ঢাকা: দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ওই চুক্তির পর অনেক কর্মী মালয়েশিয়াতে যেতে পারলেও শেষ সময়ে এসে সব প্রক্রিয়া চূড়ান্তের পরও প্রায় ১৮ হাজার যেতে পারেনি।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। অপরদিকে দুইজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সরকারের সেই প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়। এরপর হাইকোর্ট প্রতিবেদনের আলোকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা ২৭ আগস্ট জানাতে বলেছেন।
গত প্রকাশিত গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, একটি অংশ উড়োজাহাজের টিকিট সংগ্রহ করতে পারেনি। আর আরেকটি অংশ মালয়েশিয়া থেকে নিয়োগকর্তার চূড়ান্ত সম্মতি পায়নি। বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রহণ করার নিশ্চয়তা পাঠায়নি নিয়োগকর্তা। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ ও বিপ্লব পোদ্দার । এর ধারাবাহিকতায় মামলাটি আদেশের জন্য এলে সরকার পক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
‘মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে ব্যর্থতার অভিযোগ সংক্রান্ত’ তদন্ত প্রতিবেদনের ভূমিকায় বলা হয়, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম আকর্ষণীয় ও সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার। মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক শ্রমবাজারে কর্মী প্রেরণ তিন বছর নয় মাস বন্ধ ছিল। মালয়েশিয়াতে বৈধভাবে অভিবাসী কর্মী প্রেরণের উদ্দেশ্যে সরকার ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ মালয়েশিয়ার সরকারের সাথে সমঝোতা স্মারক (এমইউ) সই করে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াতে অভিবাসী কর্মী প্রেরণের পথ সুগম হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের জন্য কর্মী প্রেরণের কোটা বরাদ্দ করে। ওই কোটার বিপরীতে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণ শুরু করে ২০২৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত চালু ছিল।
‘মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সর্বশেষ সময়সীমা ৩১ মে তারিখ অতিক্রান্ত হওয়ার পর বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, একটি বড় সংখ্যক কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পরও যেতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান এবং গমনেচ্ছু কর্মীদের হয়রানি বন্ধ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ২ জুন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে। ’
প্রতিবেদনে নির্ধারিত সময়ে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ না করতে পারার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো:
* মালয়েশিয়া সরকার হঠাৎ করে ২০২৪ সালের ৬ মার্চ তারিখে কর্মী প্রবেশের সময়সীমা ৩১ মে তারিখ পর্যন্ত নির্ধারণ করা সত্ত্বেও ১৭ মে পর্যন্ত ই-ভিসার আবেদন গ্রহণ করা।
* মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগের অনুমতি নেওয়ার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও (এমনকি এক বছরের বেশি) বিএমইটি থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণ না করে রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক অযৌক্তিক সময় ক্ষেপণ।
* বিএমইটি থেকে ক্লিয়ারেন্স কার্ড গ্রহণ করার পরও যথা সময়ে কর্মী প্রেরণ না করে রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক সময়ক্ষেপণ করা এবং শেষ সময়ে প্রেরণের চেষ্টা করা।
* গত ১৫ মে তারিখে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মালয়েশিয়ায় অভিবাসন বিষয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো চাটার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে সিডিউল ও পূর্ণাঙ্গ তথ্যসহ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন না করা।
* মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৪৮টি কোম্পানির অনুকূলে অনুমোদিত কর্মী নিয়োগের কার্যক্রম স্থগিতকরণ এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন সরেজমিন পরিদর্শনে পাঁচটি কোম্পানিতে কাজ নেই, বেতন নেই মর্মে ওই কোম্পানিগুলোর কর্মী প্রেরণ না করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার কারণে উল্লিখিত (৪৮+৫) কোম্পানিতে ৪৭২ জন কর্মী প্রেরণ করতে না পারা।
প্রতিবেদনের দায় দায়িত্ব অংশে ‘বিএমইটি থেকে ক্লিয়ারেন্স কার্ড সংগ্রহ করার পরও ১৭ হাজার ৭৭৭ জন কর্মী মালয়েশিয়াতে প্রেরণ করতে ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সগুলোর ওপর বর্তায়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্তের ফলাফল ও সুপারিশে বলা হয়
* কর্মী প্রেরণের ব্যর্থতা এবং দায়িত্বে অবহেলার জনা সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ।
* যেসব কর্মী বিদেশে যেতে পারেননি তাদের কাছ থেকে গৃহীত অর্থ অবিলম্বে ফেরত প্রদানের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহকে নির্দেশনা প্রদান।
* রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয়ের (৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা) অতিরিক্ত অর্থসংক্রান্ত অভিযোগগুলোর আইনি নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ।
* ভবিষ্যতে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করা হলে নির্ধারিত সময়সীমার সাথে সংগতি রেখে চাহিদাপত্র ও ভিসা ইস্যুর তারিখ নির্ধারণ করা।
* মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল ও সরাসরি মন্ত্রণালয়ে প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণ পূরক প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অভিযোগকারীর পাঠানোর ডকুমেন্টসহ মন্ত্রণালয়ের এনফোর্সমেন্ট শাখায় প্রেরণ ইত্যাদি।
আইনজীবী আহমেদ বলেন, এ প্রতিবেদনের আলোকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা ২৭ আগস্টের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:১১ এএম, এপ্রিল ২৮, ২০২৫ /