ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

জামা-জুতোর সঙ্গে গরু-খাসি

মুহসীন মোসাদ্দেক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১১
জামা-জুতোর সঙ্গে গরু-খাসি

মাস দুই পেরোতে না পেরোতেই আবার ঈদ। এবারেরটা কোরবানির ঈদ।

রোজার ঈদের সঙ্গে তুলনায় এবারের ঈদ আলাদা। এই ঈদের আগে রোজা রাখার বিষয় নেই। পশু কোরবানির মাধ্যমে পালিত হয় এই ঈদটি। নতুন জামা-জুতোর সঙ্গে এই ঈদে সঙ্গী হয় এক বা একাধিক গরু-খাসি। মজাটাও তাই আলাদা এই ঈদে।

ঈদের মাস খানেক আগে থেকেই গরু-খাসি কেনার ধুম পড়ে যায়। কেউ কেউ আবার উট কিংবা দুম্বাও কোরবানি করে। এই সব পশু কিনতে যেতে হয় হাটে। বিশাল বিশাল হাট বসে এ সময়। সারি সারি গরু-খাসি বাঁধা থাকে হাটগুলোতে। শেষ কয়েকদিন হাট জমে ওঠে খুব। হাটের এ প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত নানা আকারের, নানা রঙের গরু-খাসিতে পরিপূর্ণ থাকে।

বন্ধুরা তোমরা কি কখনো গরু-খাসি কিনতে হাটে গিয়েছো? কেউ কেউ হয়তো গিয়েছো। আবার অনেকেরই হয়তো যাওয়া হয়নি। খুব ভিড় থাকে হাটে। এজন্য বড়রা ছোটদের সঙ্গে নিতে চান না।

হাটে গিয়ে গরু-খাসি কেনায় বেশ মজা। হাজার হাজার পশু থেকে সাধ্য অনুযায়ী পশু কিনে বাসায় আনার মজাই অন্যরকম। তবে ঝামেলাও আছে। খাসিতে ঝামেলা কম। রিকশায় তুলে এমনকি কোলে করেও আনা যায়। কিন্তু গরু আনার সময় ঘাম ছুটে যায়। রাস্তায় যদি একবার গরু মহাশয়ের মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তবে আর রক্ষা নেই, অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে। কখনো কখনো মহাশয় আবার ভাব ধরে খুব। হঠাৎ করে রাস্তার মধ্যেখানে দাঁড়িয়ে যায়, নড়তে চায় না আর। ভাবটা এমন যে, সে হেঁটে যেতে পারবে না, কোলে করে নিয়ে যেতে হবে! খুব বেশি রেগে গেলে শিংয়ের গুঁতো খেতে কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না! এ রকম সময় মনে হয় গরু কিনে বাসায় নিয়ে যাওয়ার চেয়ে একটা মহাকাশযানে অভিযানে যাওয়া আরো সহজ!

কোনোরকমে বাসায় আনার পরও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ নেই। দেখা যায় আরেক সমস্যা। মহামান্য গরু-খাসি যেন অনশন করে বসে। মুখের সামনে যে খাবারই দেওয়া হোক না কেন, কিছুই তাদের পছন্দ হয় না। যতোই আদর-সোহাগে অনুনয়-বিনয় করা হোক না কেন তারা মুখ ফিরিয়েই থাকে। এরপর তো রাতভর ভ্যাঁবানি আছেই। যতোই ধমকানো হোক না কেন, ধমকানিকে ভেংচি কেটে ভ্যাঁবাতেই থাকে। তবে সব গরু-খাসি এমন ঝামেলা করে না।

কিছু কিছু গরু-খাসি এতোই লক্ষ্মী যে, তুমি ডানে গেলে সেও ডানে যাবে, বাঁয়ে গেলে বাঁয়ে যাবে, থামলে থামবে, হাঁটলে হাঁটবে, যা খেতে দেবে গপাগপ খেয়ে ফেলবে। এমন একটি গরু বা খাসি থাকলে আর কিছু লাগবে না, খুব মজা করে সময় কাটানো যাবে। আসলে গরু-খাসির ও রকম ঝামেলা করার কারণ, হঠাৎ করে পরিচিত জায়গা ছেড়ে, পরিচিত মানুষ ছেড়ে, প্রতিবেশী এবং বন্ধু-বান্ধব ছেড়ে নতুন জায়গায়, নতুন মানুষদের কাছে এলে খারাপ তো লাগবেই। এ খারাপ লাগার কারণেই ওরা এমন ঝামেলা করে।

হাট থেকে গরু-খাসি আনার সময় তার শিং এবং গলায় কাগজের রঙিন মালা পড়ানো হয় অনেক সময়। অনেকটা সাজিয়ে-গুজিয়ে নতুন অতিথি বরণ করার মতো ব্যাপার। সাজ-গোজ করানো হোক আর না-ই হোক রাস্তা দিয়ে গরু-খাসি আনতে গিয়ে একটা ব্যাপার সব সময়ই ঘটে। আশেপাশের মানুষ দাম জানতে চায়, ‘ভাই কতো পড়লো?’ আর উত্তর দিতে দিতে মুখ ব্যথা হয়ে যায়। তোমরা এক কাজ করতে পারো, হাটে যাওয়ার সময় বড় একটা কাগজ আর মার্কার সঙ্গে রেখো। কেনা হয়ে গেলে বড় করে দাম লিখে গরু-খাসির গলায় ঝুলিয়ে দিলেই ঝামেলা শেষ! যার দাম জানার ইচ্ছে হবে নিজের চোখ দিয়ে দেখে নেবে।

গরু-খাসির সঙ্গে ভাব যতোই হোক, ঈদের দিন জবাই করতেই হবে। কোরবানির মূল উদ্দেশ্যই হলো ত্যাগ করা। গরু-খাসির মতো পশুর সঙ্গে বেশ কিছুদিন সময় কাটিয়ে যে মায়া পড়ে যায় সে মায়া উপেক্ষা করে আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করাই হলো ত্যাগের নিদর্শন। একেই কোরবানি বলে।

জবাই করার আগে পশুকে গোসল করাতে হয়। পশু জবাই করে মূলত মসজিদের ইমাম। একের পর এক গরু-খাসি জবাই করতে করতে তাঁর পাঞ্জাবিও রক্তে রঙিন হয়ে যায়।

মাংস কাটা শেষ হলে তিন ভাগ করতে হয়। একভাগ গরীবদের জন্য, একভাগ আত্মীয়স্বজনদের জন্য আর আরেকভাগ নিজেদের জন্য। গরীব আর আত্মীয়স্বজনদের ভাগ বিলিয়ে দিতে হয়।

বন্ধুরা, একটা তথ্য দিচ্ছি। সেটা হচ্ছে, গরু-খাসির একটি জাতীয় ভাষা আছে। ওরা তোমার-আমার ভাষা বোঝে না। এ ভাষার নাম ‘গুখারুসি’। যে সব গরু-খাসি হাট থেকে বাসায় আনতে ঝামেলা হয়, বাসায় আনার পর যাদের খাওয়াতে গিয়ে বিপদে পড়তে হয় এবং সারারাত ভ্যাঁবায় তারা লাইনে আসবে যদি তাদের সঙ্গে এই ‘গুখারুসি’ ভাষায় কথা বলা হয়! বিজ্ঞানীরা এমন তথ্যই কিন্তু দিয়েছেন! সুতরাং এই কোরবানির সময় গরু-খাসি সামলাতে ‘গুখারুসি’ ভাষা শেখা খুব জরুরি। কিন্তু আমার জানা নেই, কোথায় এই ভাষা শেখায়? তোমরা কেউ কি জানো বা জানা থাকে কিংবা জানতে পারো তবে একা একা শিখো না কিন্তু! আমাকে জানিও!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।