ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

অসুখি দাম্পত্য জীবন স্ত্রীকে তার স্বামী হত্যার লাইসেন্স দিতে পারে না: হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৯ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৪
অসুখি দাম্পত্য জীবন স্ত্রীকে তার স্বামী হত্যার লাইসেন্স দিতে পারে না: হাইকোর্ট

ঢাকা: অসুখি দাম্পত্য জীবন অভিযুক্ত স্ত্রীকে তার স্বামীকে এত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার অনুমতি (লাইসেন্স) দিতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন উচ্চ আদালত।

সিলেটের তাবলিগ জামাতের ধোপাদিঘির উত্তরপাড় আঞ্চলিক শাখার আমির ইব্রাহিম আবু খলিল (৫৫) হত্যা মামলায় তার স্ত্রী ফাতিহা মাশকুরার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে দেওয়া রায়ে এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।

আদালতে আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।  তিনি বলেন, মাসখানেক আগে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পেয়েছি।  এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছি।  

জানা যায়, সিলেটের ধোপাদিঘির উত্তরপাড় আঞ্চলিক শাখার আমির ইব্রাহিম খলিলের নিজ বাসার শয়নকক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ১৮ মে তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়।

লাশ উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্ত্রী ফাতিহা মাশকুরাকে আটক করে পুলিশ।  এরপর মাশকুরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।  পরে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

একই বছরের ২৪ আগস্ট ফাতিহার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০১৬ সালের ৬ জুন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা একমাত্র আসামি খলিলের স্ত্রী ফাতিহা মাশকুরাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

এরপর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামি জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিল করেন।

এরপর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ এবং আসামির আপিল খারিজ করে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, অভিযুক্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তার বিদ্বেষপূর্ণ বৈবাহিক জীবনের একটি চিত্র দিয়েছেন।  কিন্তু এই ধরনের অসুখি দাম্পত্য জীবন অভিযুক্তকে তার স্বামীকে এত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার অনুমতি দিতে পারে না।  তিনি যদি তার দাম্পত্য জীবনে সন্তুষ্ট না হতেন তবে তিনি সহজেই তার স্বামীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারতেন।  কিন্তু, সেই সুযোগ না নিয়ে, অভিযুক্ত তার স্বামীর জীবন শেষ করার জন্য সবচেয়ে নিষ্ঠুর উপায় অবলম্বন করেন।  যিনি (স্বামী) তার নিজের বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন, এই আশা ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যে, পরের দিন সকালে তিনি আবার পৃথিবীর সুন্দর বাতাস এবং পরিবেশ দেখতে পাবেন।  কিন্তু তা কখনও ঘটেনি।

হাইকোর্ট আরও বলেন, অভিযুক্ত কোনও তাৎক্ষণিক উস্কানি ছাড়াই এবং তার স্বামীর পক্ষ থেকে দেওয়া আস্থার সুযোগ নিয়ে অত্যন্ত নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার সাথে তার স্বামীকে হত্যা করেছিলেন।  আর ভিকটিম ব্যক্তি মর্মান্তিক মৃত্যুবরণ করেন।  অভিযুক্ত স্ত্রী এমনকি তার স্বামীর জীবন শেষ করার জন্য তার বিবেকের মধ্যে কোনো বেদনা অনুভব করেননি এবং যেটা ছিল নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক পদ্ধতিতে।

অপরাধের প্রকৃতি বিবেচনা করে, আমরা অভিযুক্ত স্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড হ্রাস করার জন্য কোনও উপায় খুঁজে পাই না।  বরং, এটা আমাদের নিরঙ্কুশ দৃষ্টিভঙ্গি যে, ন্যায়বিচার সর্বোত্তমভাবে কার্যকর হবে যদি দোষী সাব্যস্ত অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে, যা তার দ্বারা সংঘটিত অপরাধের নিষ্ঠুরতার সাথে সমানভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৮ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৪
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।