ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

পরী রাণী মুক্তিকন্যা

সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১১
পরী রাণী মুক্তিকন্যা

গভীর রাত। জানালার পাসে বসে একটা গল্প লিখছি।

পরীর গল্প।   আমি জীবনেও পরী দেখিনি। তাই বসে বসে ভাবছি, কেমন হতে পারে পরী? দুটো পাখা আছে জানি। ওড়া ওড়ি করে জানি। কিন্তু আরও তো অনেক কিছু আছে, যেগুলো আমি জানি না।

এমন সময় টের পেলাম, আমার চারপাশে পনপন, ভনভন শব্দ করে কি যেন ওড়াওড়ি করছে। মাথা ঘুরিয়ে তাকালাম। ওম্মা! দেখি, কী যেন উড়ছে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। অবাক হয়ে বললাম, তোমরা কে গো, এখানে ওড়াওড়ি করছ যে? কে তোমরা?

হাসি হাসি মুখে বলে, আমাদের চেন না বুঝি। আমরা হলাম পরী। এই বলে ওরা ওদের পাখা দিয়ে জোরে বাতাস দিল আমাকে। আহা কী মজার সুগন্ধী বাতাস, পরাণ জুড়িয়ে যায়।  

আমি বললাম, আমি তো তোমাদের নিয়েই ভাবছিলাম। তোমরা যে এতো সুন্দর আর রঙিন তাতো জানতাম না। এতো সুন্দর সুন্দর পরী দেখে সত্যি আমি অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম।  

পরীরা আমাকে বলে, তুমি কী করছ সুমাইয়া?
বললাম, আমি গল্প লিখছি।
ওরা বলে, কীসের গল্প লিখছ তুমি?
আমি পরীর গল্প লিখছি।
ওরা খুশিতে টগবগ করতে করতে আমার কাছে এগিয়ে এসে বলে, আমরা জানি তুমি যে কি করছ, পরীর গল্প লিখছ তুমি। ইশ, কী মজা। আচ্ছা, কেন লিখছ তুমি পরীর গল্প একটু বলো না শুনি।
বললাম, কেন জানি আমার খুব মন চাইল, পরীকে নিয়ে একটা গল্প লিখব। তাই লিখতে বসেছি।

ওরা কুটকুট করে হাসে। পরীরা আনন্দে আমাকে আদর করতে লাগল। আমি তো ওদের কাছে পেয়ে খুব খুশি হয়ে গেলাম। আমার অনেক ভাল লাগছে। আমিও ওদের আদর করতে লাগলাম। কী সুন্দর সুন্দর পাখা! পাখাগুলো নানা রঙে আঁকা। প্রজাপতির পাখার মতো। ওরা যখন পাখা ঝাপটায় তখন ভেসে আসে সুগন্ধ। অনেক মজার সেই গন্ধ।

পরীরা বলে, সুমাইয়া তুমি ওই উঠোনটায় চলে এসো। আমরা ওখানে সবাই মিলে আনন্দ করব। আমি বললাম, আমাকে নিয়ে আনন্দ করবে তোমরা? আচ্ছা চলো, চলো।

আমি উঠোনে গিয়ে বসলাম। চাঁদের আলো ঝরমল করছে উঠোনে। এ আলোতে পরীরা যেন আরো সুন্দর হয়ে উঠল। এদের গায়ের রং, পাখার রং বারবার বদলে যাচ্ছে। আমি হা-করে দেখছি নানা রঙের পরী।

পরীরা বলল, তুমি ঘর থেকে নিয়ে এসো শীতল পাটি। আমি শীতলপাটি নিয়ে এলাম। উঠোনে পাটি বিছিয়ে বসলাম। চারিদিকে জোছনা। গাছের পাতাগুলো হালকা বাতাসে মাথা নাড়ছে দেখে মনে হচ্ছে ওরা হাত নেড়ে আমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।

লাল, নীল, হলুদ, সাদা, বেগুনী আর টিয়া রঙের পরী। পরীরা নাচতে শুরু করল। নাচের সাথে ঝুমঝাম শব্দ। সেই শব্দের তালে তালেই নাচছে পরীরা। নাচতে নাচতে পরীরা যখন আমার কাছে চলে আসে তখন আমি হাসি হাসি মুখে পরীর পাখা ধরি, হাত ধরি, আদর করি। তখন ওরা হাসি দিয়ে আমার হাত থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়ে শুরু করে আবার টপাটপ নাচ।

পরীদের সাথে আমারও ইচ্ছে হলো নাচতে। এমন সময় ওরা এসে আমাকে ধরে টেনে নিয়ে গেল ওদের সাথে নাচতে। আর আমিও শুরু করলাম নাচ। চারদিক থেকে ভেসে আসছে ফুলের গন্ধ। মনে হলে আমিও ওদের সাথে পরী হয়ে গেছি। আনন্দ আর থামে না।

নাচানাচি শেষে ওরা আমার কাছে এসে বলল, আমরা কেন এসেছি জানো?
আমি বললাম, নাতো!
ওরা বলল, আমরা তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি পরী রাণীর কাছে।
পরী রাণীর কাছে! পরী রাণী আবার কে? কোথায় থাকে?
পরী রাণী তোমাকে দাওয়াত করেছে।
কি ভাগ্য আমার। কিন্তু আমি যে এর কিছুই বুঝতে পারছি না। এমন সময় একটা লাল পরী আমার সামনে এসে বলল, আমাদের পরী রাণী মুক্তিকন্যা। তিনি পরিমহলে তোমাকে দাওয়াত করেছেন। আমরা এসেছি তাঁর কাছে তোমাকে নিয়ে যেতে। চলো এক্ষুণি।
আমি আনন্দে লাফিয়ে ওঠে বললাম, আমার যে মা-বাবা আর ভাইয়া আছে?
পরীটা বলল, তোমার সাথে ওরাও যাবে, চলো চলো।

আমাদের সামনে এসে ইয়া বড়ো এক পরী এসে বিমানের মতো হয়ে বসল। বলল, এই হলো পরী জাহাজ। এ জাহাজে করেই তোমাদের নিয়ে যাবো পরীর দেশে।
মা-বাবা আর ভাইয়া একথা শুনে তো খুশিতে টগবগ করছে। আমরা বসে পড়লাম পরীজাহাজে। জাহাজ ছুটে চলেছে। সাথে শতশত পরী। আকাশপথে চলেছে পরী জাহাজ। পরীরা হুনহুনা হুন, গুনগুনাগুন করতে করতে শোঁ শোঁ বেগে উড়ে চলেছে। যেতে যেতে যেতে যেতে এক আজব রাজ্যে গিয়ে নামল পরীজাহাজ। বলল, এই হলো পরীরাজ্য।

অনেক সুন্দর পরীরাজ্য। আমরা আনন্দে ছটফট করতে লাগলাম। আমরা চারদিকে তাকিয়ে দেখি, সুন্দর আর সুন্দর। পরীর পাখার মতো রঙিন আর নকশা করা গোটা রাজ্য। নিচে মখমল বিছানো। নরম তুলতুলে এক অসম্ভব সুন্দর রাজ্য। আমি বললাম, আচ্ছা তোমাদের পরী রাণী মুক্তিকন্যা থাকেন কোথায়?

পরীরা বলল, ওই যে রঙিন প্রাসাদ দেখছ, ওটাই রাণীর প্রাসাদ। চলো যাই।
পরীর পেছনে হেঁটে চলেছি সবাই। অনেকগুলো দরজা। সামনে যেতেই পটাপট খুলে যায় দরজা।
 
রাণীর প্রাসাদে গিয়ে বসলাম আমরা। বসার সাথে সাথে চলে এলো নানা রকমের খাবার। মুখে দিতেই হাওয়ার মতো মিশে যায় সব খাবার। আমরা খাই আর পরীরা আনে। ফুলের খাবার। ফলের খাবার। আরো কতো কি! পেট ভরে খেলাম আমরা।

একটা পরী সিংগার মতো কি একটা মুখে নিয়ে বলছে, আলতা-মালাতান-ফিলাতুন মাক্কি কন্যে। মানে হল, আমাদের মহামান্য রাণী মুক্তিকন্যা আসছেন। সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম।

রাণী এলেন। কিন্তু আমরা এই যে পরী রাণীর দিকে তাকিয়ে আছি আর চোখ ফেরাতে পারছি না। এতো সুন্দর পরী রাণী। এভাবে কতক্ষণ থাকার পর এক পরী এসে বলল, দয়াকরে আপনারা বসুন।

বাবা বিনয় করে পরী রাণীকে বললেন, আমাদের এতো বড় সৌভাগ্য আর সম্মান কেন বুঝতে পারছি না পরী রাণী। দয়াকরে বলুন।

পরী রাণী মুক্তিকন্যা বললেন, আমরা হলাম পরী। আমরা দেখতে যেমন সুন্দর, কাজেও তেমন সুন্দর। কিন্তু আফসোস। মানুষের কাছে, লেখকের কাছে আমাদের কোনো সমাদর নেই। সবাই ছুটছে ভয়ংকর ভূতের পেছনে। লেখকেরা ভূতকে নিয়ে অসংখ্য গল্প কবিতা লিখে। আর ছেলে-মেয়েরা সেগুলো পড়ে আনন্দ পায়। আমাদের কথা কেউ বলে না। একমাত্র আপনার মেয়ে সুমাইয়া আমাদের নিয়ে চিন্তা করছে, লিখছে। পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হবে আমাদের নিয়ে লেখা তার গল্প। সেই গল্প পড়ে মানুষ আমাদের সম্পর্কে জানবে। আমাদের ভালবাসবে। এরচেয়ে আনন্দের আর কিছুই নেই। সে আমাদের বন্ধু হয়ে গেল। সেই সাথে তাঁর পরিবারের সবাই আমাদের বন্ধু। এ পরীরাজ্যের সবার পক্ষ হতে আপনাদের অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা জানাই।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।