যেসব দেশে সারাবছর শীত বেশি থাকে সেসব দেশকে বলা হয় শীতপ্রধান দেশ। আমাদের দিন ২৪ ঘণ্টার অর্ধেক রাত আর অর্ধেক দিনের আলো।
উত্তরমেরুর এসব বাসিন্দাদের বলে এস্কিমো। এরাই ইগলু তৈরি করে। গরম রাখার জন্য বরফের তৈরি এই ঘরগুলোর ভেতরের তাপমাত্রা (গরম) বাইরের চেয়ে বেশি থাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বরফই ইগলু বাসিন্দাদের গরমে রাখে। কিন্তু কীভাবে! এর প্রধান কারণ, ইগলুতে বরফ তাপ যাওয়া-আসা করতে বাধা দেয়। এ অবস্থাকে তাপ অপরিবাহী বলে। যেসব জিনিসপত্রে বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করতে পারে না সেসব জিনিসপত্রকে বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থ বলে। বিশেষভাবে স্থাপিত বরফ খণ্ড তাপ ও উষ্ণতা অপরিবাহী। তাই তাপ ভেতর-বাইরে যাতায়াত খুবই কম পরিমাণে করে। ফলে বরফ খণ্ড দিয়ে তৈরি বাড়ি ইগলুর ভেতরে গরম থাকে।
এস্কিমোরা শিকার করে। বিশেষ করে মাছ। মাছ শিকারের সময় বরফের মাঝে অস্থায়ীভাবে বাসা তৈরি করে। অস্থায়ী বাসা তৈরি করতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে এস্কিমোদের। পরিবারের জন্য মাঝারি ইগলু তৈরি করে। আর এক প্রকার হচ্ছে ছোট ছোট ইগলু দিয়ে বড় একটি ইগলু। ছোট এক ইগলু থেকে অন্য ইগলুতে যাতায়াত করার জন্য সুড়ঙ্গপথের মতো রাস্তা থাকে। কয়েকটি বড়-মাঝারি ইগলু দিয়ে একটি গ্রাম তৈরি হয়। বুঝতে পারছো যে, কতরকমের সমস্যা নিয়ে এরা থাকে!
বলে রাখি, ইগলু বা বরফঘরের তিনটি অংশ থাকে। একেবারে উঁচুতে মানুষ থাকে আর নিচের অংশে পানি থাকে যা ঠাণ্ডা। আর মাঝখানে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা থাকে। কী মজার তাই না? ইগলুর ভেতরে পরিচলন পদ্ধতিতে (আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় পেছনে অন্য বাতাস এসে দখল করে) বাতাস চলাচল করে। আমরা জানি গরম বাতাস হালকা। তাই উপরের দিকে ওঠে। আর ঠাণ্ডা বাতাস নিচের দিকে নামে বা শূন্যস্থানে চলে যায়। তাই মানুষ থাকা উপরের অংশ গরম থাকে।
এ ঘরের নিচের অংশ দিয়ে মানুষ যাতায়াত করে। দরজাটি এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন এর একটি প্রান্ত বর্গাকার ও বাকি তিনটি অংশ অনেকটা গোলাকার হয়। ফলে অধিক পরিমাণ ঠাণ্ডা বাতাস ইগলুর ভেতরে যেতে পারে না। আগুন জ্বালানোর মাধ্যমে ইগলুর ভিতরে তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বাড়ানো যায়। আর ইগলুর উপরের ছাদে একটি ছিদ্র থাকে। আমাদের বাসাবাড়ির ভেন্টিলেটরের মতো। ইগলুর বাইরের তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও ইগলুর ভিতরে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মতো হয়। মানে আমাদের দেশের শীতঋতুর মাঝারি ঠাণ্ডার মতো।
রাশিয়া-চীনের পাশের সাইবেরিয়া, ইউরোপ মহাদেশের আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ড বা উত্তর আমেরিকা মহাদেশের কানাডায় গেলে ইগলু দেখতে পাবে। আমাদের মতো বিভিন্ন স্টাইলের ইগলু বা বরফের বাড়ি দেখা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৯
এএ