ডেইজি নামে তাদের সেই গরুটাকে জ্যাক আবারও ভেতরের গুহায় নিয়ে যায়, তখন ওটাকে একটুও অবাক হতে দেখা যায় না এবং একবারও হাম্বা না ডেকে, একটা ভেড়ার মতোই সে ভেতরে ঢুকে!
সরু সুড়ঙ্গ পেরিয়ে জ্যাক তাকে নিরাপদে ভেতরে নিয়ে যায় এবং একটা শালগম চিবাতে দিয়ে রেখে এসে অন্যদের কোনো সাহায্য লাগবে কিনা জানতে বাইরে আসে। বাইরের গুহা ছেড়ে বেরিয়ে আসার আগে সে খুব সতর্কভাবে ডেইজির খুরের সব চিহ্ন ঘঁষে মুছে দিয়ে আসে।
তখনই মাইক মুরগি নিয়ে হাজির হয় এবং জ্যাক তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। নিচু একটা সুড়ঙ্গ হয়ে যে পথটা ভেতরের গুহার দিকে গেছে, মাইক কোনো রকমে ঠাসাঠাসি করে ছোট্ট সেই গুহার ভেতর ঢুকে পড়ে। কারণ আগেরটা মাইক আর গাভীর জন্য আলাদা করে রাখা, এই ভয়ে যাতে অতি ব্যবহারের ফলে সহজেই কেউ বুঝতে না পারে যে এখান দিয়ে কেউ ভেতরে ঢুকেছে বা বের হয়েছে।
জ্যাক তাকে মুরগির বস্তাটা এগিয়ে দেয়, আর মাইক হাত আর হাঁটুর সাহায্যে হামাগুঁড়ি দিয়ে নিচু সুড়ঙ্গের মাঝ দিয়ে ডেইজিকে যেখানে রাখা হয়েছে ভেতরের সেই বড় গুহায় চলে আসে। মুরগিরা সরু সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে ওদের এভাবে টানা হেঁচড়া মোটেই পছন্দ করে না, তাই হতাশায় চেঁচায়। কিন্তু মাইক ঝাঁকিয়ে বস্তা থেকে ওদের বের করে খাবার জন্য শস্য দানা ছিটিয়ে দিলে আবারও ওরা পুরোপুরি সুখী হয়ে ওঠে।
জ্যাক ভেতরের গুহায় বাতি জ্বালে, আর সেটা মৃদু আলো ছড়াতে শুরু করে। মাইক ভাবে, পথ খুঁজে যদি মুরগি আবারও বাইরে বেরিয়ে যায়, তাই সে গুহার ভেতর বসে থাকাই ভালো মনে করে।
তাই সে বসে পড়ে, তার বুক ধড়ফড় করতে থাকে, সে অন্যদের অপেক্ষায় থাকে। এটা-সেটা টুকটাক হাতে নিয়ে একে একে ওরা সবাই চলে আসে। বাচ্চারা প্রত্যেকে তাদের কাজ শেষ করে, রক্তিম চেহারায় হাঁপাতে হাঁপাতে গুহার ভেতর ঢুকে একত্রে গুটিশুটি মেরে বসে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে।
ওরা এখনও দ্বীপে এসে পৌঁছেনি, জ্যাক বলে। আমি এখনই দেখে এলাম। ওদের আরো সিকিমাইল পথ পাড়ি দিতে হবে। এখন, কোনোকিছু ভুলে বাকি রয়ে গেলো কিনা?
বাচ্চারা খুব করে ভাবে। নৌকা ডুবানো হয়েছে। গরু আর মুরগি ভেতরে এনে রাখা হয়েছে। আগুন নিভিয়ে ওর উচ্ছিষ্ট খুব ভলো করে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুরগির উঠান বালি আর লতা-গুল্ম দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। উঠানের বেড়ার ডালপালা নিয়ে এসে উইলো বাড়িতে মজুদ করে রাখা হয়েছে। বীজতলা ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ঝরনার কাছ থেকে দুধের বালতিটা নিয়ে আসা হয়েছে।
আমরা সবকিছু করেছি! পেগি বলে।
এবং মাইক আতঙ্কে লাফিয়ে ওঠে। আমার হ্যাট! সে বলে। ওটা কোথায়? ওটা তো মাথায় নেই! মনে হয় কোথাও ফেলে এসেছি!
অন্যেরা হতাশায় ওর দিকে তাকায়। টুপিটা তার মাথায় বা গুহার কোথাও নেই।
সকালে ওটা পরেছিলে, পেগি বলে। মনে পড়েছে আমি দেখেছি, দেখে খুব নোংরা আর আলুথালু মনে হচ্ছিল। ওহ্, মাইক প্রিয়! ওটা তুমি কোথায় রেখে আসতে পারো? ভালো করে ভেবে দেখো, কারণ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই একটা জিনিসের জন্য আমরা ধরা পড়ে যেতে পারি, জ্যাক বলে।
গিয়ে খুঁজে দেখার মতো সময় এখনও হাতে রয়েছে, মাইক বলে। যাই গিয়ে দেখি খুঁজে পাওয়া যায় কিনা। সে সরু সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে হামাগুঁড়ি দিয়ে এগিয়ে যায় এবং ঢুকবার সেই নিচু পথটা দিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে আসে। সরু মুখটা গলে বেরিয়ে রোদের আলোতে চলে আসে। সে যেখানে আছে সেখান থেকে নৌকাটিকে দেখতে পায়, বৈঠা বেয়ে অনেক দূর থেকে এগিয়ে আসছে। সে দৌড়ে পাহাড় থেকে নেমে সৈকতে যায়। সেখানে খুঁজে দেখে। মুরগির উঠানের চারপাশটা ঘুরে দেখে। ঝরনার আশপাশে খোঁজাখুজি করে। সব জায়গায় খোঁজে! কিন্তু সেই টুপিটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না!
এবং তারপর ভাবে যদি উইলো বাড়ির কাছাকাছি কোথাও থেকে থাকে, কারণ মুরগির উঠানের বেড়ার ডালপালা রাখতে সকালবেলা সে তো ওখানেই গিয়েছিল। সে ঘন হয়ে বেড়ে ওঠা গাছের ভিড় ঠেলে উইলো বাড়িতে যায়। টুপিটা সেখানে দরজার পাশেই পড়ে ছিল! ছেলেটা সেটা পকেটে চালান করে দিয়ে পাহাড়ের পাশে ফিরে যায়। ঠিক গুহার মুখে পা রাখার সময় সে সৈকতের ওপর নৌকার ঘর্ষণের শব্দ শুনতে পায়। অনুসন্ধানকারীরা এসে গেছে।
চলবে….
বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৮
এএ