শরীরটা ভালো না। ফারহান আজ স্কুলে যায়নি।
এরপর বাইরের বারন্দায় গিয়ে বসে ফারহান। মা থাকলে হয়তো নির্ঘাত ময়লার জন্য বারান্দায় বসতে দিতো না। বাসার পাশের ছোট মাঠটিতে ৫-৬ জন ছেলে ক্রিকেট খেলছে। খেলার আবেদনময় কোলাহল ভেসে আসছে। ক্রিকেট খেলার খুব ইচ্ছে ফারহানের। কিন্তু মা-বাবা বাইরে যেতে দেন না। বুয়ার ওপর কড়া নির্দেশ।
খেলায় কেউ আউট হয় সবাই চিৎকার করে ওঠে। ফারহান চেঁচিয়ে ওঠে, যেন ফরহানও খেলছে। কিন্তু বারবারই ওর শুধু মনে হয়, ‘ইস খেলতে পারলে আরও কত্তো মজা হতো। খেলার জন্য প্রাণটা ওর হাঁসফাঁস করতে থাকে। ঘরের মধ্যে থাকতে থাকতে অতিষ্ট হয়ে গেছে ফারহান। কম্পিউটার গেমস খেললেও সেগুলো ওর একটুও ভালা লাগে না। বাইরের পৃথিবীর প্রতি খুব আকর্ষণ। এই চার দেয়ালে নিজেকে কেমন বন্দী মনে হয়। মা-বাবা যেন তাকে আটকে রেখেছেন।
হঠাৎ একটা আইডিয়া আসে ফারহানের মাথায়। চুপে চুপে রান্নাঘরে উকি দেয়। বুয়া আপনমনে সবজি কেটে চলছে। ধীরে ধীরে পা টিপে ফারহান চলে যায় দরজার কাছে। আস্তে আস্তে দরজা খুলে। একটুও শব্দ হয় না। দরজার আবার একটু চাপিয়ে দিয়ে এক ছুটে মাঠে।
আমি খেলবো। আমাকে নেবে তোমরা?
তুমি খেলবে?
হ্যাঁ।
এই শোভন ও আমাদের দলে। আমাদের একজন কম আছে।
আচ্ছা।
ফারহানরা ফিল্ডিং। ফারহান এক ওভার বলও করে। এই ওভারে ১০ রান হয়ে যায়। ফারহানের আনন্দ উৎসাহ একটু বেশি হওয়ায় অন্যরাও অনেক আনন্দিত। ফারহানদের ব্যাটিং। ৬ ওভারে ৪০ রান করতে হবে। ফারহানসহ চারজন ধীরে ধীরে রানের চাঁকা এগুতে থাকে। চার মারলে ফারহানের যেমন আনন্দ হচ্ছিল তেমনি আউট হলে খারাপও লাগছিল। এবার ফারহানের ব্যাটিং। শেষ চার বলে চার রান দরকার।
প্রথম বলটা একদম পেটের পাশ দিয়ে পেছনে চলে গেল। পরবর্তী বল ব্যাটে লাগলো ঠিকই কিন্তু রান হলো না। আর মাত্র দুই বল। ফারহানের ওপর অনেক চাপ। ওকে পারতেই হবে। বল আসছে। একটু এগিয়ে এসে জোরে খেলে দিল। চার!!! জিতে গেছে ওরা। দলের সবাই ফারহানকে কোলে নিয়ে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। শরীর আর একটু খারাপ নয় ওর। একদম ঠিক হয়ে গেছে। তার চেয়েও বড় কথা ফারহান অনেকদিন পর আজ খুব আনন্দ পাচ্ছে। পাচ্ছে আত্মতৃপ্তির স্বাদ।