ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুরে বন্যা: খাল দখলমুক্ত করতে রিট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪
নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুরে বন্যা: খাল দখলমুক্ত করতে রিট

ঢাকা: নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষের সুরক্ষায় ভুলুয়া নদীসহ সকল খাল দখলমুক্ত করার ও মানবসৃষ্ট বন্যা রোধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।

জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও লক্ষ্মীপুরের স্থায়ী বাসিন্দা আবদুস সাত্তার পালোয়ান বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন করেন।

গত ২৩ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ভুলুয়া নদীর দখল ও অব্যবস্থাপনা: পানিবন্দি লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর ৩ লাখ মানুষ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন রিটে যুক্ত করা হয়।

রিটে নৌ-পরিবহন সচিব, নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সাত উপজেলার নির্বাহী অফিসারদেরকে বিবাদী করা হয়েছে।

রিটে নদী ও খাল দখল রোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বে-আইনি ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ভুলুয়া নদী ও সকল খাল দখলদারদের নিকট থেকে খরচ আদায় করে দখলমুক্ত করার জন্যে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ভুলুয়া নদীর অব্যবস্থাপনা ও দখলের কারণে প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। টানা ৩৩ দিন ধরে নদীর পানি না নামার কারণে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির স্বীকার স্থানীয় বাসিন্দারা।

ভুলুয়া নদী নোয়াখালী থেকে শুরু হয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার মাঝ দিয়ে দক্ষিণে গিয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। নদীর দুই তীরে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার অন্তত ২০টি ইউনিয়ন অবস্থিত। নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ ইউনিয়নগুলোর মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগে।  

নদীর আশপাশের বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিনই পানির পরিমাণ বাড়ছে। হাজার হাজার একর জমিতে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। পুকুরের মাছও নষ্ট হয়েছে। বাসিন্দারা এখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে থাকলেও পুরো এলাকায় শুকনো জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি ভুলুয়া নদীর জমি দখল করে বিক্রি করেছেন এবং শতাধিক বসতি নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা রহমান খোনার বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে মেঘনা নদীর কাছাকাছি রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড আজাদনগর স্টিল ব্রিজের পূর্ব দিকে ও কোডেক বাজার এলাকায়। এখানে কয়েকজন প্রভাবশালী নদীর জমি স্থানীয়দের নিকট বিক্রি করে দিয়েছে।

তারা প্রায় শতাধিক বসতি নির্মাণ করেছে। চারটি বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের ও মুরগির খামার দিয়েছে। এর পাশেই ইটভাটার জন্য রাস্তা তৈরি করেছে। ৭৬ কিলোমিটার ভুলুয়া সেখানে গিয়ে ভুলুয়া পুরোপুরি বন্ধ। এখন কোনোভাবেই মেঘনাতে পানি যেতে পারছে না। ’

নদীর পানি না নামার কারণে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার প্রায় ২০টি ইউনিয়নের অন্তত ৩ লাখ বাসিন্দা পানিবন্দি। বন্যার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে তারা। এ পানি কখন, কীভাবে নামবে সে চিন্তায় ঘুম হারাম বাসিন্দাদের। লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, স্থানীয়রা বিক্ষোভ করে তার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো পানির নিচে হওয়ায় এখন আর কাটা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘এ নদের কিছু এলাকার কাজ করতে হলে নোয়াখালীর প্রশাসনের সহযোগিতা দরকার, কারণ কিছু এলাকা নোয়াখালীর মধ্যে পড়ে। সে কারণে লক্ষ্মীপুর প্রশাসনের পক্ষে তা করা সম্ভব না। তবে আমরা চেষ্টা করছি। ’

উল্লেখ্য, পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার মধ্য দিয়ে মেঘনা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ভুলুয়া নদীর লক্ষ্মীপুর অংশের দৈর্ঘ্য ৭৬ কিলোমিটার। জলাধারটি আগে গড়ে ৩০০ মিটার চওড়া হলেও এখন কমে গড়ে ১০০ মিটার হয়ে গেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৪
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।