ঢাকা: জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১২ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়। প্রথম অভিযোগ, ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা, রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে উসকানি দেওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া। দ্বিতীয় অভিযোগ, বিভিন্ন কল রেকর্ডে হেলিকপ্টার, এপিসি, ড্রোনসহ মারণাস্ত্র ব্যবহারের সরাসরি নির্দেশ দেওয়া।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার বহু কল রেকর্ড আছে। যেখানে তিনি মার্ডারের নির্দেশ ও অঙ্গহানির নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছেন। এছাড়া সুনির্দিষ্ট তিনটি ঘটনাকেন্দ্রিক অভিযোগও এসেছে, যা পরবর্তীতে জানানো হবে বলে তিনি জানান।
তদন্ত প্রতিবেদনে জুলাই-আগস্টে প্রায় দেড় হাজার আন্দোলনকারীকে হত্যা এবং ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে গুলি করে আহত করার তথ্য উঠে এসেছে। শিশুদের টার্গেট করে হত্যা, আহতদের চিকিৎসায় বাধা এবং নিহতদের ময়নাতদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে। এমনকি, শেখ হাসিনা নিজে হাসপাতালে গিয়ে আহতদের চিকিৎসা না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, এমনকি শেখ হাসিনা নিজে পর্যন্ত গিয়ে হাসপাতালগুলোতে বলেছিলেন আহতদের যেন চিকিৎসা না দেওয়া হয়। আহত যারা ছিলেন তারা যখন চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তাদের পালিয়ে যেতেও বাধা দেওয়া হয়েছিল। যাতে করে তাদের অঙ্গ পচে যায় এবং কেটে ফেলে দিতে হয়। এ সমস্ত নির্দেশ শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন, যার প্রমাণ তদন্ত সংস্থার রিপোর্টে আমাদের কাছে এসেছে।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের যে বিচার, এটা কোনো সাধারণ বিচার নয়। রাজপথের চাপের ভিত্তিতে কোনো বিচার করা সম্ভব নয়। এটা একটা প্রফেশনাল জায়গা। এখানে আইনের এবং ইনভেস্টিগেশনের অনেক খুঁটিনাটি জটিল বিষয় আছে। চাপ দিলেই এখানে কিছু করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাইব এ বিচারের কোনো ধরনের অনিয়ম না হোক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন না হোক। পাশাপাশি এ বিচারে যেন কোনো ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি না হয় এবং বিচারকার্য যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কল রেকর্ড, ভিডিও ফুটেজ, উদ্ধারকৃত বুলেট, হেলিকপ্টারের ফ্লাইট শিডিউলসহ বিভিন্ন আলামত জমা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, যারা শহীদ হয়েছেন তাদের যেসব ডাক্তাররা চিকিৎসা দিয়েছেন বা অ্যাটেন্ড করেছেন তারা সাক্ষী হিসেবে আসবেন। যারা সরাসরি আহত হয়েছেন তারাও সাক্ষী হিসেবে আসবেন। পাশাপাশি শহীদ পরিবারের যারা তাদের নিজেদের স্বজনদের লাশ রিসিভ করেছেন দাফন করেছেন, তারাও সাক্ষী হিসেবে আসবেন। পাশাপাশি আলামত হিসেবে বিভিন্ন কল রেকর্ড, অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ, এবং বুলেট যেগুলো নিহত বা আহতদের শরীর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো। যে সমস্ত হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর ফ্লাইট শিডিউল, সেখানে কারা যাত্রী ছিলেন ও কী ধরনের অস্ত্র সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো তদন্ত সংস্থা দাখিল করেছে৷
এসব আলামত বিশ্লেষণ করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর।
ইএসএস/জেএইচ