু করে দেয়। প্রতিদিন না খেলে মারাই যায় এই বাদুড়েরা। খাবার না পেলে বেশ হিংস্র হয়ে ওঠে। কখনো কখনো ক্ষুধার্ত বাদুড় ভরপেট খাওয়া বাদুড়ের গলা চেপে ধরে। পেটভরা বাদুড়টা তখন বমি করে। আর সেটাই ক্ষুধার্ত বাদুড় চেটেপুটে খেয়ে নেয়।

অজগর যে রাক্ষুসে প্রাণী সেটা তো নতুন করে বলে দিতে হবে না। অজগররা খাবার গেলে। কারণ কামড়ে খেলে কখনোই এতবড় খাবার খেতে পারত না। নিজের মাথার চেয়েও বড় আকারের খাবার গেলে একেকটা অজগর। তারপর লম্বা সময়ের জন্য মুখ বন্ধ করে রাখে। ভাগ্যিস এদের হজম প্রক্রিয়া হয় খুব ধীরে ধীরে। নইলে যে কী হতো! একেকটা অজগর একবারে গোটা একটা অ্যান্টিলোপ পর্যন্ত গিলে খায়। হরিণের মতো এসব অ্যান্টিলোপের ওজন প্রায় মানুষের সমান। তবে কি মানুষও গিলে খায় অজগর? তেমন কোনো খবর কিন্তু আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।

ব্যাঙ কি কখনো রাক্ষুসে হতে পারে? পারে। যদি ওরা হয় আর্জেন্টিনার চওড়া মুখো ব্যাঙ। কী বিশাল মুখ এসব ব্যাঙের। এজন্যই এমন নাম। কেউ কেউ আবার এদের শিংঅলা ব্যাঙও ডাকে। খাবার সামনে এলেই এরা হয়ে ওঠে ভয়ংকর সাহসী। কোনো খাবারেই এদের অরুচি নেই। যা ইচ্ছে তা-ই খায়-বড় ইঁদুর, টিকটিকি, পোকামাকড় থেকে শুরু করে সাপও। কখনো কখনো এদের চেয়ে বড় আকারের শিকারও করে। সুযোগ পেলেই খায়। যখন তখন পাকস্থলীতেই ঠেসে খাবার ঢোকায়। আর এ কারণে কখনোই ‘পেট পুরে’ খাওয়া হয় না এদের।

খাদক প্রাণীদের তালিকায় ক্ষুদ্র হামিংপাখিরাও আছে। কেন থাকবে না? এদের খাবার হজম এত দ্রুত হয় যে প্রতি দশ মিনিট পর পর খেতে হয়। প্রতি মিনিটে ২০০ বার পাখা ঝাপাটায়। আর প্রতি মিনিটে হƒদস্পন্দন হয় ১ হাজার ২০০ বার। সবমিলিয়ে প্রতি মিনিটে ১৪ হাজার ক্যালরি খরচ হয়। একজন মানুষ ম্যারাথন দৌড় দিলে এতখানি ক্যালরি খরচ হয়। কাজেই এত দ্রুত খাবার হজম তো হবেই। আর হজম হওয়া মাত্রই খাবারের খোঁজে ছোটাছুটি শুরু করে হামিংপাখিরা।

দুনিয়ার সবচেয়ে বড় প্রাণী কে? নিশ্চয়ই জানা আছে তোমার। নীলতিমি। ১০০ ফুট লম্বা একেকটা নীল তিমির ওজন ২০০ টন। এই দানোদের খাবার-দাবার কেমন হবে একবার ভাবো তো! সাগরের গভীর পানিতে যখন এঁকেবেঁকে সামনের দিকে চলে তখন একেক গ্রাসেই খেতে পারে দুইশ মানুষের সমান খাবার। এমনকি গভীর ঘুমে থাকার সময়ও এরা খায়-রাশি রাশি মাছ। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী হয়েও ‘ক্রিল’ নামের অতিক্ষুদ্র একধরনের মাছ খায় ওরা। প্রতিদিন ৪০ মিলিয়ন মানে চার কোটি ক্রিল ছাড়া চলেই না এদের। কারণ একবার শরীর নাড়াতেই এদের খরচ হয় ৭৭০ কিলো ক্যালরি।

আর সেরা দশ খাদক প্রাণীর তালিকায় আকারের দিকে সব চেয়ে ছোট শুঁয়াপোকা। কিন্তু খাদক হিসেবে প্রথম। এদের মতো খাদক দুনিয়ায় নেই। তাই এদের অন্য নাম ‘ইটিং মেশিন’ বা খাবার যন্ত্র। যদিও এরা নিরামিষভোজী কিন্তু সবসময় ক্ষুধার্ত থাকে। এদের খিদে মোটেই মেটে না। যতই খায়, ততই খিদে পায়। আর এতই খায় যে, মাত্র দুমাসেই শরীরখানা বাড়িয়ে ফেলে হাজারগুণ বেশি ওজনের। না খেয়েও যে উপায় নেই। বেচারা শুঁয়াপোকাদের শরীর খুব দ্রুতই বদলে যায়। খুব দ্রুতই ওরা শুঁয়াপোকা থেকে হয়ে যায় প্রজাপতি। শরীরের অতি দ্রুত পরিবর্তনের জন্যই খাদক তালিকায় সবার উপরে শুঁয়াপোকা।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।