ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আইনের সংস্পর্শে আসা কাউকে শিশু নির্ধারণে হাইকোর্টের গাইডলাইন  

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৪
আইনের সংস্পর্শে আসা কাউকে শিশু নির্ধারণে হাইকোর্টের গাইডলাইন  

ঢাকা: আইনের সংস্পর্শে আসা বা আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত কাউকে শিশু নির্ধারণে ৫টি নিয়মাবলী (গাইডলাইন) অনুসরণ করতে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

‘মাওলানা আবদুস সাত্তার বনাম রাষ্ট্র এবং অন্য একজন’ শীর্ষক ফৌজদারি আপিল মামলায় এমন রায় দেন বিচারপতি শেখ মো.জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

১৫ ফেব্রুয়ারি দেওয়া ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

পটুয়াখালীর দশমিনায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের সূত্রে মারধর ও মো. রাকিব হোসেনকে (২৫) হত্যার অভিযোগে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মামলা করেন নিহত ব্যক্তির বাবা আবদুস সাত্তার।

এ মামলায় এক বিবাদীর বয়স নিয়ে প্রশ্ন (শিশু নাকি প্রাপ্ত বয়স্ক) ওঠায় তার ভর্তি রেজিস্ট্রার ও ছাত্রছাত্রীর হাজিরা খাতা স্কুল থেকে তলবের জন্য বাদীপক্ষ দরখাস্ত করলে তা নামঞ্জুর হয়। ওই নামঞ্জুর আদেশের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন মামলা বাদী আবদুস সাত্তার।

এই আপিল মঞ্জুর করে দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট বলেন, পটুয়াখালীর শিশু আদালতের বিচারক প্রতিপক্ষের তথা আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুর বয়স নির্ধারণে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, তা ন্যায়সংগত ও আইনানুগ নয়। শিশু আদালতের ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারির আদেশ রদ ও রহিত করা হলো। যদি আদালত মনে করেন, তাহলে প্রতিপক্ষের বয়স পুনর্নির্ধারণে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন।

হাইকোর্টে আবদুস সাত্তারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট বিবাদীরপক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান ও আইনজীবী আরিফ মঈনুদ্দীন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আবদুল আজিজ মিয়া মিন্টু ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, শিশু আইনের ২১ ধারার বিধান অনুযায়ী, কেউ অভিযুক্ত হোক বা না-হোক, কেবলমাত্র শিশু আদালতেরই কাউকে শিশু হিসেবে অভিহিত করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী কী ধরনের সনদ বা তথ্য–উপাত্তের আলোকে তাদের বয়স নির্ধারণ করা হবে, তার সুস্পষ্ট বা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা এই ধারায় উল্লেখ নেই বিধায় কিছু নির্দেশনা দেওয়া আবশ্যক বলে হাইকোর্ট মনে করেন। এ ক্ষেত্রে শিশু আদালতের বিচারক কাউকে শিশু নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে এই নিয়মাবলি (গাইডলাইন) অনুসরণ করবেন।

এক. ২০১৩ সালের শিশু আইনের ২১ ধারার বিধান অনুযায়ী, কেবলমাত্র শিশু আদালত আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর বয়স নির্ধারণ করতে পারবে এবং শিশু হিসেবে ঘোষণা করার অধিকার থাকবে।

দুই. কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তার আইনের সংস্পর্শে আসা কোনো শিশু কিংবা আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত কাউকে শিশু হিসেবে নির্ধারণ করার কোনো  এখতিয়ার নেই। তবে আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত কোনো ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা বা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্রমতে তার বয়স নির্ধারণে শিশু আদালতে হাজির করবেন। শিশু আদালত ২০১৩ সালের শিশু আইনের ২১ ধারার বিধান অনুসরণ করে বয়স নির্ধারণ করবেন ।

তিন. আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত কোনো শিশুর বয়স নির্ধারণে সর্বপ্রথম তার জন্মসনদ প্রাধান্য পাবে। যদি সে শিশুর জন্মসনদ ২০০৪ সালের জন্মমৃত্যু নিবন্ধন আইনের ৮ ধারার বিধান অনুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করা হয়ে থাকে। অথবা ১৩ ধারার বিধান অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে বিলম্ব ফি দিয়ে জন্মনিবন্ধন করে থাকে অথবা ২০০৬ সালের জন্মমৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালার ৬, ৭, ৮ ও ৯ ধারার বিধান অনুযায়ী নিবন্ধন করা থাকে।

চার.আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত কোনো শিশুর শিক্ষাগত সনদপত্রে উল্লেখিত জন্মতারিখ এবং জন্মমৃত্যু নিবন্ধন আইনের বিধানমতে নিবন্ধিত জন্মসনদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে জন্মসনদ প্রাধান্য পাবে। জন্মনিবন্ধনের তারিখ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদের জন্মতারিখ ও আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুর বাহ্যিক অবয়ব-শারীরিক গঠন আপাতদৃষ্টে সাংঘর্ষিক বলে মনে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি রেজিস্ট্রার ও ছাত্রছাত্রীর হাজিরা খাতা তলব করে মিলিয়ে দেখতে হবে। তা সম্ভব না হলে সরকারি মেডিকেল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে গঠিত বোর্ডের মাধ্যমে বয়স নির্ধারণ করতে হবে।

তবে আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত কোনো শিশু বা ব্যক্তিকে যদি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার বিধানমতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধের জন্য কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে উপস্থাপন করা হয়; কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বয়স নির্ধারণের কোনো অকাট্য বিশ্বাসযোগ্য দলিল উপস্থাপন না করা হয়, সে ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার বিধানমতে জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আগে আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুর বয়স নির্ধারণে শিশু আইনের বিধান অনুযায়ী উপরিউক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

পাঁচ. শিশু আদালত কিংবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আইনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িত কোনো শিশুর বয়স নির্ধারণে উপরিউক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৪
ইএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।