ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

আইন ও আদালত

বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ ইস্যুতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৪১, জুলাই ৭, ২০২৫
বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ ইস্যুতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে এক বা একাধিক বেঞ্চ করার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় একমত হওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রতিবাদ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। ছবি: বাংলানিউজ

হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে এক বা একাধিক বেঞ্চ করার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় একমত হয়েছে- এমন সিদ্ধান্ত আসার পর প্রতিবাদ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।

সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে এ প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার (৭ জুলাই) আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছেন।

অপরদিকে এ বিষয়ে উদ্যোগ না নিতে বিবেচনার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।

গত ৩ জুলাই রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের নবম দিনের আলোচনা শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের জন্য ঐকমত্য হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকবে। তবে রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগে প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে এক বা একাধিক বেঞ্চ থাকবে। অর্থাৎ হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে থাকবে— এই বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে ওই দিনের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফররাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার ও মো. আইয়ুব মিয়া।

এর প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন আইনজীবীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, হাইকোর্টের বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক। বিচার বিভাগকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র। আইনজীবীরা এ ধরনের কোনো উদ্যোগ মেনে নেবে না।  

বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান খান, ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, ব্যারিস্টার রবিউল ইসলাম সৈকত, আব্দুল কুদ্দুস বাদল, ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী।

অরপদিকে হাইকোর্টের বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের উদ্যোগ না নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম।

প্রধান বিচারপতির কাছে লেখা আবেদনটি হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের (বিচার) কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। আবেদনে এই আইনজীবী তার পাঁচটি যুক্তি উল্লেখ করেছেন।

সেগুলো হলো, ১. সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মূল আসন রাজধানী ঢাকায় থাকবে। হাইকোর্ট ডিভিশনের সেশন অন্যত্র বসানো গেলেও সেটি অস্থায়ী। এর স্থায়ী স্থানান্তর সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থী। ২. বিভিন্ন বিভাগে আলাদা বেঞ্চ স্থাপন করা হলে একমুখী আইনপ্রয়োগে ভিন্নতা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। এটি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এককতা ও নীতিনির্ধারণের ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ৩. বিভাগীয় শহরে বিচারপতি, স্টাফ, অবকাঠামো ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য ও জটিল। এতে রাষ্ট্রের অর্থ, সময় ও দক্ষতার অপচয় হবে। ৪. স্থানীয় প্রভাব, সামাজিক চাপ ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিচারকার্যে প্রভাব ফেলতে পারে। এটি হাইকোর্টের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস করতে পারে। ৫. ঢাকায় হাইকোর্টের মামলার সংখ্যা অনেক বেশি। বিচারপতিদের বিভাগে পাঠানো হলে ঢাকায় বিচারিক জট আরও বেড়ে যাবে।

এসব যুক্তির আলোকে হাইকোর্ট ডিভিশনের বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ার জন্য এ আইনজীবী আবেদনে অনুরোধ করছেন।

ইএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।