তবুও তরুর একগুঁয়ে জেদের কারণেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও তরুর আব্বা-আম্মা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তরুকে তখন আর কে পায়! বড় ভাইজানকে ফোন করে অনুমতি নিয়ে আর মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে সে নেমে পড়লো তার স্বপ্ন পূরণের কাজে।
মাদুর বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা আর বই রেখে পড়ার জন্য কয়েকটা ছোট ছোট পিঁড়ি কিনেছিলো সে। আর বাকি টাকা দিয়ে মালা আপাকে ঢাকা থেকে মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি বই আনতে দিয়েছিলো। এক এক করে সব গুছিয়ে নিলো তরু। আর লাইব্রেরিটার নাম দিলো প্রদীপ। তার দাদার নামে, যিনি তরুকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প। এরপর পুরো গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লাইব্রেরিতে যাওয়ার কথা জানায় সে। লাইব্রেরি শুরুর দিন সকালে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো কখন সবাই আসবে তার লাইব্রেরিতে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গিয়েছিলো। তবুও কেউ আসেনি। শুধু কাজে যাওয়ার আগে আব্বা একবার এসে উঁকি দিয়ে গিয়েছিলেন, তবে ভেতরে ঢোকেননি। আম্মাও এসেছিলেন। তিনি অবশ্য ভেতরে ঢুকে একটু ঘুরে দেখেছেন। তবে চোখে-মুখে নিরাশার রেখা নিয়ে! আর সেখানে বসে বই পড়া তো অনেক দূরের কথা! যদিও তারা দু’জনের একজনও পড়তে জানেন না। তাতে কী হয়েছে? তরু তো সেই ব্যবস্থাও রেখেছে।
এক কোনায় মাদুর বিছিয়ে রেখেছে যেখানে সে মাঝে বসবে আর তাকে ঘিরে বসে থাকা সবাইকে সে গল্প শোনাবে। প্রতিদিন পাক্কা এক ঘণ্টা সে বরাদ্দ রেখেছে বই পড়ে শোনানোর জন্য। তাই যারা পড়তে পারে না তাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। তার মতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, কথা আর গল্পগুলো তবুও সবাই জানবেই জানবে! মাকে সব বললো তরু। মা বললো যে, কয়েকজন আগে আসুক তারপর না হয় গল্প শুনতে বসা যাবে। মা অন্ততপক্ষে রাজি হলেন, তাতেই বেজায় খুশি তরু।
হঠাৎ চার থেকে পাঁচটা বাচ্চা এলো। খুব আশ্চর্য চোখ নিয়ে দরজাতেই দাঁড়িয়ে ছিল অনেকক্ষণ। তরু ইশারা করে তাদের কাছে ডাকলো। সবাইকে বললো পছন্দমতো একটা বই নিয়ে আসতে। বইগুলো দেখে বাচ্চারা কিছু না বুঝলেও, আগ্রহ যে পাচ্ছিলো তা ঠিকই তরুর নজরে পড়েছে। সবাই মিলে তরুর কাছে একটি বই এনে দিলে তরু পড়ে শোনাতে লাগলো আর খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো সবাই। এরপর দিন গড়াতে থাকলো আর এক এক করে সবার পদচারণায় জ্বলে উঠলো তরুর প্রদীপ। আর ছড়িয়ে পড়লো মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস, গল্প ও কথা।
[শেষ]
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৮
এএ