ঢাকা: সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানির পর আইনজীবী খুনের প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন উপস্থান করে স্বপ্রণোদিত হয়ে ইসকন নিষিদ্ধ ও তিন জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করতে আদেশে চেয়ে এক আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার (২৬ নেভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ অগ্রগতি জানতে চান।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাবে।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, আজ একজন আইনজীবী পত্রিকা নিয়ে আদালতের দৃষ্টিতে আনেন। সুয়োমোটো রুল ইস্যু করার জন্য। তার প্রার্থনার মূল প্রতিপাদ্য ছিলো, ইসকনকে যেন নিষিদ্ধ করা হয় এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরে যাতে নির্দেশ দেওয়া হয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা এবং ইমার্জেন্সি ঘোষণা করানো। আগামী অন্তত দুই সপ্তাহ। এই পরিস্থিতে আদালত আমাকে ডেকে পাঠান। আমি আদালতের সামনে যেয়ে বলি—ইসকনের ইস্যুটা দুর্ভাগ্যজনক। যে আইনজীবী এটা এনেছেন তার হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, এই রক্তক্ষরণ বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ের। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এই ঘটনা ফৌজদারি অপরাধ। সরকার গুরুত্ব সহকারে ঘটনাটিকে দেখছে, এটার যথযাথ আইনি পদক্ষেপ নেবে।
তিনি বলেন, এই সংগঠন রেজিস্ট্রার্ড কিনা, এই সংগঠন নিষিদ্ধ হবে কি না, কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এই সবগুলো সরকারের পলিসি ডিসিশন। সরকার এটার খোঁজ খবর নিয়ে যথাযথ আইনিভাবে এটা দেখবে। সব কিছু আদালতের সামনে এসে সুয়োমোটো নিষিদ্ধ করতে হবে—এই প্রক্রিয়ার সাথে আপনাদের (আদালতের) জুডিসিয়াল রিভিউ’র অ্যাকশন যাওয়া উচিত না বলে আমি মনে করি। এটা সাংবিধানিক আইনের সাথে কতটুকু যাবে, এটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। এ কারণে এটা প্রয়োজন মনে করছি না। এটা প্রিম্যাচিউর। দেখেন, সরকার কী করছে। সরকার কীভাবে হ্যান্ডেল করছে। সব পর্যালোচনা করে তারপর যদি হয় তখন প্রোপার ওয়েতে আসলে দেখা যেতে পারে। আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে, আদালত আমাদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট। আদলত বললেন—কতটুকু প্রগ্রেস আছে কাল সকালে জানাতে। আমি জানাব।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকায় অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫) নামে এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় তিনি খুন হন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আদালতের অদূরে রঙ্গম কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফ (৩৫) সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি)। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ আদালতের বিচারক কাজী শরিফুল ইসলামের আদালতে আনা হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে তার অনুসারীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এলাকার বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর করে তারা। এ সময় ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিক্ষোভকারীরা আইনজীবী সাইফুলকে চেম্বারের নিচ থেকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
তাকে হাসপাতালে নেওয়া দিদার বাংলানিউজকে বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীরা সাইফুল ইসলাম আলিফকে হাতে, মাথা ও পায়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চট্টগ্রামের আদালতে সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহত ৬-৭ জন চমেক হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে রঙ্গম কমিউনিটি সেন্টারের সামনে রাস্তায় কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমসহ সংশ্লিষ্টরা এ পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
ইএস/এমজেএফ