ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

২৪ ঘণ্টায় তদন্তের সেই মামলায় আইন যথাযথভাবে অনুসরণ হয়নি 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৩
২৪ ঘণ্টায় তদন্তের সেই মামলায় আইন যথাযথভাবে অনুসরণ হয়নি 

ঢাকা: মানিকগঞ্জ সদরের মো. রুবেল হত্যা মামলায় দ্রুততার সঙ্গে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তে আইনের প্রাসঙ্গিক বিধানগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করেননি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদনে এমন মত দিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা।  

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) প্রতিবেদনটি দাখিলের পর বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ কিছু প্রশ্নে রেখে তা সম্পূর্ণ করে ২৫ জুলাই দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।

পরে সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, আদালতের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। কিন্তু প্রতিবেদনের বিষয়ে আদালত কিছু প্রশ্ন রেখেছেন। আদালত বলেছেন, মামলার আগের তদন্তকারী কর্মকর্তা আসলে কোথায় ছিলেন, একই সময়ে তিনি কি কোর্টে ছিলেন, নাকি থানায়, নাকি ঘটনাস্থলে? আদালতের এ প্রশ্নের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে ২৫ জুলাই সুনির্দিষ্ট করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ‘মামলাটির তদন্তে আইনের প্রাসঙ্গিক বিধানগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করেননি এবং তদন্ত কার্যক্রম সঠিকভাবে কেস ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেননি মর্মে পিবিআই কর্তৃক অধিকতর তদন্তে... প্রতীয়মান হয়েছে। ’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘মামলাটি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে মাত্র ২৪ (চব্বিশ) ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য উপস্থাপনের সময় এবং ঘটনাস্থলে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ডের সময় একই দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। ’

‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’ শিরোনামে গত ২ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ওই মামলার নথি তলবের নির্দেশনা চেয়ে আসামি সোহেল ওরফে নুরুন্নবী ও বাদী চম্পা আক্তার ওরফে অঞ্জনা গত ৫ মার্চ ওই আবেদন করেন। সোহেল ও চম্পা সম্পর্কে ভাই–বোন। আর নিহত রুবেল সোহেলের ভগ্নিপতি।

আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৫ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাকসুদুর রহমানকে কেস ডকেটসহ ৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

সে অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টে হাজির হন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ৩ এপ্রিল আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে বরখাস্তের আদেশ এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে, পুলিশ সুপারের নিচে নয়, এমন কর্মকর্তা দিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে এ ঘটনা এবং মামলাটির পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।

পরে অবশ্য চেম্বার আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে হাইকোর্টের দেওয়া বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেছেন। তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে, পুলিশ সুপারের নিচে নয়, এমন কর্মকর্তা দিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে এ ঘটনা এবং মামলাটির পুনঃতদন্তের নির্দেশ বহাল রাখা হয়।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মরদেহ রাত দেড়টায় উদ্ধারের পর সুরতহাল করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। এরপর মামলা, আসামি গ্রেপ্তার, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মানচিত্র তৈরি, সাক্ষ্য গ্রহণসহ একে একে অন্তত ৯টি ধাপ পেরিয়ে হত্যা মামলার তদন্ত শেষ মাত্র ২২ ঘণ্টায়। পরবর্তী ২০ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়সহ তদন্তের সব প্রক্রিয়া শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অর্থাৎ মরদেহ উদ্ধার থেকে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে পুলিশের সময় লেগেছে মাত্র ৪২ ঘণ্টা। একটি খুনের মামলার তদন্তে এমন ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুই দিনের কম সময়ে খুনের মামলার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ঘটনায় অনেকে প্রশংসা করলেও প্রশ্ন তুলেছেন আইন ও তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, মামলাটির তদন্ত শেষ হয়েছে রকেটের চেয়েও দ্রুতগতিতে। এটা ব্যতিক্রমী ও আশ্চর্যজনক ঘটনা। পুলিশের এমন তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরাও।

গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর দিনগত রাতে মানিকগঞ্জ সদরের কৈতরা গ্রামের একটি হ্যাচারিতে খুন হন মো. রুবেল (২২)। পরদিন রুবেলের স্ত্রী বাদী হয়ে সোহেল নামে একজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।

পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে রুবেল খুন হন। ৪০ মিনিট পর সোহেল ওরফে নুরনবী (৩০) নামে এক যুবক থানায় গিয়ে নিজে রুবেলকে খুন করেছেন বলে দাবি করেন। পুলিশ সোহেলকে নিয়ে সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। সেখান থেকে একটি রামদা উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রাত ১টা ৫০ মিনিটের দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। তখন দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষী নেওয়া হয়।

আরও বলা হয়, ২৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নেয় পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন, তথ্য সংগ্রহ, ঘটনাস্থলের মানচিত্র তৈরি করেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে রুবেলের স্ত্রী চম্পা আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। পরে ওই মামলায় সোহেলকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টা পর্যন্ত সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। বিকেলে সোহেল জবানবন্দি দিলে ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৩
ইএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।