ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বিশ্ব বদলের নায়ক স্টিভ জবস

আরিফুল ইসলাম আরমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১১
বিশ্ব বদলের নায়ক স্টিভ জবস

স্টিভ জবসকে তোমারা প্রায় সবাই চেনো। বিশ্বের প্রযুক্তি জগত বদলে দিয়েছেন এই স্টিভ জবস।

তবে দুঃখের সংবাদ হচ্ছে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৬ বছর বয়সেই গত ৬ অক্টোবর জবস পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন।

প্রযুক্তিবিদ স্টিভ জবস ছিলেন মাইক্রোসফটের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং বিল গেটসের বন্ধু। জবসের জন্ম ১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিস্কোতে। মা জোয়ান ক্যারোল এবং বাবা আব্দুল্লাহ ফাতাহ জান্দালি। কিন্তু জন্মের পরই তাকে পল ও ক্লারা জবস দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেন। এরপর তার নাম দেওয়া হয় - স্টিভেন পল জবস।

পল ও ক্লারার আদরে বেড়ে ওঠেন স্টিভ। স্কুলে পড়াশোনা শেষ করেন ১৯৭২ সালে। পরের বছর ভর্তি হন পোর্টল্যান্ডের রিড কলেজে। তবে তার কলেজ জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। লেখাপড়া শেষ না করেই মাত্র ছয় মাস পরেই কলেজ ছাড়েন তিনি।

তোমরা খুব অবাক হয়ে গেছো। তাই না? সত্যি কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেননি। অবাক করার মতই তো! সমগ্র বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া এই মানুষটি কখনই বিশ্ববিদ্যালয় পাস করেননি। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৫ সালের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘জীবনে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রথম আসলাম, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। ’

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রিড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই আমি পড়ালেখা ছেড়ে দিই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার আগে প্রায় বছর দেড়েক কিছু কোর্স নিয়ে কোনো মতে লেগেছিলাম। ’

কেন আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছিলাম?

আমার বয়স যখন ১৭ বছর, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু আমি বোকার মতো স্ট্যানফোর্ডের সমান খরচে একটি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিয়েছিলাম। আর আমার নিম্নমধ্যবিত্ত বাবা-মা’র সব জমানো টাকা আমার পড়ালেখার পেছনে চলে যাচ্ছিলো। ছয় মাস যাওয়ার পর আমি এর কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ’

এভাবেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের না পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লেও তিনি তার বন্ধুদের সাথে থাকতেন। কারণ তিনি সেই মুহূর্তে ক্যালোগ্রাফিতে আগ্রহবোধ করেন। সে সময় তিনি ওই ক্লাসটি করতেন। বন্ধুদের সাথে থাকা প্রসঙ্গে বলনে, ‘আমার কোন রুম ছিল না, বন্ধুদের রুমের ফ্লোরে আমি ঘুমাতাম। মানুষের ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে আমি পাঁচ সেন্ট করে কামাই করতাম, যেটা দিয়ে আমি খাবার কিনতাম। প্রতি রোববার রাতে আমি সাত মাইল হেঁটে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম শুধু একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্য। ’

এতো কষ্টের মধ্যেও তার মনে অনেক কিছু করার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই ১৯৭৬ সালে বাসার গ্যারেজে বসে বন্ধু ওজনেককে নিয়ে তিনি শুরু করেন অ্যাপল কোম্পানি। তবে অ্যাপল প্রতিষ্ঠার আগে স্টিভ জবস ভিডিও গেইম নির্মাতা আটারিতে কাজ করতেন। এই অ্যাপল থেকেই ১৯৮৪ সালে বাজারে ছাড়েন ম্যাক কম্পিউটার। অ্যাপল প্রতিষ্ঠার পর তাঁর তত্ত্বাবধানেই বাজারে আসে আইপড, আইফোন, আইপ্যাডসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় প্রযুক্তিপণ্য।

অ্যাপল এবং পিক্সার অ্যানিমেশন নামের দুইটি সেরা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও ছিলেন স্টিভ জবস। অ্যাপল এর আইফোন, অ্যাপল ট্যাব, ল্যাপটপ, ম্যাকের মত পণ্য তৈরি করে তিনি অবাক করে দিয়েছেন পুরো বিশ্বকে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি তৈরি করেন পৃথিবীর সবচেয়ে সফল অ্যানিমেশন স্টুডিও পিক্সার। যা থেকে ১৯৯৫ সালে বের করেন পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার অ্যানিমেশন ছবি ‘টয় স্টোরি’।

এমনকি আইপডে চলমান মিউজিক প্লেয়ার উদ্ভাবন করেছেন তিনি। তার উদ্ভাবিত আইফোন ও আইপড ট্যাবলেড বর্তমান ডিজিটাল যুগে আমাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এমন এক অসাধারণ উদ্ভাবক মাত্র ৬ সপ্তাহ আগে অ্যাপল থেকে ইস্তফা দেন। বিশ্ব পবিরর্তনের এ রূপকার এবার পৃথিবীর মায়া ছেড়েই চলে গেলেন। পৃথিবীর প্রযুক্তি জগতে স্টিভের বিকল্প নেই। তিনি অ্যাপলের সিইও ছিলেন। বিশ্বে এমন কজন সিইও আছে! যার চলে যাওয়াতে সারা পৃথিবীর মানুষ কষ্ট পাবে? এখানেই স্টিভের মহত্ত্ব। তিনি পৃথিবীকে বদলে দিয়েছেন।

স্টিভ জবস বলেছিলেন, ‘তোমার জীবনের একটা বিরাট অংশজুড়ে থাকবে তোমার কাজ। আর তাই জীবন নিয়ে সত্যিকারের সন্তুষ্ট হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে এমন কাজ করা, যে কাজ সম্পর্কে তোমার ধারণায় থাকবে- এটা একটা অসাধারণ কাজ। আর কোনো কাজ তখনই অসাধারণ মনে হবে, যখন তুমি তোমার কাজটিকে ভালোবাসবে। ’

স্টিভ জবস্ তার কাজকে ভালোবাসতেন। তাই তার কাজের সাথে অসাধারণ হয়ে উঠেছেন তিনি নিজেও।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।