ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ

নিয়োগ কমিটিতে প্রশাসনের প্রতিনিধি না রাখার আর্জি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
নিয়োগ কমিটিতে প্রশাসনের প্রতিনিধি না রাখার আর্জি

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধি না রাখতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এক চাকরিপ্রত্যাশী। নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসক বা তার প্রতিনিধি থাকা পার্বত্য চুক্তির পরিপন্থি বলে দাবি করেছেন তিনি।

চুক্তির ধারার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় এ বিষয়ে স্থগিতাদেশ চেয়েছেন চাকরিপ্রত্যাশী আওঅং মারমা। তার আবেদন আমলে নিয়ে বুধবার (২২ মার্চ) খাগড়াছড়ির যুগ্ম জেলা জজ মাহমুদুল ইসলামের আদালত পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ দেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য শান্তিচুক্তি এবং ১৯৯৬ সালে প্রণীত ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ, খাগড়াছড়ি’র প্রবিধান অনুযায়ী যে কোনো ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিষদ চেয়ারম্যানের এখতিয়ার সুস্পষ্ট করা আছে। সেই মতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বিদ্যমান ২৫৮টি শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পরিষদে হস্তান্তরিত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ করার লক্ষ্যে বাছাই ও নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়।

২০২২ সালের ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় ৩ হাজার ৮৪২ জন বৈধ আবেদনকারী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়োগ কার্যক্রমের শেষ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ বাছাই ও নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসক কিংবা তার প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেন, যা চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক।

এরপরও চলতি বছরের ২১ মার্চ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেন।

এ অবস্থায় সংক্ষুব্ধ হয়ে ২০২১ সালের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী আওঅং মারমা (রোল নং-১৯৫৯) খাগড়াছড়ি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দ্বারস্থ হন। তিনি চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করেন।

আওঅং মারমা বলেন, ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর এবং ২০২৩ সালের ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি’র সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসকের কোনো প্রতিনিধি থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওই সিদ্ধান্তের ১৫ (ঝ) নং কলামে উল্লেখ আছে যে, ‘তিন পার্বত্য জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পদে জেলা পরিষদের প্রবিধানের আলোকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। প্রবিধানে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির বিষয়টি  না থাকায় নতুন করে বিষয়টি সংশোধন করার প্রয়োজন নেই। ’

খাগড়াছড়ি আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মোমিন জানান, যেহেতু বিষয়টি বেআইনি এবং ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৯৮ সালে সংশোধিত পার্বত্য এলাকার তিনটি জেলা পরিষদ’র বিদ্যমান প্রবিধান ও ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত ‘শান্তিচুক্তি’র ধারার সাথে সংগতিপূর্ণ নয়, তাই এই বিষয়ে স্থগিতাদেশ চাইলে আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ দিয়েছেন। আদেশ অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসের ৮ তারিখ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

প্রায় দুই বছর ধরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম ঝুলে আছে। ঝুলে থাকা নিয়োগের ২৫৮টি শিক্ষকের শূন্য পদের পাশাপাশি এরই মধ্যে আরও ১৫০টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে। এছাড়া পুরো জেলায় প্রধান শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে ১৩৫টি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৩
এডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।