মাকে একদিন প্রশ্ন করলো, মা ওদের কাপড় এতো নোংরা কেন? ওরা স্কুলে যায় না কেন? তোহার মা ছেলের প্রশ্নের কি জবাব দেবে ভেবে পাচ্ছে না। বাবা ওদের স্কুলে পড়ার মতো টাকা নেই।
আচ্ছা মামনি ওরা গরিব কেন?
তোহার মা প্রত্যুত্তরে কিছুই বলতে পারলেন না। কিছুক্ষণ পর ফের প্রশ্ন, বল না মামনি ওরা এতো গরিব কেন? মা-ছেলে কথা বলতে বলতে স্কুলের গেট অব্দি চলে এলো।
মামনি বললেন, বাবা তুমি ক্লাসে যাও এখন।
তোমার প্রশ্নের উত্তর পরে দেবো।
আচ্ছা মামনি বাই।
স্কুল ছুটি হয়েছে। তোহা অপেক্ষা করছে মায়ের জন্য, কিন্তু মা শহরের নিত্য চিত্র জ্যামে আটকে আছেন অফিস থেকে আসার সময়। স্কুলের সিকিউরিটিকে কল করে জানিয়ে দিয়েছে তোহাকে যেন বসিয়ে রাখে।
কোনো প্রয়োজনে সিকিউরিটি ভেতরে যেতেই চুপটি করে তোহা বাইরে বেরিয়ে গেলো। হাঁটতে হাঁটতে ওই বস্তির কাছে আসলো। বস্তির শিশুদের জীবন নিয়ে তোহার মনে অনেক কৌতূহল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে ওরা কি করে। হঠাৎ পেছন থেকে মায়ের ডাক তোহা ...
তোহা....এই তোহা । জ্বি মামনি এটা কি হলো বাবাই? তুমি একা বেরিয়ে আসলে যে? যদি হারিয়ে যেতে, আমার প্রাণপাখিটাকে কোথায় পেতাম বলো তো? মামনি অল্প একটু রাস্তা এটুকু তো আমি একা আসতেই পারি বলো? দেখো আমি কত বড় হয়ে গেছি। হয়েছে বাবা পাকামো রাখো এবার বাসায় চলো।
মামনি আমাকে একদিন ওদের সঙ্গে খেলতে দেবে?
না বাবাই ওরা ভালো না নোংরা, ওদের সঙ্গে খেলতে এলে তুমি নোংরা গালি শিখবে।
রাতে ঘুমাতে গেলে প্রতিদিন মায়ের মুখে পরীর গল্প শুনে শুনে ঘুমায় তোহা। ঘুমিয়ে পড়েছে তোহার মা-বাবা সবাই। মাঝরাত তখন। তোহা ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছে। ডানাওয়ালা ছোট্ট একটা পরী এসে তোহাকে ডাকছে এই তোহা...তোহা .....তোহা জবাব দিলো, আর প্রশ্ন করলো কে তুমি? পরী বললো, আমাকে চেনোনি! আমি ছোট্টপরী! যার গল্প তুমি রোজ শোনো তোমার মামনির মুখে।
আচ্ছা!!! তাহলে তুমিই সেই পরী? হ্যাঁ আমিই সেই পরী। তোহা তুমি যাবে আমাদের দেশে? তোহা বললো আমার যে ভয় করে কীভাবে যাবো? আমি নিয়ে যাবো তোমাকে। ভোর হওয়ার আগেই আবার পৌঁছে দেবো। ঠিক আছে চলো তাহলে। অমনি পরী জাদুর ছড়ি উপরে ধরে তোহার হাতে হাত রেখে চোখের পলকেই তোহাকে নিয়ে চলে গেলো পরীর দেশে।
তোহা তো অবাক! ছোট্ট পরী তোমাদের দেশ এতো সুন্দর! পরী কতকিছু খাওয়ালো তোহাকে, মিষ্টি-মন্ডা অনেক রকমের ফল। ছোট ছোট পরীদের সঙ্গে খেলাও করলো তোহা। পরীর দেশে কোনো কিছুর অভাব নেই। যখন যা চাওয়া হয় সামনে এসে হাজির হয়।
তোমাদের দেশের মত যদি আমাদের দেশটাও হতো কত ভালো হতো, কাউকে প্রাসাদে আর কাউকে বস্তিতে থাকতে হতো না।
তোহা পরীকে প্রশ্ন করলো, তোমাদের দেশে বস্তি নেই? পরী তো হেসেই শেষ। বস্তি সেটা আবার কেমন? তোহা বললো, গরিব দুঃখীরা বাস করে বস্তিতে। বললো আমাদের এখানে ধনী গরিবের ব্যবধান নেই, সবাই সমান। এ কথা শুনে তোহার মনটা বিষণ্ন হয়ে গেলো, আর বললো আমাদের মানুষের মধ্যে কেন যে ধনী গরিবের ব্যবধান। আমার ভালো লাগে না ।
পরী বললো, ইচ্ছে করলে মানুষ এ ব্যবধান দূর পারে। যারা অনেক সম্পদের মালিক তারা যদি তাদের সম্পদের একটা অংশ ওদের দান করে দেয় তাহলে একদিন এ ব্যবধান আর থাকবে না। তোহা বললো এবার বুঝতে পেরেছি তুমি কি বলতে চাইছো।
পরী বললো এবার তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে হবে তোমার ঘরে। প্রায় ভোর হয়ে এলো।
ঘুম ভাঙলো তোহার, রাতের স্বপ্নের কথা সব মনে পড়ে গেলো। নাস্তার টেবিলে বসে মামনিকে বলছে, আমরা ওই বস্তির গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু করতে পারি না মামনি? মা বিস্ময়ের চোখে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
অবশ্যই পারি বাবাই, তবে আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তোহা বললো তাহলে তোমাদের যাদের অনেক টাকা-পয়সা আছে সবাই মিলে একসঙ্গে বসে আলোচনা করে ওদের জন্য কিছু করার চেষ্টা কর। মা খুশি হলেন ছেলের কথা শুনে। আর ভাবলেন আমার ছোট্ট ছেলের মাথায় যে চিন্তাটা এসেছে আমরা বড়রা যদি এমনভাবে ভাবতে পারতাম আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর হতো।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৮
এএ